‘আব্দুল মতিন খসরুর নীতি ও আদর্শ ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয়’

সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু এমপি স্মরনে ভার্চুয়াল সভায় বক্তারা বলেছেন, ‘আব্দুল মতিন খসরুর নীতি ও আদর্শ ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয়।’

সাবেক আইন, সংসদ, বিচার বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী (আইন মন্ত্রী), সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু এমপি স্মরণে শনিবার বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ আইকন আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সাবেক আইনমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু স্মরণে বক্তারা বলেছেন, মতিন খসরু যে নীতি ও আদর্শ নিয়ে ভোগ নয়, ত্যাগের রাজনীতি করে গেছেন, তা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। এই নীতি ও আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে বাংলাদেশকে উন্নতি-সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে হবে।

তারা বলেন, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন খসরু ছিলেন অত্যন্ত ভদ্র, বিনয়ী এবং উদার এবং বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উজ্জীবিত সর্বগুণের অধিকারী একজন নেতা। তার হঠাৎ করে চলে যাওয়া দেশ এবং জাতির জন্য অনেক বড় ক্ষতি।

সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের উপদেষ্ঠা মোহাম্মদ আবু তাহেরের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্ঠা মন্ডলীর সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্ঠা মন্ডলীর সদস্য ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক সিনিয়র এডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খাঁন নিখিল, বাংলাদেশ আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, বাংলাদেশ আওয়ামী কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ্র, সোনার বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আবু সালেক মোহাম্মদ সেলিম রেজা সৌরভ এবং আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরাম ঢাকার সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন।

আব্দুল মতিন খসরুর জীবনের বিভিন্ন দিক আলোকপাত করে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্ঠা মন্ডলীর সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে লালন করে তাঁর দেখানো পথ ধরে আব্দুল মতিন খসরু সারাজীবন রাজনীতি করে গেছেন। তার এই আদর্শ থেকে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের অনেক কিছু শেখার আছে।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্ঠা মন্ডলীর সদস্য ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের যুগ্ম আহŸায়ক সিনিয়র এডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, আব্দুল মতিন খসরু অতি অল্প সময়ে আইনাঙ্গনে ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তার ন¤্রতা, ভদ্রতা, বিচক্ষনতা, দেশপ্রেম দলের প্রতি আনুগত্য ও আস্থা তাকে সম্মানের আসনে স্থান করে দিয়েছে।

সভায় আলোচকরা বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, অনেকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ মহান জাতীয় সংসদে বাতিলে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সকল ষড়যন্ত্র চূর্ণ করে উচ্চ আদালতে ইন্ডেমনিটি বাতিল চ্যালেঞ্জ করে করা রিট মোকাবেলা করেছিলেন।

এলাকার মানুষের ভোটের মর্যাদা দিয়ে তিনি তার নির্বাচনী এলাকা তথা কুমিল্লা ও দেশের মানুষকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন উল্লেখ করে তারা বলেন, কুলাঙ্গার মোস্তাক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়ে যে কলঙ্ক জাতির ললাটে লেপে দিয়েছিল এবং কুমিল্লার মানুষকে লজ্জিত করেছিল, সেই কলঙ্ক কালিমা মুছে দেয়ার ক্ষেত্রে কুমিল্লারই সন্তান আব্দুল মতিন খসরু ভূমিকা রেখেছেন। তার সাহসী ভূমিকার জন্য আমরা জাতির পিতার হত্যার বিচার দেখতে পেয়েছি। এটা তার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। এছাড়া, দলের দূঃসময়ে তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তা প্রদান করে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাবার সাহস ও উৎসাহ যোগাতেন।

উল্লেখ্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু (৭১) পাঁচ বারের সংসদ সদস্য এবং সাবেক আইনমন্ত্রী। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ এপ্রিল/২০২১ বুধবার বিকেল আনুঃ পৌনে পাঁচটায় ইন্তেকাল করেছেন তিনি। উচ্চ আদালতের এ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের মিরপুর গ্রামে ১৯৫০ সালের ১২ ফেব্রæয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন। এলএলবি এবং বিকম ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৭৮ সালে কুমিল্লা জজকোর্টে যোগদান করেন এবং ১৯৮২ সালের ১৩ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১০ সালের ২৪ আগস্ট তিনি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।

এর আগে ১৯৭১ সালে সক্রিয়ভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন আবদুল মতিন খসরু। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে কুমিল্লা-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তারপর ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে মোট ৫বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ৭ম সংসদে (১৯৯৬-২০০১) আইনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী শক্তি ইনডেমনিটি অ্যাক্ট বা দায়মুক্তি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করেছিল। দীর্ঘ ২১ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব হ্রহণ করলে তৎকালীন আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুর প্রাণান্ত চেষ্টায় ‘অবৈধ এবং অসাংবিধানিক’ দায়মুক্তি অধ্যাদেশ বাতিল হয়। ফলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত হয়। এর মাধ্যমে আবদুল মতিন খসরু বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন।

একাদশ জাতীয় সংসদের আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তিনি। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমন্ডলীর সদস্য হন। ২০১৯ সালেও তাঁকে একই পদে বহাল রাখা হয়। শুধু রাজনীতে নয়, আইন অঙ্গনেও তিনি জনপ্রিয় ছিলেন। আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে তিনি কয়েকবার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

সর্বশেষ ২০২১-২০২২ সেশনে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১০ ও ১১ মার্চ নির্বাচনের পর ১৫ মার্চ করোনা টেস্ট করাতে দেন তিনি। ১৬ মার্চ সকালে রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়ার পর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি হলে তাঁকে কেবিনে নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে অবস্থা আবারো অবনতি হওয়ায় তাঁকে ফের আইসিইউতে নেওয়া হয়। সর্বশেষ মঙ্গলবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ এপ্রিল/২০২১ বুধবার বিকেল আনুঃ পৌনে পাঁচটায় ইন্তেকাল করেন তিনি।