অসম প্রেমে মজেছেন রাজনীতিবিদরা

ফারহান ইশরাক রাফি : পশ্চিমা দুনিয়ায় অসম প্রেমে মজেছেন একাধিক রাজনীতিক। তাদের বয়সের ব্যবধান এত বেশি যে তা নিয়ে মাঝে মাঝেই সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে। বেশ রসিয়ে রসিয়ে সে কাহিনী বর্ণনা করা হচ্ছে ট্যাবলয়েড পত্রিকাগুলোতে। সঙ্গে চটকদার সব ছবি।

এর সবটাই এখানে পাঠকদের সামনে তুলে ধরা সম্ভব নয়। তবু স্মরণ করিয়ে দেয়া যায় ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনির কথা। আর হাল সময়ে ফ্রান্সের নির্বাচনে বাজিমাত করা এমানুয়েল ম্যাক্রনের কথা। বৃটেনের এমপি কেভিন ফস্টার, এমপি প্রার্থী ডেহেনা ডেভিডসনের কথাই বা বাদ রাখি কেন!

সিলভিও বেরলুসকোনি তো এরই মধ্যে লোকমুখে প্লেবয় খেতাব পেয়ে গেছেন। তিনি নারীসঙ্গ ভীষণ পছন্দ করেন। স্ত্রীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ ঘটেছে সে অনেক আগে। তারপর থেকে তার চেয়ে প্রায় ৫০ বছরের ছোট এক গার্লফ্রেন্ড, যুবতী ফ্রাঁসেসকা প্যাসক্যালের সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করছেন বেরলুসকোনি। সিলভিও বেরলুসকোনির বয়স এখন ৮০ বছরের ওপরে।

তার প্রেমিকা ফ্রাঁসেসকার বয়স ৩১ বছর। অর্থাৎ তার চেয়ে প্রায় ৫০ বছরের ছোট। তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অনেকদিন ধরেই চলছে। ঘনিষ্ঠতা এতটা গভীরে গেছে যে, পশ্চিমা কোন কোন মিডিয়া বলছে তারা গোপনে বিয়েও করে নিয়েছেন। এই বিয়ে হয়েছে বেরলুসকোনির বাড়িতে। ফ্রাঁসেসকার সঙ্গে বেরলুসকোনির জানাশোনা যখন ফ্রাঁসেসকা টিনেজ তখন থেকেই। তখন বেরলুসকোনির ঘরে স্ত্রী থাকলেও তার চোখ পড়েছিল ফ্রাঁসেসকার টলটলে শরীরের ওপর।

ওই সময় ফ্রাঁসেসকা যোগ দিয়েছিলেন বেরলুসকোনির ফোরজা ইতালিয়ার এক পার্টিতে। সেই যে তার ওপর দৃষ্টিবর্শা নিক্ষেপ করেছেন বেরলুসকোনি তা থেকে মুক্তি পাননি ফ্রাঁসেসকা। তাদের এক বন্ধু ইতালিয়ান রেডিওতে বলেছেন, মিলানে অবস্থিত বেরলুসকোনির ব্যক্তিগত এক বাড়িতে তারা বিয়ের কাজটিও সেরে ফেলেছেন। বাইরের দুনিয়ার কাউকে সে বিষয়টি আঁচ করতে দেয়া হয়নি।

উল্লেখ্য, ইতালির মতো দেশে টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ধনকুবের বলে পরিচিত সিলভিও বেরলুসকোনি। তার রয়েছে টেলিভিশনসহ অনেক মিডিয়া। ফ্রাঁসেসকা ছিলেন টিভির শো-গার্ল। একপর্যায়ে একটি টিভি স্টেশন থেকে বুলগেরিয়ার অভিনেত্রী মিশেল বোনেভ দাবি করেন ফ্রাঁসেসকা একজন সমকামী। একথার পর তখন মিস ফ্রাঁসেসকা এক কোটি ইউরো ক্ষতিপূরণ চেয়ে বসেন।

