আলজাজিরার পাশে এবার জাতিসংঘসহ শীর্ষ ৮০ মিডিয়া

কাতারের ওপর অবরোধ প্রত্যাহারে আলজাজিরার সম্প্রচার বন্ধের যে শর্ত দিয়েছে সৌদি জোট, এর বিরুদ্ধে এবার সোচ্চার হয়েছে জাতিসংঘ এবং বিশ্বের শীর্ষ ৮০টির বেশি সংবাদমাধ্যমের জোট ডিজিটাল কনটেন্ট নেক্সট (ডিসিএন)। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও আলজাজিরার পক্ষে দাঁড়িয়েছে অনেকে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বলেছে, আলজাজিরার সম্প্রচার বন্ধের শর্ত দেওয়া ‘মিডিয়ার বহুমুখী কণ্ঠস্বরের প্রতি আঘাত’। অন্যদিকে ডিসিএন সৌদি জোটের ভূমিকাকে আজজাজিরার কণ্ঠ রোধের মধ্য দিয়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ ও ভিন্নমত দমনের পাঁয়তারা হিসেবে উল্লেখ করেছে।

জঙ্গিবাদে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগে গত ৫ জুন কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ। এরপর ২৩ জুন সৌদিসহ চার আরব দেশের পক্ষ থেকে অবরোধ প্রত্যাহারে কাতারকে আলজাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করাসহ ১৩টি শর্ত দেওয়া হয়।

গত বুধবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের মতপ্রকাশ ও বাক্স্বাধীনতা বিষয়ক দূত ডেভিড কায়ি এক বিবৃতিতে বলেন, আলজাজিরা বন্ধের শর্ত ‘মিডিয়ার স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ভয়াবহ হুমকি’। তিনি আলজাজিরা বন্ধের দাবি থেকে সৌদি জোটকে সরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান। আরব দুনিয়ায় মিডিয়ার ওপর সেন্সরশিপ আরোপের প্রচেষ্টা রুখে দেওয়া এবং সেখানে স্বাধীন মিডিয়া উদ্যোগকে উৎসাহিত করারও তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে গত সোমবার ডিজিটাল কনটেন্ট নেক্সট (ডিসিএন) এক বিবৃতিতে আলজাজিরার প্রতি সংহতি প্রকাশ করে। ডিসিএনের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা বিশ্বের সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতাকে সমর্থন করি। সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিকের কণ্ঠরুদ্ধের যেকোনো অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। ’

শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলোর এই জোটে বিবিসি, গার্ডিয়ান, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, ফক্স নিউজ, এবিসি নিউজ, আলজাজিরা, ব্লুমবার্গ, বিজনেস ইনসাইডার, সিএনবিসি, ডিসকভারি, ফোর্বস, ইএসপিএন, ফরেন পলিসি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, এনপিআর, স্লেট, ইউএসএ টুডের মতো শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলো রয়েছে।

এ জোটের আগে আলজাজিরা বন্ধের দাবির বিরুদ্ধে সরব হয় বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যম নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ নিউ ইয়র্ক টাইমস ও গার্ডিয়ানের সম্পাদকীয় পর্ষদ সৌদি জোটের দাবির প্রতি নিন্দা জানায়।

সংবাদ বিশ্লেষণগুলো বলছে, সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব জগতের সংবাদমাধ্যমে যে একমুখী কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হতো, আলজাজিরা সেই অচলায়তন ভেঙে দিয়ে ভিন্নধারায় খবর পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জনপ্রিয় হতে থাকে। ইসলামী শরিয়াকে আলোচনায় নিয়ে আসে সংবাদমাধ্যমটি। যেটা আরব দুনিয়ার অন্যান্য মিডিয়ায় আগে কখনো আলোচিত হয়নি। এ ছাড়া অন্যান্য আরব মিডিয়ার তুলনায় আলজাজিরায় পাওয়া সংবাদ ও মতামতে জনমতের পরিসর অনেক বৈচিত্র্যময়। এ কারণে সৌদি আর মিসরের মতো কট্টর রক্ষণশীল শাসকদের শত্রু হয়েছে আলজাজিরা। ওই শাসকরা চান না রাজতন্ত্রে শাসিত জনগণ রাজতন্ত্রের সমালোচনা করা সংবাদ দেখুক।