‘ইতিহাসে বাবার নাম লেখা অাছে, মায়ের নাম নেই’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে ইতিহাসে বাবার নাম অাছে কিন্তু মার নাম নেই। অথচ বাবার নেতৃত্বের পেছনে মূল চালিকা শক্তি ছিলেন অামার মা বেগম ফজিলাতুন নেছা। তিনি বলেন, অামার মা ছিলেন সবচেয়ে বড় গেরিলা। বাবা যখনই বন্দী হতেন, তখন অামার মা ঢাকা শহরে অামার বিভিন্ন অাত্মীয়-স্বজনের বাসায় গিয়ে সেখান থেকে পোশাক পরিবর্তন করে অন্য অাত্মীয়দের বাসায় গিয়ে নেতাদের সঙ্গে মিটিং করতেন। ছাত্রনেতাদের টাকা-পয়সা দিয়ে অান্দোলনকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করতেন।

বুধবার বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছার ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু অান্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অায়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের অাফরোজ চুমকি সভায় সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম এনডিসি। এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরা, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক মমতাজ বেগম ও সাংসদ রেবেকা মোমেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হওয়ার পেছনে অামার মায়ের অনেক অবদান ছিল।’ তিনি বলেন, ‘বাবা যখন জেলে থাকতেন নেতারা তখন দিক হারিয়ে ফেলতেন কী করবেন, কোথায় যাবেন তা ভাবতে পারতেন না, তখন তাদের নেতৃত্ব দিতেন অামার মা। অামাদের বাসায় যখন বৈঠক করা নিষেধ ছিল, তখন অামার মা বোরকা পরে বাইরে গিয়ে গোয়েন্দা এসবির (তৎকালীন অাইবি) চোখ ফাঁকি দিয়ে নেতাদের আন্দোলনের পরামর্শ দিতেন। অামার অাব্বার নামে অাইবির ৪৭টি ফাইল ছিল। কিন্তু অামার মার নামে গোয়েন্দারা একটি ফাইলও তৈরি করতে পারেনি। তাই অামি বলি অামার মা ছিলেন সব চেয়ে বড় গোয়েন্দা।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে মা খুব দৃঢ়চেতা ছিলেন। তিনি জানতেন বাংলাদেশ একদিন স্বাধীন হবে। কারণ এ দেশের মানুষ শেখ মুজিবের পেছনে অাছে। অামার বাবা গ্রেফতার হলে অামরা কাঁদতাম কিন্তু মা কাঁদতেন না। মা বলতেন, এ দেশের সাত কোটি মানুষ তোর বাবার পেছনে অাছে, তাকে কেউ অাটকিয়ে রাখতে পারবে না। মা এই কথা বলার পর অপেক্ষা করতাম কোনো দিন বাবা মুক্তি পাবে। কিছুদিন পর মার কথাই সত্য হলো। এ দেশের মানুষের অান্দোলনের চাপে পাকিস্তানিরা বাবাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হলো।’