আবারও কুবি বাসে হামলা, তিনজন আটক

ইমদাদুল হক মিরন, কুবি প্রতিনিধি : তিন মাসের মাথায় আবারো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শিক্ষার্থীদের পরিবহন বাসে বহিরাগতদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে শিক্ষার্থীসহ আহত হয়েছে ৩ জন। সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) কুমিল্লার কোটবাড়ি বিশ্বরোডে সংলগ্ন শফিউল আলম স্টিল (এসএএস) গ্রুপ কারখানার সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শফিউল আলম স্টিল (এস এ এস) গ্রুপ কারখানার জেনারেল ম্যানেজার ফয়েজ আহমেদ, স্থানীয় মেম্বার শাহ আলম ও একজন দোকানদারকে আটক করা হয়েছে বলে জানান কুমিল্লা কোতায়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু সালাম মিয়া।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ক্যাম্পাসমুখী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বহনকারী ৭ নাম্বার বাস (ঢাকা মেট্রো ব-১১-৪৯৮০) কোটবাড়ি বিশ্বরোড সংলগ্ন শফিউল আলম স্টিল (এসএএস) গ্রুপের কারখানার সামনে এলে পাশ থেকে একটি ট্রাক বাসটিকে ধাক্কা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় বাসের চালক এর প্রতিবাদ করলে ট্রাকের চালক তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করে। একপর্যায়ে ঐ কারখানার ভেতর থেকে আরও দুজন এসে বাসচালকসহ বাসে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। মারধরে বাসের চালক মোহাম্মদ জসিম আকন্দসহ আরও দুজন শিক্ষার্থী আহত হয়।

এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে ও হামলায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে ফুঁসে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বারবার বিশ্ববিদ্যালয় বাসে বহিরাগতদের হামলা ও এসব ঘটনার বিচার না হওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে। দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক লাগিয়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শাখা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ ‘প্রশাসন ঘটনার বিচার করবে’ এমন আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা শান্ত হয়।

এই ঘটনায় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে এসএএস গ্রুপ কারখানার জেনারেল ম্যানেজার ফয়েজ আহমেদ, ঘটনার উস্কানিদাতা স্থানীয় মেম্বার শাহ আলমসহ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক দোকানদারকে আটক করে কোতোয়ালি মডেল থানায় নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু সালাম মিয়া বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বাসে হামলার ঘটনায় আমরা এসএএস গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার সহ স্থানীয় এক দোকানদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছি। ঘটনার মূলহোতা সন্দেহে স্থানীয় মেম্বার শাহ আলমকেও আটক করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশনের মামলা অনুযায়ী আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নিবো।’

মামলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দীন বলেন, ‘ইতিমধ্যে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ আমাদেরকে জানিয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও মামলা করার প্রক্রিয়া চলমান আছে। খুব দ্রুতই মামলা দায়ের করা হবে।’

এর আগে, গত ১১ অক্টোবর, ২০১৮ তারিখে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রলীগ নেতা আশিকের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বাসে হামলা করা হয়। একই বছরের ১৪ মে কুমিল্লা মহানগর ও সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে বাসে হামলার ঘটনা ঘটে। এছাড়াও ২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর নগরীর দৌলতপুর এলাকায় স্থানীয় দুর্বৃত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় বাসে হামলা চালায়। এসব ঘটনায় বাস চালক, শিক্ষার্থী মিলিয়ে আহত হন কমপক্ষে ২০ জন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ‘বিচার হবে’, ‘ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’- ইত্যাদি জানানো হলেও আজ পর্যন্ত কোনো হামলার ঘটনারই দৃশ্যমান বিচার হয়নি। এতে হামলাকারী দুর্বৃত্তরা উৎসাহ পাচ্ছে বলে জানান তারা।