ইয়েমেনে চলছে সৌদি হত্যাযজ্ঞ, চুপ মুসলিম বিশ্ব

মানব ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীন বসতি আর আরব বিশ্বের সবচেয়ে গরিব দেশ ইয়েমেনে চলছে সৌদি তাণ্ডব। আকাশ থেকে নিক্ষেপ করা বোমা ক্ষতবিক্ষত করছে হাজারো মানুষকে। নিহত হয়েছে অন্তত নয় হাজার, আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫০ হাজার।

তবে আসল সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি দাবি করে সম্প্রতি ইয়েমেনের মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের হামলায় ছয় লাখের বেশি মানুষ হতাহত হয়েছে।

হাউতি বিদ্রোহী দূর করার নামে অসম এই লড়াইয়ে প্রাণ যাচ্ছে নিরস্ত্র মানুষের, রক্ত ঝরছে শিশুদের। দেখা দিয়েছে ভয়াবহ খাদ্য সংকট। কলেরা, ডিপথেরিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ ছড়িয়ে পড়ছে মহামারির মতো।

মানবাধিকারের চরম লংঘনের মধ্যে সৌদি আরবকে ঠেকাতে কোনো বৈশ্বিক উদ্যোগ নেই। মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোও মুখে কুলুপ এটেছে। ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘসহ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা তাদের বক্তব্য তুলে ধরলেও এ বিষয়ে দৃঢ় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কোনো পক্ষই।

শুরুতে উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগে বিভক্ত থাকলেও ১৯৯০ সালে দুই ভাগ মিলিয়ে একটি ইয়েমেন গড়ে ওঠে। তবে ২০১৫ সাল থেকে চলা যুদ্ধে পুরোপুরি বিপর্যস্ত দেশটি। আর এর মধ্যে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে সৌদি আরব। মূলত দেশটিতে নিজেদের প্রভাব খাটাতে এবং সুন্নী শাসক আবদ রব মনসুর হাদিকে টিকিয়ে রাখতে এই অভিযানে দেশটি। সঙ্গে আরব আমিরাত।

নির্বিচারে হামলায় দেশটির অবস্থাকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব-সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়’ বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ। বারবার যুদ্ধবিরতির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে তারা।

গত তিন বছরে ইয়েমেনে যত মানুষ হতাহত হয়েছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। এছাড়া লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, দেশটির ৭৫ শতাংশ মানুষের জরুরি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। অন্তত সোয়া কোটি মানুষের বেঁচে থাকার জন্য জরুরি খাদ্য সরবরাহ দরকার। প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষের জানা নেই, তাদের পরবর্তী বেলার খাবার জুটবে কি না। পাঁচ বছরের নীচের চার লাখ শিশু চরম অপুষ্টিতে ভুগছে, যা তাদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছে।

ইয়েমেন অভিযানে সৌদি আরবের এক হাজারেরও বেশি সৈন্য নিহত হয়েছে বলে সম্প্রতি জানায় আল জাজিরা। ২০১৫ সালের মার্চে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট যখন ইয়েমেনের ওপর হামলা চালায় তখন থেকে এ পর্যন্ত এসব সৌদি সেনা নিহত হয়।

বলা হয়ে থাকে, ইয়েমেনের হাউথি বিদ্রোহীদের সাহায্য করছে ইরান। অপরদিকে সৌদি জোটকে সরাসরি সমর্থন দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স।