ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় বোনকে বাবার সম্পত্তি দিতে অস্বীকৃতি ভাইদের

ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলিমকে বিয়ে করায় দিল্লির এক নারীকে তার বাবার সম্পত্তি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ওই নারীর ভাইয়েরা। ৩৩ বছর বয়সী ওই নারীর নাম সোনিয়া। তিনি তার মৃত বাবার সম্পত্তির উপর নিজের অধিকার দাবি করে আদালতের শরনাপন্ন হয়েছেন।

তার অপরাধ তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছেন। এজন্য তার বড় দুই ভাই কেবল তাকেই অস্বীকার করেনি, তাকে তার বাবার সম্পত্তি থেকে কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধা প্রদান করতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ২০১০ সালে সোনিয়া তার বাবাকে হারান। এর এক বছর পর তার প্রথম স্বামী ব্লাড ক্যান্সারের কারণে মারা যান।

তার ভাইয়েরা তাদের বাবা অশোক নগরের সম্পত্তির তিন ভাইবোনদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সোনিয়াকে জানান যে, তারা ওই সম্পত্তির ভাড়া থেকে তাকে মাসিক পারিতোষিক দেবে। আয়ের অন্য কোনো উপায় না থাকায় সোনিয়া এ প্রস্তাবে সম্মত হন। সোনিয়া তার প্রথম স্বামী থেকে সাত বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

সোনিয়ার সঙ্গে হাসানের সাক্ষাৎ:-
২০১২ সালে সোনিয়ার দ্বিতীয় স্বামী হাসানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় এবং পরে তাদের মধ্য প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের উভয়েই একে অপরের সম্পর্কে তাদের পরিবারকে বলার সিদ্ধান্ত নেয়।

হাসান তার পরিবারকে হিন্দু নববধূ গ্রহণের জন্য বুঝাতে সক্ষম হলেও সোনিয়ার ভাইয়েরা এই সম্পর্ক গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এমনকি তাকেও অস্বীকার করে। দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে সোনিয়ার তিন বছর বয়সী একজন ছেলে সন্তান রয়েছে।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় বিবাহের পরেও আমার জীবনযাত্রার কোন পরিবর্তন হয়নি। ধর্ম নিয়ে আমার স্বামী কখনো কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ কিংবা বাধা প্রদান করেনি। আমরা সব ধর্মকেই মূল্য দেই। আমি আমার ভাইদের বুঝানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি কিন্তু শেষবারের মতো তারা আমাকে ভয়াবহ পরিণতির হুমকি দিয়েছে।’

সোনিয়া জানান, শেষপর্যন্ত তার ভাইয়েরা তার পারিবারিক সম্পত্তিটি থেকে তার মাসিক পারিতোষিক পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে এবং সম্পত্তির ওপর থেকে তার অধিকার বাতিল চেয়ে মামলা দায়ের করেছে। মামলায় বলা হয়েছে যে, সে ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ায় সম্পত্তির ওপর কোনো দাবি করতে পারে না।

ফরিয়াদির মামলা:-
সম্পত্তির অধিকার চেয়ে আইনজীবী অমিত কুমারের মাধ্যমে অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে সোনিয়া একটি ফরিয়াদি মামলা দায়ের করেন। অশোক নগরের সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ মালিকানা সোনিয়ার প্রাপ্য ঘোষণা করার জন্য তিনি আদালতের আহ্বান জানান।

সোনিয়া তার মামলার আরজিতে বলেন, তার ভাইয়েরা তাকে বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছেন এবং তার সম্পত্তির ভাগ নিয়ে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।

তিনি আদালতকে বলেন, ‘যখন আমাদের বাবা-মা যথাক্রমে ২০১০ ও ২০০৮ সালে মারা যায়, তখন আমার দুই ভাই ও আমি বাবা-মায়ের সম্পত্তির যুগ্মভাবে মালিক হয়েছি। এই সম্পত্তির মূল্য ২০ লাখ রুপি।’

তিনি দাবি করেন, ২০১২ সালে তার ভাইয়েরা তাদের সম্পত্তি তিনটি সমান ভাগে পাওয়ার অজুহাতে তাকে একটি সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে নিয়ে গিয়েছিল এবং তিনি সরল বিশ্বাসে দস্তাবেজগুলোতে স্বাক্ষর করেন। প্রাথমিকভাবে, তিনি সম্পত্তিতে ভাড়া থাকা ভাড়াটেদের কাছ থেকে সংগৃহীত ভাড়ার ভাগ পেয়ে আসছিলেন বলে জানান।

ফরিয়াদি মামলার জবাবে তার ভাইদের বক্তব্য:-
ফরিয়াদি মামলার প্রতিক্রিয়ায় দুই ভাই জানান, হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের বিধান অনুযায়ী সম্পত্তির যেকোনো অংশের উত্তরাধিকারী হওয়া থেকে তাদের বোনকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। যেহেতু তিনি একজন মুসলমানকে বিয়ের পর ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছেন এবং তার বিয়ের পর একটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।

তারা এই মামলা বাতিলের দাবি করেন। তারা বলছেন, তার বোন এখন হিন্দু হওয়ার ভান করছে এবং বলছেন যে, তারা কোনো জালিয়াতি করেননি। ওই নারী আদালতে তার ভাইদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং জালিয়াতির অভিযোগে কর্ণাডুমায় ফৌজদারী মামলা দায়ের করেছেন।-ইন্ডিয়া টুডে