তার দাবি ওই মন্তব্য মানহানিকর। ওদিকে সিলভিও বেরলুসকোনি তার ব্যক্তিগত বাড়িতে মাঝে মাঝেই নগ্ন নারীদের অনুষ্ঠান আয়োজন করে আলোচনায় আসতে থাকেন। তিনি ‘বুঙ্গা বুঙ্গা’ নামে পার্টি দেন। সেখানে অর্থের বিনিময়ে মরক্কোর এক যুবতীর সঙ্গে অপ্রাপ্ত বয়সে শারীরিক সম্পর্ক গড়েছিলেন বেরলুসকোনি এমন অভিযোগও আছে। এরই মাঝে ‘বুঙ্গা বুঙ্গা’ পার্টির এক যুবতী মেরিথেল পোলানকো বলেছেন, গোপন এক অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

মিস বোনেভ ওই অভিযোগ করার কয়েকদিন আগে পোলানকো বলেন, গোপন এক অনুষ্ঠানে বিয়ে করে নিয়েছেন বেরলুসকোনি ও ফ্রাঁসেসকা। তিনি বলেন, এটা একটি সাধারণ বিয়ে ছিল না। এটা ছিল সিলভিওর বাড়িতে বিয়ে। এ বিষয়টি কেউ জানতে পারেনি। তিনি ইতালিয়ান রেডিও স্টেশন ২ কে বলেছেন, তারা আমাকে আমন্ত্রণ জানায়। আমি যেতে পারিনি।

কারণ, সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে আমাকে থাকতে হয়েছিল লেবার রুমে। যাহোক তা সত্ত্বেও তাদেরকে আমি অভিনন্দন জানিয়েছি। তারা বিয়ে সেরে ফেলেছেন। ওদিকে স্ত্রী ভেরোনিকা ল্যারিওর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি করে নেন বেরলুসকোনি। ১২ লাখ পাউন্ডে দফারফা হয়। কিন্তু তার মধ্যে যে নারীক্ষুধা তা মেটেনি। বেরলুসকোনি ও ফ্রাঁসেসকার মধ্যে বিয়ের যে কথা বলা হচ্ছে তা নিরেটভাবে যাচাই করা যায়নি।

তবে এবার ফ্রান্সে নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রনকে টিপ্পনি কাটতে ছাড়েননি তিনি। ফ্রান্সের নতুন ফার্স্টলেডি ব্রিজিত ট্রোগনিউসকে নিয়ে বিদ্রূপ করেছেন তিনি। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রন ও ফার্স্টলেডি ব্রিজিততে নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, এমানুয়েল ম্যাক্রন হলেন একজন চমৎকার পুরুষ। তার সঙ্গে রয়েছে সুদর্শনা এক ‘মাম’ বা মা।

ঝড় তোলা ম্যাক্রোন-ব্রিজিত প্রেম : এবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অকস্মাৎ ঝড় তোলা এমানুয়েল ম্যাক্রোন বিয়ে করেছেন তার চেয়ে ২৫ বছরের বড়, তারই স্কুল শিক্ষিকা ব্রিজিত ট্রেগনেউক্স’কে। ম্যাক্রোনের বয়স এখন ৩৯ বছর। ব্রিজিতের বয়স ৬৪ বছর।

অর্থাৎ নিজের চেয়ে প্রায় ২৫ বছরের ছোট ম্যাক্রোনের স্ত্রী, ফার্স্টলেডি ব্রিজিত। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই ব্রিজিতের প্রেমে পড়েছিলেন ম্যাক্রোন। টিনেজ ম্যাক্রোনকে তখন স্কুলে পড়াতেন ব্রিজিত। সেখানে এমানুয়েলে ম্যাক্রোনের নাটকের কোচও ছিলেন ব্রিজিত। তখন থেকেই তিনি ব্রিজিতকে তার স্ত্রী হিসেবে পাওয়ার বাসনা পোষণ করেছিলেন। তার মনে জেগে উঠেছিল বাঁধভাঙ্গা এক প্রেমের অতল সমুদ্র।

