কুড়িগ্রামে অপকর্ম প্রকাশ করায় সাংবাদিকর ওপর হামলা

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় মাদক কারবারী, সরকারি জায়গা অবৈধভাবে দখল করে আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তােলনসহ নানা অপকর্মের প্রতিবাদ করায় সাংবাদিক আনিছুর রহমানের ওপর হামলা চালানাে হয়েছে।

যাদুরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাখাওয়াত হােসেন সবুজ, সহযাগি জাকির হােসেন ও মাদক সম্রাট খ্যাত নুরুন্নবীর বিরুদ্ধে এই অভিযােগ উঠেছে।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাত সােয়া ৯টার দিকে উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের কর্তিমারী বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রৌমারী থানায় একটি লিখিত অভিযােগ দিয়েছেন নির্যাতনের শিকার ওই সাংবাদিক। এ নিয়ে বইছে সাংবাদিকসহ সুধিমহল সমালােচনার ঝড়।

নির্যাতনর শিকার সাংবাদিক আনিছুর রহমান প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদশ (পিআইবি) থেকে সাংবাদিকতার উপর স্নাকােত্তর ডিপ্লােমা কাের্স সম্পন্ন করেন ও দৈনিক সংবাদ পত্রিকার রৌমারী উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘ দিন থেকে কাজ করে আসছেন তিনি।

নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক আনিছুর রহমান অভিযােগ করে বলেন, গত ৯ মার্চ লােকমুখ জানতে পারেন মাদক সম্রাট নুরুন্নবীর বাড়িতে অভিযান চালায় রৌমারী থানার পুলিশের একটি দল। এ সময় ওই মাদক কারবারির তত্বাবধায়ন থাকা যাদুরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাখাওয়াত হােসেন সবুজের সেচ পাম্প ঘরে তল্লাশী করে মেঝেতে মাটি খুঁড়ে একটি পিস্তল উদ্ধার করে পুলিশ।

ওই বাড়িতে অভিযানের জন্য পুলিশকে এ তথ্য দিয়েছে এমন মিথ্যা অভিযাগ তােলা হয় সাংবাদিক আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও ২০২১ সালে কর্তিমারী বাজার ‘যাদুরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়’ লেখা দু’টি সাইনবাের্ড টাঙ্গিয়ে জায়গা দখল করেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা। ঘর নির্মাণের পর দখল করা ওই জায়গাটি ব্যক্তি মালিকানা দাবি করে ওই কার্যালয়টি ভাড়ায় দেন তিনি।

মঙ্গলবার দুপুর দখলের সময়কার এবং বর্তমান সময়ের দু’টি ছবি ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পােস্ট করেন ওই সাংবাদিক। এরই জের ধরে ওই রাতেই তারাবি নামাজ আদায় করে বাড়ি ফেরার পথে কর্তিমারী বাজারের আপেলের চায়ের দােকানর সামনে গেলে পথ রােধ করে অতর্কিতভাবে তাঁর ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালায় মাদক সম্রাট নুরুন্নবী ও পৃষ্টপােষক যাদুরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাখাওয়াত হােসেন সবুজ ও প্রধান সহযােগি জাকির হােসেন।

একপর্যায় বেধরক মারপিটসহ শ্বাসরােধ করে হত্যার চেষ্টা করা হয় ওই সাংবাদিককে। এতে আহত হয় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গেলে তাকে উদ্ধার করে রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায় স্থানীয়রা।

সাংবাদিক আনিছুর রহমানের ছােট বােন পারভীন আক্তার বলেন, আমার ভাই ছাত্র জীবন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি যাদুরচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক তিনটি কমিটিতে প্রচার সম্পাদক, ধর্মীয় বিষয়ক সম্পাদক ও সহসভাপতির পদে ছিলেন। অত্র এলাকার নানা অপকর্ম ফাঁস করায় আমার ভাই সাংবাদিক আনিছুর রহমানের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে তারা।

২০১৭ সালে এই চক্রটি যােগসাজস করে একটি মিথ্যা সাজানাে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার মামলায় ফেসে দেন। ওই মামলায় ৭১ দিন জেলহাজতে থাকতে হয়। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তিনি। আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে মাদক ব্যবসা ও সরকারি জায়গা দখল যারা করেন তাদের বিচারের দাবি জানান তিনি।

পিআইবি জার্নালিজম এ্যালামনাই অ্যাসােসিয়েশনের (পিবজা) সভাপতি আইনজীবী ও সাংবাদিক রুহি সামশাদ আরা বলেন, সাংবাদিক আনিছুর রহমানের ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনত হবে। তা না হলে এলাকায় মাদকসহ অপরাধীদের দৌড়াত্ম আরও বেড়ে যাবে।

রৌমারী প্রেসক্লাবের সভাপতি সুজাউল ইসলাম সুজা বলেন, সাংবাদিক আনিছুর রহমানর ওপর যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানান।

এই বিষয়ে অভিযুক্ত শাখাওয়াত হােসেন সবুজ বলেন, সাংবাদিক আনিছুর রহমান দীর্ঘ দিন ধরে আমার সম্পর্ক যা তা প্রচার করে আসছেন। এ নিয়ে কিছু কথা কাটাকাটি হয়েছে। তার ওপর হামলা করা হয়নি।

অভিযােগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে রৌমারী থানার ওসি আব্দুল্লাহিল জামান বলন, এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। দ্রুত প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।