ইসি গঠনে সার্চ কমিটিকে যেসব প্রস্তাব দিলেন বিশিষ্টজনরা

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) স্বাধীনতার পক্ষের লোক নিয়োগ দিতে হবে। এ ছাড়া অর্থলোভী ও বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তদের মনোনীত না করার পক্ষে মত দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। যারা বিভিন্ন সরকারের সময় সুবিধাভোগী ও সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, তাদের নির্বাচন কমিশনে যাতে নিয়োগ না দেওয়া হয়— নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটিকে এমন প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।
এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতিকে সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত ১০ জনের নাম যাতে প্রকাশ করা হয়, সেই আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

নির্বাচন কমিশন গঠনে যোগ্য ব্যক্তি খুঁজতে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে সার্চ কমিটির বৈঠকে এসব প্রস্তাব উঠে এসেছে।

নির্বাচন কমিশন গঠনে বিশিষ্টজনদের মতামত নিতে শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার কিছু পর বৈঠকে বসে সার্চ কমিটি। প্রথম বৈঠকে ২০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও ১৪ জন উপস্থিত হন বলে জানা যায়।

দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে প্রথম বৈঠক। এরপর বের হয়ে বিশিষ্টজনরা বলেন, নির্বাচন কমিশনে অবশ্যই স্বাধীনতার পক্ষের লোক নিয়োগ করতে হবে।

অনেকের পরামর্শ ছিল, কোনো সরকারের আমলে সুবিধা ভোগ করেছেন–এমন কাউকে নিয়োগ না দেওয়ার।

তবে প্রথম বৈঠকে অংশ নেওয়া বিশিষ্ট নাগরিকদের অধিকাংশই রাষ্ট্রপতির কাছে নামের সুপারিশের আগে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশের পরামর্শ দেন।

প্রথম দফার বৈঠক শেষে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, দলীয় সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগী কোনো ব্যক্তি যেন ইসিতে স্থান না পান, এমন দাবি জানানো হয়েছে। এই দাবি উপস্থিত আরও অনেকেই সমর্থন করেছেন। সুবিধাভোগী বলতে কী বুঝিয়েছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কেউ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন, এমন ব্যক্তি হতে পারেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুল বলেন, যারা অবসরের পরেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ বা বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন, তারা যেন কোনোভাবেই ইসিতে না আসতে পারেন। আর যারা আসবেন, তাদের সুষ্ঠু নির্বাচন করার মানসিকতা ও সাহসিকতা যেন থাকে। ইসি গঠনের জন্য যাদের নাম প্রস্তাব করা হবে, তাদের নাম যেন আগেই প্রকাশ করা হয়, সেজন্য প্রস্তাব করেছি।

এ ছাড়া বৈঠকে যোগ দেওয়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী এবং এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি মাহফুজা খানম মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ব্যক্তিদের ইসিতে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব করেন।

শনিবার বেলা ১১টার দিকে সুপ্রিমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে প্রথম ধাপে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে সার্চ কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বসেন। এই ধাপে ২১ বিশিষ্টজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

প্রথম বৈঠকে আমন্ত্রণ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম আব্দুল আজিজ ও আলী ইমাম মজুমদার, সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এএফ হাসান আরিফ, ফিদা এম কামাল, আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, মুনসুরুল হক চৌধুরী, ব্যারিস্টার রোকনুদ্দিন মাহমুদ, এমকে রহমান, ড. শাহদীন মালিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান ও ড. আসিফ নজরুল, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজি মাহমুদ আলী, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মাহফুজা খানম, বিএমএ সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতা অধ্যাপক মাকসুদ কামাল, এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ ও ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের (ফেমা) সভাপতি মুনিরা খান।

আমন্ত্রিতদের মধ্যে বৈঠকে অংশ নেন ১৪ জন।

এদিকে শনিবার দুপুরে ১টা ৫ মিনিটে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে দ্বিতীয় বৈঠকে বসে সার্চ কমিটি। এ বৈঠকে ১১ বিশিষ্ট নাগরিক অংশ নেন।

দ্বিতীয় বৈঠকে বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রয়েছেন- ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, আজকের পত্রিকার সম্পাদক ড. গোলাম রহমান, একাত্তর টেলিভিশনের সিইও মোজাম্মেল হক, ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, জাগরণের সম্পাদক আবেদ খান, মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী, চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একে আজাদ, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, চ্যানেল আইয়ের শাইখ সিরাজ, জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, এনটিভির বার্তা প্রধান জহিরুল আলম।

এর আগে বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে একই স্থানে বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে বৈঠক করে সার্চ কমিটি। ওই বৈঠকে ২১ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও অংশ নেন ১৪ জন।

এদিকে সার্চ কমিটির আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে প্রায় আড়াইশর মতো প্রস্তাব জমা পড়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সম্প্রতি আইন পাশ করেছে জাতীয় সংসদ। আইনে বর্ণিত যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির নির্দেশনায় ৫ ফেব্রুয়ারি অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন হয়েছে। কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।