ফ্রান্সে এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রথম দফায় সবাইকে ছাড়িয়ে শীর্ষে থাকা ম্যাক্রোন সম্পর্কে সেই ব্রিজিত বলেছেন, ম্যাক্রোনের বয়স যখন ১৭ বছর তখনই সে আমাকে কথা দিয়েছিল- আমাকে বিয়ে করবেই। ব্রিজিত বর্তমানে সাত নাতীপুতির নানী-দাদী। এই বয়সে এসে তার ললাটে লেখা হয়েছে ফ্রান্সের ফার্স্টলেডি। এমন ঘটনা বিরল।

আধুনিক ইতিহাসে ফ্রান্সের সবচেয়ে তরুণ বা কম বয়সী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ম্যাক্রোন। এই স্বামীর সঙ্গে কিভাবে ভালবাসা গড়ে ওঠে সে বিষয়ে বর্ণনা দিয়েছেন ব্রিজিত। তিনি বলেছেন, ম্যাক্রোনের বয়স যখন ১৫ বছর তখনই আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ হয়। পরে সে আমার কাছে বিস্ময়কর এক প্রতিশ্রুতি দেয়। ১৭ বছর বয়সে ম্যাক্রোন আমাকে বলে যে, তুমি যা-ই করো আমি তোমাকে বিয়ে করবোই।

উত্তর ফ্রান্সের অ্যামিয়েনসে বেসরকারি জেসুট স্কুলে গড়ে ওঠে আমাদের এ সম্পর্ক। আমি থিয়েটারের কোচ ছিলাম। সেখানে অভিনয় করতো ম্যাক্রোন। তখন আমি পরিচিত ছিলাম ব্রিজিত আউজিয়েরে নামে। আমার ছিল তিন সন্তান। ওই সময় আমি নাটকের ক্লাবটি তদারকি করতাম। স্কুলের শেষ বছরে ম্যাক্রোন চলে যায় প্যারিসে। ওই সময় আমাদের একে অন্যের সঙ্গে সব সময়ই কথা হতো। ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যেতো।

টেলিভিশনের এক ডকুমেন্টারিতে ব্রিজিত বলেছেন, ১৮ বছর বয়সে একটু একটু করে আমার ভিতরকার সব বাধা সে কাটিয়ে ওঠে এক অবিশ্বাস্য পথে, ভীষণ ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিয়ে। আসলে মননে সে একজন টিনেজ ছিল না। অন্য সব পূর্ণবয়স্কদের সঙ্গে তার সম-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তার সঙ্গে যোগ দিতে আমিও ছুটে যাই ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটাই। তারপর যা হবার তা-ই হলো।

২০০৭ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলাম। কিন্তু আমি আমার নতুন এ স্বামীর নাম আমার সঙ্গে যোগ করলাম না। আমি রয়ে গেলাম ব্রিজিত ট্রেগনেউক্স। স্ত্রী ব্রিজিত সম্পর্কে এমানুয়েল ম্যাক্রোন ফ্রেন্স টিভি চ্যানেলকে বলেছেন, আমার স্ত্রীকে আমি লুকিয়ে রাখিনি। সে আমার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। সব সময়ই থাকবে। এপ্রিলে সমর্থকদের সামনে তাদের ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতে এক মঞ্চে এই যুগল একে অন্যকে চুমু দেন।তারপর ম্যাক্রোন বলেন, এই নারীর কাছে আমি ভীষণভাবে ঋণী। কারণ, আজকের এই আমাকে গড়ে তোলার জন্য তার অবদান অনেক বেশি।

