আন্দোলনের মাঝেই একদল অভিনয়কারী, এরা কারা?

স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য দিয়ে গুজব ছড়িয়েছেন, কিংবা আন্দোলন ভিন্নখাতে নিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছেন তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, চিহ্নিত করা হয়েছে অনেককেই। মামলাও হয়েছে বিভিন্ন থানায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোন তথ্য শেয়ার করা বা প্রকাশ করার আগে সতর্ক থাকা উচিত।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল কলেজ পড়ুয়ারা যখন রাজপথে আন্দোলনে, রাষ্ট্রের সবোর্চ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ যখন সমর্থন দিয়েছেন সেই আন্দোলনে তখন এই আন্দোলনকে পুঁজি করে নিজেদের স্বার্থ আদায়ে মাঠে নামে কয়েকটি মহল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয় বিভিন্ন উস্কানিমূলক ভিডিও কিংবা পোস্ট।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কিছু ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা যায় – একদল যুবক নিজেদের পোশাক পাল্টে স্কুলের ইউনিফর্ম পরে আন্দোলনে যোগ নিয়েছেন।

কেউ আবার, স্কুলের পোশাক পরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঢুকে পড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে। অস্ত্র হাতে তেড়ে যায় প্রতিপক্ষের দিকে।

আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, নিরাপদ সড়কের আন্দোলন সহানুভূতি আদায়ের লক্ষ্যে লিপস্টিক দিয়ে নকল রক্ত বানিয়ে হাত মাথা ব্যান্ডেজ করে আন্দোলনে যোগ দিতে আসে একজন। পুলিশের হাতে আটকের পর বের হয়ে আসে পুরো ঘটনার আদ্যোপান্ত।

ঘটনার সত্যতা যাচাই না করে ফেসবুক লাইভে এসে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর দায়ে গ্রেফতার হয়ে এক অভিনয় শিল্পী এখন রয়েছেন পুলিশি রিমান্ডে।

এছাড়া কিছু চিহ্নিত ফেসবুক পেজ থেকে ছড়ানো হয় উস্কানিমূলক বার্তা। পুলিশ বলছে, এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ২৭টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ২০ জনের বেশি। বাকিদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে।

ডিএমপি গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখা উপ কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতেও কিন্তু ব্যাপক আকারে বিভিন্ন রকমের গুজব ছড়ানো হয়েছে। যার আমরা ইনভেস্টিগেশন করে কোন সত্যতা পাইনি। এক শ্রেণির ব্যক্তিবর্গ স্বার্থান্বেষীরা সুযোগ বুঝে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেছে।’

সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, একটি যৌক্তিক আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করে নিজেদের সুবিধালাভের উদ্দেশ্যেই কোনো কোনো মহল এসব উত্তেজনাকর মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে। নিজেদের আলোচনায় নিয়ে আসা কিংবা রাজনৈতিক ফায়দা নেয়াও এসবের উদ্দেশ্য হতে পারে।

সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘একটা মিথ্যাকে ৫বার প্রচার করা হলে তা সত্যতে পরিণত হয়। তখন সেটাকে গুয়েভেলিয়ান ট্রুথ বলা হয়। এর মধ্যে যে সমস্ত কায়েমি সত্য রয়েছে, তারা তাকে মিথ্যা বানাতে চেষ্টা করছে। এরা মানুষকে উত্তেজিত করতে চায়।’

তিনি আরো বলেন, নানা গোষ্ঠীর কায়েমি স্বার্থ উদ্ধারের প্রবণতা থেকেই বাংলাদেশের অরাজনৈতিক জন আন্দোলনগুলো পথ হারায়। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ক্ষেত্রে তেমনটা যেনো হয় সেই ব্যাপারে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি।-সময় টিভির সৌজন্যে