‘আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি’ই প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে ফতুল্লার

সূচি অনুযায়ী আগামী ১৮ আগস্ট বাংলাদেশে আসার কথা অস্ট্রেলিয়া দলের। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে নেমে পড়ার আগে ফতুল্লায় একটি দুইদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে সফরকারীরা। কিন্তু এক মাস ধরে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ভেন্যুটির যে দশা, সেখানে ম্যাচ আয়োজন এখন দিবাস্বপ্নের মত হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সন্দিহান খোদ বিসিবিও। সেজন্য এখনই বিকল্প ভাবতে শুরু করেছে বোর্ড। সঙ্গে অন্য একটি শঙ্কাও ডানা মেলছে। ফতুল্লা নিয়ে অজিরা নেতিবাচক রিপোর্ট দিলে মাঠটির ‘আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি’ই প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।

বিকল্প ভেন্যু হিসেবে বিসিবির ভাবনায় প্রথমেই আসছে বিকেএসপির নাম। কিন্তু মিডিয়া কাভারেজ, দর্শক ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার কথা চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত প্রথম টেস্টের ভেন্যু মিরপুরেই প্রস্তুতি ম্যাচটি আয়োজন করতে পারে বোর্ড। এমন আভাস দিয়েছেন বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান হানিফ ভূঁইয়া।

শনিবার মিরপুরের বিসিবি কার্যালয়ে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বললেন, ‘ফতুল্লার এখন যে পরিস্থিতি, তাতে ম্যাচ আয়োজন খুব কঠিন হয়ে যাবে। ১৮ তারিখ পর্যন্ত এখনও অনেক সময় আছে। তবে এটা খুব চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। বিকল্প হিসেবে বিকেএসপি আসতে পারে। বোর্ড যদি মনে করে এখানে (শের-ই-বাংলা) প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে দেবে, এখানে অনেক পিচ আছে। মাঠ নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে ফতুল্লা নিয়ে। বিকেএসপিতে হয়তো সব ধরনের ফ্যাসিলিটিজ দিতে পারবো না।’

সাভারে অবস্থিত বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) সংরক্ষিত এলাকা। সেখানে দর্শক প্রবেশ অবাধ হবে না। ড্রেসিংরুম, মিডিয়া বক্স বিশ্বমানের নয়। সেখানে প্রস্তুতি ম্যাচ আয়োজন করলে দেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো হবে না বলেই মনে করছেন হানিফে ভূঁইয়া।

‘বিকেএসপিতে আমাদের ভালো মাঠ আছে। কিন্তু মিডিয়া সাপোর্ট, দর্শকের চাহিদা সেটাও দেখতে হবে। প্রস্তুতি ম্যাচ দেশের মানুষ দেখতে চাইবে। বয়সভিত্তিক দলের খেলোয়াড়, এইচপির খেলোয়াড়দের জন্য এই ম্যাচ বড় সুযোগ। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার মানের দলের জন্য আমাদের লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে হবে। তারা তো আমাদের মেহমান, তাদের কিভাবে ট্রিট করলাম সেটাও দেখার ব্যাপার আছে।’

স্থানীয় শিল্পকারখানা থেকে আসা রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়ে আছে ফতুল্লা স্টেডিয়ামের প্রবেশপথ, আউটার মাঠ ও মূল মাঠের অর্ধেকটা। মাঝে মাঝে এই পানি গড়িয়ে যায় মূল মাঠের সেন্টার উইকেট পর্যন্ত। পচা পানির দুর্গন্ধে নিঃশ্বাস নেয়াই দায়। দীর্ঘসময় ধরে এমনটা চলায় পানিতে জন্মেছে কচুরিপানা। নিষ্কাশন লাইন উপচে পানি ঢুকে যাচ্ছে মাঠে। এমন নজিরবিহীন ঘটনা কোনও আন্তর্জাতিক ভেন্যুতে এটাই হয়তো প্রথম। সমস্যাটাও দীর্ঘদিনের। শুধু আসন্ন সিরিজ নিয়েই নয়, এই আন্তর্জাতিক ভেন্যুর ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে যাচ্ছে দ্রুতই।

প্লাবিত থাকায় গত সপ্তাহে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিদল প্রস্তুতি ম্যাচের ভেন্যু ফতুল্লা পরিদর্শন করতে পারেনি। হেলিকপ্টারে চড়ে উপর থেকে প্লাবিত ভেন্যু পরিদর্শনের পর মিরপুর, চট্টগ্রাম ভেন্যু দেখেছেন খুটেখুটে। অস্ট্রেলিয়া দল বাংলাদেশে আসার আগে আবারো ফতুল্লা ভেন্যু পরিদর্শন করবে প্রতিনিধিদলটি। তারা নেতিবাচক প্রতিবেদন দিলে ভেন্যুটির আন্তর্জাতিক মান নিয়েই উঠে যাবে প্রশ্ন, ‘বিসিবি কিন্তু ফতুল্লা নিয়ে ভাবছে। যদি এই আন্তর্জাতিক এই ভেন্যু নিয়ে নেতিবাচক কিছু আসে, সেটা আমাদের সবার জন্যই দুঃখজনক ব্যাপার হবে। অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ হলে এই ভেন্যু নিয়ে প্রশ্ন উঠবে হয়তো। সেক্ষেত্রে বোর্ড বলতে পারবে এই মাঠের ভবিষ্যৎ কী হবে।’

এক মাসের জলাবদ্ধ ফতুল্লা স্টেডিয়ামের প্রধান ফটক ও আউটার মাঠ এখন এমনই

এমন শঙ্কা থাকার পরও কেন পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না, এমন প্রশ্নে হানিফ ভূঁইয়া বললেন, ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। তারপরও কেন যেন সমাধান হচ্ছে না। আমাদের তারা বলছে, আমরা করছি-করবো। এমনকি আমরা লিখিতও দিয়েছি। ফতুল্লায় খেলা হওয়ার সম্ভাবনা নাই সেটা আমরা এখনই বলবো না। বিসিবি, গণমাধ্যম সবাই এটা নিয়ে কথা বলছি, কিন্তু কোথায় গিয়ে যেন সমস্যা দূর করার কাজটা এগোচ্ছে না। এনএসসি অনেকবার মিটিং করেছে, বিসিবিও অনেকবার চিঠি দিয়েছে। এখান থেকে দ্রুত বের হয়ে আসতে হবে। নয়তো কঠিন হয়ে যাবে পরিস্থিতি।’

এ ধরনের জটিলতা নিরসনে ভবিষ্যতে বিসিবির দায়িত্বে মাঠ দেওয়ার আহবানও জানান এই কর্মকর্তা, ‘ক্রিকেট মাঠগুলো যদি আজকে বিসিবির অধীনে থাকতো, আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে পারতাম। নিজেদের ফান্ডে চাইলে অনেক কিছু করতে পারি আমরা। কিন্তু মাঠের মালিকানা বিসিবির না হওয়ায় এক্ষেত্রে চাইলেও অনেককিছু করতে পারা যায় না। মাঠগুলো আমাদের দিয়ে দিলে খুশি মনেই সব সমস্যা দূর করে ফেলব।’