উল্লেখ্য, ম্যাক্রোন দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন প্যারিস নানটেরে ইউনিভার্সিটিতে। যোগ দিয়েছিলেন ফ্রান্সের অভিজাতদের জন্য নির্ধারিত ইকোলে ন্যাশনালে ডি’অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করতে। কয়েক বছর সরকারি চাকরি করার পর তিনি রোটচাইল্ড-এ একজন বিনিয়োগকারী ব্যাংকারে পরিণত হন। এরপর তিনি দ্রুত ক্যারিয়ারের শিখরে উঠে যেতে থাকেন। আয় করতে থাকেন মিলিয়ন মিলিয়ন ইউরো।

এরপর তিনি ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দু’বছর পরে দায়িত্ব পান অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে। তার বিরুদ্ধে বিবাহবহির্ভূত সমকামী সম্পর্কের অভিযোগ ওঠে গত ফেব্রুয়ারিতে। তিনি অস্বীকার করেছেন এ অভিযোগ।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অভিযোগ করে যে, তিনি সমকামীদের একটি লবি’কে সমর্থন করেন। গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় যে, রেডিও ফ্রান্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথিউ গ্যালেটের সঙ্গে তার সমকামী সম্পর্ক রয়েছে। এ অভিযোগ শুনে ম্যাক্রোন হেসেছিলেন। তিনি ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন।

ফ্রান্সের নতুন ফার্স্টলেডি : যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প নিউ ইয়র্কে ট্রাম্প টাওয়ারে। ছেলে ব্যারনের পড়াশোনার জন্য স্বামী, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে ছেড়ে এখানে থাকতে হচ্ছে তাকে। সরকারে বা সমাজ সংস্কারে তার ভূমিকার জন্য অনেক সমালোচনা আছে। তবে দৃশ্যত তার মতো হবেন না ফ্রান্সে সদ্য ফার্স্টলেডির খেতাব যুক্ত হতে যাওয়া ব্রিজিত ট্রোগনিউক্স (৬৪)।

স্বামী এমানুয়েল ম্যাক্রোনের মধ্যপন্থি সরকারে তিনি বড় একটি ভূমিকা রাখবেন। তিনি সরকারের ভিতরে মুক্তভাবে কাজ করবেন। শিক্ষা সংস্কারে রাখবেন সক্রিয় ভূমিকা। এসব কথা বলা হয়েছে লন্ডনের অনলাইন ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে। উল্লেখ্য, এমানুয়েল ম্যাক্রোনের চেয়ে ২৫ বছরের বড় ব্রিজিত। তিনি সাবেক স্কুল শিক্ষিকা। ম্যাক্রোনের বয়স যখন ১৫ বছর তখন ব্রিজিতেরই ছাত্র ছিলেন তিনি। আস্তে আস্তে ব্রিজিতের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন ম্যাক্রোন।

তার বয়স যখন ১৭ বছর তখন ব্রিজিতকে সরাসরি বলে ফেলেন, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। ব্রিজিত তখন ৩ সন্তানের মা। আস্তে আস্তে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ব্রিজিতের সঙ্গে তার পূর্বের স্বামীর বিচ্ছেদ ঘটে। তিনি বিয়ে করেন এমানুয়েল ম্যাক্রোনকে। সেই ভালোবাসার উপহার হিসেবে ব্রিজিতকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বাসভবন এলিসি প্রাসাদে উঠাতে যাচ্ছেন ম্যাক্রোন।

ব্রিজিত এখন ৮ নাতিপুতির নানী-দাদী। তাকে নিয়ে আগ্রহ চারদিকে। বলা হচ্ছে, তিনি অন্যদের মতো নন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামার মতো জোরালো ভূমিকা রাখবেন তিনি। বিশেষ করে শিক্ষার সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকায় তিনি এ খাতে নজর দিতে পারেন।

