গ্রীষ্মকালীন টমেটো ক্ষেত পরিদর্শন

‘আয় বাড়াতে অসময়ের ফসল চাষাবাদ করতে হবে’: সাতক্ষীরায় কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘কৃষকদের সামাজিক মর্যাদা আছে। অনেক উচ্চ শিক্ষিত মানুষ এখন কৃষি ও কৃষিখামার করে সাবলম্বি হচ্ছেন। গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষও অনেকটা সেরকম।’

রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সাতক্ষীরার কলারোয়া গ্রীষ্মকালীন টমেটো ক্ষেত পরিদর্শন ও টমেটো চাষীদের সাথে মতবিনিময়কালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিঁনি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক এমপি আরো বলেন, ‘কৃষি কাজ করে আয় বাড়াতে হবে। আর এই আয় বাড়াতে হলে অসময়ের ফসল চাষাবাদ করতে হবে। ফলে পোকামাকরের আক্রমণ কম হবে। এ উপজেলায় ৬৭ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষাবাদ হয়েছে। আমার দাবি আগামি বছর জেলায় ৭০০ হেক্টরে জমিত গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষবাদ করা হোক।’

উপজেলার যুগিখালী ইউনিয়নের কামারালী মাঠে গ্রীষ্মকালীন টমেটো ক্ষেত পরিদর্শন করেন কৃষি মন্ত্রী ড.মো.আব্দুর রাজ্জাক।
এর আগে সেখানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে চাষীদের সাথে মতবিনিময় ও সুধিসমাবেশে বক্তব্য রাখেন তিনি।

‘ভারতীয় টমেটো আমদানি হওয়ায় এখানকার কৃষকরা টমেটোর ভালো দাম পাচ্ছেন না’- এমন অভিমতের প্রেক্ষিতে কৃষিমন্ত্রী ড.রাজ্জাক বলেন, ‘ভারতীয় টমেটো যাতে না আসে সেটার ব্যবস্থা করা হবে। তাহলে টমেটোর আশানুরূপ দাম পাবে কৃষকরা।’

তিনি আরো বলেন, ‘ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্রমুক্ত সোনারবাংলা গড়তে হবে। গার্মেন্টেসের মতো সব ‍কৃষিপণ্য যাতে বেশি বেশি বিদেশে রফতানি করা যায় তার সেদিকে লক্ষ্য করা হচ্ছে। বাংলাদেশে খাদ্যের ঘাটতি নেই, কোন অভাব নেই। এখন শুধু পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। এতে করে কৃষকদের আয় বাড়বে। পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার তৈরির জন্য বেশি বেশি সবজি চাষ করতে হবে। বেশি বেশি সবজি উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে সবজি বিদেশেও রফতানি করতে হবে।’

সরকারের প্রভাবশালী এই মন্ত্রী বলেন, ‘কাঁচামাল যাতে না পঁচে যায় সেজন্য সরকার নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসছে। লবনাতক্ত পানিতে যাতে ফসল উৎপাদন করার যায় তারও ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। পিয়াজের বীজ ইতোমধ্যে সারা দেশে বিতরণ করা হচ্ছে। চলতি বছরে পিয়াজের কোন ঘাটতি নেই। প্রধানমন্ত্রীর সামনে কৃষি বিষয়ক যে প্রকল্প ধরা হয় সেটা তিনি পাশ করে দেন। কৃষির সমস্যাগুলো অচিরেই সমাধান করছে সরকার।’

গ্রীষ্মকালীন টমেটো ক্ষেত এলাকায় অতিদ্রুত বিদ্যুত সংযোগের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান কৃষি মন্ত্রী।
একই সাথে টমেটো ক্ষেত সংলগ্ন ওফাপুর বিলের লষ্কর খালটি আগামি অর্থবছরের মধ্যে খনন করার ঘোষনা দেন কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

খালটি দখল করে ঘের তৈরি করে মাছ চাষ করায় মাঠের পানি নিষ্কাশন হয় না।

ওই এলাকার কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত টমেটো নির্বিঘ্নে বিক্রয় করতে পারেন সেজন্য সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে শেড নির্মাণের প্রতিশ্রতি দেয়া হয়।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেজবাহুল ইসলাম, বিএডিসির চেয়ারম্যান ড.অমিতাভ সরকার, সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি, সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ নজরুল ইসলাম।

কৃষকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আফসার সানা।

যুগিখালী ইউনিয়নের ৩৬০জন টমেটো মতবিনিময়ে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড.বখতিয়ার আহম্মেদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ, বিএডিসির পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান, জেলা আ.লীগের নেতা ফিরোজ কামাল শুভ্র, অধ্যক্ষ আবু আহম্মেদ, ফিরোজ আহম্মেদ, কলারোয়া পৌর মেয়র মনিরুজ্জামান বুলবুল, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলিমুর রহমান, কলারোয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক এমএ কালাম, যুগিখালী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল হাসানসহ কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি বিভাগের খুলনা বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা। এছাড়াও স্থানীয় আ.লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন এবং উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম।

পরে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক কলারোয়া উপজেলা পরিষদে যান। সেখানে কিছু সময় অবস্থান করে বিকেলে যশোরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু, ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুবায়ের হোসেন চৌধুরীসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে এদিন সকালে খুলনার ডুমুরিয়ায় ঘেরের পাড়ে সবজি ক্ষেত পরিদর্শন শেষে সাতক্ষীরা বাইপাস সড়ক হয়ে কলারোয়ার কামারালী মাঠের গ্রীষ্মকালীন টমেটো ক্ষেত পরিদর্শনে আসেন কৃষিমন্ত্রী ড.মো.আব্দুর রাজ্জাক ও তার সফরসঙ্গীরা।