ইউক্রেনের লড়াইটা আসলে নেটোর সঙ্গে, বলছে রাশিয়া

গত দু’মাস ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে মস্কো বলে এসেছে ‘বিশেষ সেনা অভিযান’। কূটনীতিকদের আশঙ্কা, ওই দিন আসল যুদ্ধ ঘোষণা করবে মস্কো। আর তার মহড়া চলছে পুরোদমে। ভীত নই বার্তা দিতে ৯ মে-তেই কিভে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ়কে আমন্ত্রণ জানালেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। বললেন, শোলৎজ়ের কিভে আসা হবে ‘জোরদার পদক্ষেপ’।

জার্মানি-ইউক্রেন সম্পর্ক সরল রেখায় বইছে, এমন নয়। বরং তাদের বিরোধিতার জন্যই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এ স্থান হয়নি ইউক্রেনের। সে নিয়ে এক সময় প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন জ়েলেনস্কি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে নরমে-গরমে সম্পর্ক ঠিক করায় জোর দিয়েছেন তিনি। জার্মানিও অস্ত্র সরবরাহ করছে ইউক্রেনকে। সম্প্রতি জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ক্রিস্টিন ল্যামবার্ক্ট জানিয়েছেন, ৭টি দূরপাল্লার শক্তিশালী অভিঘাত করতে সক্ষম অস্ত্র পাঠাবেন তাঁরা। জার্মানিতে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। আমেরিকা শুরু থেকেই সাহায্য করে চলেছে। অস্ত্র ও যুদ্ধকৌশল রচনায় সহযোগিতা করে যাচ্ছে তারা। আজ এক আমেরিকান সরকারি কর্তা দাবি করেছেন, তারাই কৃষ্ণসাগরে রুশ যুদ্ধজাহাজ মস্কোভার অবস্থান জানিয়ে সতর্ক করছিল ইউক্রেনকে। তবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ কিভেরই ছিল। ওয়াশিংটন আজ নিজেরা জানালেও মস্কো গোড়াতেই বলেছিল, ‘‘আমরা আসলে নেটোর বিরুদ্ধে লড়ছি। ইউক্রেনের পক্ষে এত কিছু করা অসম্ভব।’’

রাশিয়ার বিরুদ্ধে বর্তমানে এককাট্টা ইউরোপ-আমেরিকা। তবে জ্বালানি প্রসঙ্গে এখনও কিছুটা নড়বড় অবস্থা। এ বছরের মধ্যে রাশিয়ার উপরে জ্বালানি নির্ভরতা বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে ইইউ। জার্মানি গররাজি। হাঙ্গেরি জানিয়েছে, তাদের পক্ষে রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি বন্ধ করা সম্ভব নয়। এ নিয়ে নিয়মিত বৈঠক চলছে। রবিবার জি-৭-এর সদস্য দেশগুলি জ়েলেনস্কির সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে বসবে।

জ়েলেনস্কি আজ সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, রুশ হামলায় তাঁর দেশের অন্তত ৪০০ হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে। কোনও গুরুতর অসুস্থ রোগীর অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো অক্ষত নেই। জ়েলেনস্কির কথায়, ‘‘কোনও কোনও জায়গায় সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিকও মজুত নেই। ডায়াবিটিস রোগীদের জন্য ইনসুলিন নেই।’’ ক্রেমলিনের দাবি, তারা শুধুমাত্র সামরিক ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালিয়েছে। সাধারণ মানুষকে নিশানা করা হয়নি। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে জ়েলেনস্কি বলেন, ‘‘শুধু যদি দেশের চিকিৎসা পরিকাঠামোরই কথা বলি, তাতে অন্তত ৪০০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র (হাসপাতাল, প্রসূতি কেন্দ্র, আউটডোর ক্লিনিক) ধ্বংস করে দিয়েছে রুশ বাহিনী। সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত অবস্থা।

এদিকে সামনেই রাশিয়ার বিজয় দিবস। প্রতি বছর ৯ মে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয়োৎসব পালন করে মস্কো। কিন্তু এবারে দিনটিকে নিয়ে নানা আশঙ্কা, আতঙ্ক ও জল্পনা বাসা বাঁধছে। সংবাদ সংস্থা, কিভ ০৭ মে ২০২২