বয়সের ব্যবধান ২৮ : ফ্রান্সের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোন ও তার স্ত্রী ব্রিজিতের বয়সের ফারাক শুনে অনেকেই আঁতকে উঠেছিলেন। ব্রিজিতের চেয়ে ম্যাক্রোন ২৫ বছরের ছোট। সেই একই রকম ঘটনার জন্ম হতে যাচ্ছে এবার বৃটেনে। সেখানে কনজারভেটিভ দল থেকে নির্বাচিত এমপি কেভিন ফস্টার। তার বয়স ৩৮ বছর। কিন্তু তিনি আগামী মাসেই ১০ই জুন বিয়ে করতে যাচ্ছেন তার থেকে ২৮ বছরের বড় হ্যাজেল নুনান (৬৬) কে।

প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে ঘোষিত জাতীয় নির্বাচনের দু’দিন পরেই এ বিয়ে করতে যাচ্ছেন তারা। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে নিয়ে বৃটিশ মিডিয়ায় তোলপাড় চলছে। তাদের এমন অসম বিয়ে নিয়ে ফরাসি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোন ও ব্রিজিতের প্রেম, বিয়ের সঙ্গে তুলনা করছেন অনেকে। কেভিন ও নুনান বলেছেন, তাদের প্রেমের ক্ষেত্রে বয়স কোন ব্যবধান নয়।

আসল কথা হলো তারা দু’জনে একে অন্যকে ভালোবাসেন। কভেন্ট্রিতে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ২০০০ সালে প্রথম তাদের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়। ওই সময় কাউন্সিল নির্বাচনে লড়াই করছিলেন হ্যাজেল নুনান। সেই সাক্ষাতের পর তাদের মধ্যে আস্তে আস্তে বেড়ে উঠতে থাকে প্রেম। সেই প্রেমই পরিণতি পেতে যাচ্ছে আগামী মাসে। বিয়ে নিয়ে যুবতী মেয়েরা যেমন প্রস্তুতি নিতে থাকেন, তাদের মনের মধ্যে ভাসতে থাকে না পরিকল্পনা, একই রকম হ্যাজেল নুনানের মধ্যেও পরিলক্ষিত হচ্ছে।

এরই মধ্যে তার হাতে পরিয়ে দেয়া হয়েছে এনগেজমেন্টের আংটি। আহামরি কিছু নয় তা। সাধারণ স্বর্ণ আর তার ওপর বসানো ছোট্ট ছোট্ট হীরা। এর অর্থমূল্য খুব বেশি নয়। হ্যাজেল নুনান বলেছেন, এ উপহারের সঙ্গে মিশে আছে আবেগ। তার মূল্য অসীম। তাদের মধ্যকার এ প্রেমের কাহিনী জানেন কেভিন ফস্টারের মা লিন্ডা। তাই তিনিই তিন বছর আগে হ্যাজেল নুনানকে পরিয়ে দিয়েছেন ওই এনগেজমেন্টের আংটি।

এর মধ্য দিয়ে নুনানের সঙ্গে ফস্টারের সম্পর্ককে পাকা করে রেখেছেন লিন্ডা। এ ঘটনায় অনেক আলোচনা। কিন্তু বিষয়টি প্রাপ্ত বয়স্ক এ দু’জনের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন লিন্ডা। তাই কেভিন ফস্টার বলেন, হ্যাজেল নুনান অনেক বেশি বয়সী এ বিষয়টি আমি বাস্তব অর্থেই কখনো ভাবিনি। প্রথমে আমাদের যখন সাক্ষাৎ হলো তারপর থেকে আমরা বন্ধু হয়ে গেলাম। রাজনৈতিক সহকর্মীও। আমরা একই জিনিস পছন্দ করি।

তারপর থেকে আমরা একসঙ্গেই চলছি। আমরা একে অন্যের খুব কাছে রয়েছি। হ্যাজেল নুনান একই সঙ্গে আমার প্রেমিকা ও বেস্ট ফ্রেন্ড। একই রকম কথা বলেন হ্যাজেল নুনান। তার কথায়, আমরা একে অন্যের প্রেমে পড়েছি। একজন অন্যজনের সাহচর্য উপভোগ করি। ২০০০ সালের সাক্ষাতের পর তাদের মধ্যে যে প্রেম গড়ে উঠেছে সে বিষয়টি বাইরের মানুষের চোখে পড়েছে। ওই সময় হ্যাজেল নুনান বিবাহিত ছিলেন।

