ঈদে যাদের ঘরে ফেরা হয় না.. আনন্দ করা হয় না.. পরিবার পরিজনের সাথে

দুঃখ আছে কষ্ট আছে,আছে শতক বেদনা তারপরও ঈদ মানেই সবার সাথে মিলে মিশে আনন্দ ভাগ করে নেয়া, নাড়ির টানে ঘরে ফেরা।
কিন্তু পরিবারের আর সবার মত মা বাবার সঙ্গে যাদের ঈদ করা হয়না, যাদের খবর রাখার একান্ত আপনজন কেউ নেই, এরা সরকারী শিশু পরিবারে কিংবা এতিমখানায় বেড়ে উঠা এতিম শিশু। ঈদের এই আনন্দময় দিনটি কিভাবে কাটবে কুড়িগ্রাম শিশু পরিবারে আশ্রিত এই এতিমদের।

ঈদ আসে আনন্দবার্তা নিয়ে, কিন্তু সরকারী শিশু পরিবারে বেড়ে উঠা এতিম শিশুদের ঈদে আনন্দ বলতে চার দেয়ালে ঘেরা এই ভবনেই। এখানে আশ্রিত রয়েছে ৬৪ জন নানা বয়সের শিশু কিশোর।এর মধ্যে ৬ থেকে ১৪ বছরের শতাধিক শিশুর মধ্যে মা-বাবা নেই ৩৮ শিশুর। এরা একেবারেই এতিম। আবার অনেকের শুধু মা আছে তারা ঈদের দিন বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ পেলেও যাদের মা-বাবা কেউ বেচে নেই তাদের কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই।তারা কেন্দ্রের ভেতরেই রঙ্গিন কাগজে ঘরগুলো সাজিয়ে, বুকের ভেতর একরাশ কষ্ট চাপা দিযে ঈদের দিনটি কাটায়। সকালে শেমাই রুটি আর দুপুরে গোশত পোলাও হয়ত সাময়িক আনন্দ দিলেও পরিবারের সবাইকে ছেড়ে থাকার কষ্ট অনুভব করে হৃদয়ে।

গত ১০ বছর ধরে শিশু পরিবারে ঈদ করছে উলিপুরের সাইফুল। সে এখন কুড়িগ্রাম কারিগরি কলেজে দশম শ্রেণীর ছাত্র।তার কাছে ঈদ আসা আর যাওয়া অন্য দিন গুলোর মতই। ঈদে বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করে ছোট রাজুর কিন্তু কার কাছে যাবে,তার যে মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই। সাইফুল কাইয়ুম সজীব কিংবা বাঁধনের মত আর সব এতিম অনাথ শিশুর ঈদের দিন ভাই বোন আতœীয়স্বজন সকলে মিলে একসাথে ঈদ করা এদের কাছে স্বপ্নই থেকে যায়।

বাড়িতে সবার সাথে ঈদ করতে না পারার বেদনা এরা ভাগ করে নেয়। এখানে আশ্রিত ছোটরা বড়দের ভাইয়া বলে ,বড় ভাইয়ারা ছোটদের স্নেহ পরশে কাছে টেনে নেয়। ঈদের দিনে একসাথে নামাজ পড়ে, খেলাধুলা করে আনন্দ ভাগাভাগি করে তারা।

সরকারী শিশু পরিবার, কুড়িগ্রাম এর, উপ তত্বাবধায়ক সুকান্ত সরকার জানালেন তারা সব সময় চেষ্টা করেন অনাথ এতিম বাচ্চাদের আদর দিয়ে তাদের দুঃখ কষ্ট ভুলিয়ে রাখতে।

ঈদের দিন মায়ের হাতে তৈরী খাবার খেতে না পাবার দুৃঃখ ভুলিয়ে দিতে সকালে শেমাই আর দুপুরে পোলাও মাংস রান্না হলেও পিতা মাতা হারানো শিশুদের দুঃখ কষ্ট গুলো চাপা পড়েনা।

সমাজসেবা অধিদপ্তর, কুড়িগ্রাম জেলা উপপরিচালক মোঃ রোকনুজ্জামান জানালেন, শিশুরা যাতে মন খারাপ না করে সেজন্য ঈদের দিনে তাদের পছন্দমত নতুন কাপড়, ভাল খাবার সহ ঈদের দিনটিকে আনন্দময় করতে নানা প্রচেষ্টা চলছে। সব শিশুদের মত ঈদের দিনটি হোক এখানকার শিশুদেরও আনন্দের। হোক না তারা এতিম। সকল ভেদাভেদ ভুলে হাসিমুখে তাদের কাছে টেনে নিলে এদের দুঃখ কিছুটা লাঘব হবে।