তার বয়স তখন ৪৮ বছর। তার ছিল দুটি সন্তান। তারা বড় হয়ে গেছে তখন। ২০১০ সালে দু’জনে নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। হ্যাজেল নুনান নির্বাচন করেন কভেন্ট্রি নর্থ-ইস্ট থেকে। কেভিন কভেন্ট্রি সাউথ থেকে, যদিও কেউই ওই নির্বাচনে বিজয়ী হননি। এর সাত বছর আগেই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে হ্যাজেল নুনানের। তার সাবেক স্বামী মারা যান। এ সময়ই তাদের ঘনিষ্ঠতা তীব্র থেকে তীব্র হতে থাকে। কেভিন ফস্টার বলেন, হ্যাজেল ও আমি একত্রে বহু সময় কাটাতে থাকি।

২০১০ সালের শেষের দিকে এসে তাদেরকে লোকজন ‘কাপল’ বা দম্পতি হিসেবে আখ্যায়িত করা শুরু করে। কেভিন বলেন, অনেক দিন পর্যন্ত মানুষজনকে, পরিবারের ঘনিষ্ঠদের আমি বলিনি যে আমরা একত্রে আছি। কারণ, সমাজের প্রতিক্রিয়া কি হবে তা নিয়ে আমাদের মাঝে ছিল উদ্বেগ। হ্যাজেল নুনান বলেন, আমার মনে আছে ২০১১ সালের কথা। তখন কভেন্ট্রির বিশপের কাছ থেকে একটি আমন্ত্রণ পাই। তাতে লেখা ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস কেভিন ফস্টার’।

ঠিক উল্টো যাত্রা : আগামী ৮ই জুন বৃটেনে পার্লামেন্ট নির্বাচন। এ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত যেসব প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা শোনা যাচ্ছে তার মধ্যে অসম প্রেম রয়েছে কমপক্ষে দু’প্রার্থীর। এর একজন হলেন এমপি কেভিন ফস্টার (৩৮)। অন্যজন হলেন ডেহেনা ডেভিসন (২৩)। প্রথমজন তার থেকে ২৮ বছরের বড় ৬৬ বছর বয়সী নারী হ্যাজেল নুনানের সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করছেন। পার্লামেন্ট নির্বাচনের দু’দিন পরেই ১০ই জুন তাদের বিয়ে হওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে।

অন্যদিকে ডেহেনা ডেভিসন হলেন ২৩ বছর বয়সী একজন ছাত্রী। তিনি একটি কম্পিউটার গেমের দোকানে কাজ করেন। তবে তার ভালোবাসায় রয়েছেন তার থেকে ৩৪ বছরের বড় স্থানীয় কাউন্সিলর জন ফারেহাম (৫৭)। কেভিন ফস্টার ও ডেহেনা ডেভিসন দু’জনেই ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির। ডেহেনা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বৃটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের আসনে। এ আসনটি হলো ডারহামের সেজফিল্প। ১৯৩৫ সাল থেকে আসনটি বিরোধী লেবার দলের দখলে।

এ আসনে ২৪ বছর ধরে এমপি ছিলেন টনি ব্লেয়ার। এখানে কনজার্ভেটিভদের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবু ডেভিসন বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা জানি সেজফিল্ড হলো লেবারদের ঘাঁটি। আমরা এটাও জানি সেই লিগেসির দিন এখন শেষ হয়ে গেছে। ওই আসনে বহু মানুষ আছেন যারা আমাদের পক্ষ অবলম্বন করবেন। এটা করবেন লেবার দল নেতা জেরেমি করবিনের কারণে।

লোকজন এরই মধ্যে তার কারণে প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র পক্ষাবলম্বন করা শুরু করেছে। উল্লেখ্য, ডেভিসনের জন্ম শেফিল্ডে। তার মা একজন নার্স ও পিতা একজন ব্যবসায়ী। তিনি বৃত্তি নিয়ে একটি বেসরকারি স্কুলে পড়ার সময় মাত্র ১৫ বছর বয়সে কনজার্ভেটিভ দলে যোগ দেন। এর ঠিক দু’বছর আগে ১৩ বছর বয়সে সবচেয়ে বড় আঘাত আসে তার জীবনে। ওই সময় তার পিতাকে হত্যা করা হয়। সেই আঘাত তাকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

তারপরও তিনি বৃটিশ রাজনীতি ও আইনী বিষয়ে পড়াশোনা করতে ছুটে যান হাল-এ। সেখানেই এখন শেষ বর্ষে পড়াশোনা করছেন। আর এর ফাঁকে স্থানীয় একটি কম্পিউটার গেমসের দোকানে চাকরি করছেন। পড়াশোনার ডিগ্রি অর্জনের অংশ হিসেবে কনজার্ভেটিভ জ্যাকব রিস-মগ এর অধীনে সহকারীর কাজ করেছেন এক বছর। ২০১৫ সালে তিনি হাল নর্থ থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেই নির্বাচনে লেবার দল ও ইউকিপের পরেই অর্থাৎ তৃতীয় স্থান অর্জন করেন।

এতে ওই এলাকায় কনজার্ভেটিভ দলের ভোট বৃদ্ধি পায়। এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণার সময় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় প্রফুল্ল মনের অধিকারী কনজার্ভেটিভ দলের কাউন্সিলর জন ফারেহাম (৫৭) এর সঙ্গে। তার সঙ্গে আস্তে আস্তে প্রেম জমে ওঠে ডেভিসনের। এ নিয়ে অনেক সমালোচনা। তার চেয়ে ৩৪ বছরের বড় ফারেহাম। একে বিরাট এক অসম প্রেম বলে আখ্যায়িত করেন অনেকে।

কিন্তু বয়সের এই বিশাল ফারাক সম্পর্কে ডেভিসন বলেছেন, বয়স গণনা হলো সংখ্যা। এর মধ্যে ফারাক খোঁজার কোনো অর্থ হয় না। এর আগে তাদের প্রেম নিয়ে বেশ খোলামেলা আলোচনা করেছেন তিনি। বলেছেন, আমি সব সময়ই পরিপক্ব। আমার পরিবার জানে আমি কোন সিদ্ধান্ত আলতোভাবে নিই না। তাই তারা সব ক্ষেত্রেই আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। আমি সুখী হলে তারাও সুখী হয়। তারা মনে করেন জন ফারেহাম আমাকে সুখী রাখছেন।

ক্ষমতাসীন কনজার্ভেটিভ পার্টির উচ্চ পর্যায়ে ডেভিসন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের সঙ্গে তার একটি ছবি টুইটারে পোস্ট করে। তার স্লোগান হলো- স্ট্যার্ন্ডি উইথ তেরেসা মে ইন সেজফিল্ড। অর্থাৎ তেরেসা মের হয়ে সেজফিল্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। ডেভিসন বলেছেন, তিনি আশা করেন প্রধানমন্ত্রী শিগগিরই ওই নির্বাচনী আসন সফরে যাবেন। তবে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল- এটা তো সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের আসন। এখানে নির্বাচনের শক্তি পেলেন কি করে।

জবাবে ডেভিসন বলেন, আমরা প্রেসের প্রচণ্ড মনোযোগ পাচ্ছি। বিশেষ করে সেজফিল্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য। আমি মনে করি এটা প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। তারপরও এটা যে কারো কাছে একটি মার্জিনাল আসন। উল্লেখ্য, এ আসনে তার বিপরীতে লড়াই করবেন লেবার দলের ফিল উইলসন। তিনি দলীয় প্রধান জেরেমি করবিনের কঠোর সমালোচক। -এমজমিন