এমভি আব্দুল্লাহ: ভারতের আক্রমণ থেকে বাঁচতে জলদস্যুদের নতুন কৌশল

ব্রিটিশ এবং ইন্ডিয়ান নেভাল শিপের আক্রমণ থেকে বাঁচতে সোমালিয়ান জলদস্যুদের নিয়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ দ্রুত অবস্থান পরিবর্তন করছে।
তথ্য মতে, গেরাকেদ অঞ্চল থেকে তিনবার স্থান পরিবর্তন করে উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে জাহাজটি সোমালিয়ান উপকূল থেকে মাত্র ৪ নটিক্যাল মাইল দূরে দাঁড়িয়ে আছে।

নিজ দেশের ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে ভিনদেশি জাহাজ ভিড়তে না পারার আন্তর্জাতিক যে আইন রয়েছে জলদস্যুরা সেটার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।

এদিকে নাবিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে হামলার পরিবর্তে মুক্তিপণের মাধ্যমে জিম্মি ঘটনার অবসানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ।

নৌ বাণিজ্য অধিদফতরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বলেন, ‌‘বল প্রয়োগের মাধ্যমে যদি ঝুঁকি থাকে সেটাকে আমরা উৎসাহিত করতে চাচ্ছি না। আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি প্রথমে কর্মীদের উদ্ধার করায়, তারপর জাহাজ এবং মালামাল।’

মাস্টার মেরিনার ক্যাপ্টেন এম আনাম চৌধুরী বলেন, ‘আমি মনে করি, শান্তিপূর্ণ আলোচনাই এখন একমাত্র উপায়। আমাদের জান-মাল সবকিছুর নিরাপত্তার জন্য এটিই হলো উত্তম পন্থা।’

এর আগে ২০১০ সালে একই গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজ এমভি জাহান মনি ছিনতাই হওয়ার ১০০ দিন পর মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে এনেছিল গ্রুপটি। সেই জাহাজে ২৫ নাবিকসহ ২৬ জনকে জিম্মি করা হয়েছে। তাদের একজন ছিলেন মো. ইদ্রিস।
তিনি বলেন, সেবার ২৬ জন নাবিক বেঁচে আছেন কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের সঙ্গে টাকা লেনদেন করা হয়।

তিনি জানান, পার্শ্ববর্তী দেশ কেনিয়ার একটা বিমান ওয়াটারপ্রুফ দুটি ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে প্যারাসুটের মাধ্যমে সমুদ্রে ফেলে। জলদস্যুরা সেটা তুলে জাহাজে নিয়ে আসে। সেই টাকা দেখার পর মুক্তি দিয়েছিল তাদের।

এদিকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবরে বলা হয়েছে, এমভি আব্দুল্লাহ এবং এতে থাকা ২৩ নাবিককে উদ্ধারে অভিযান শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছে সোমালিয়ার পুলিশ এবং আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর সম্মিলিত দল।

সোমবার (১৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, সোমালিয়ার পুন্টল্যান্ড এলাকাটি অসংখ্য জলদস্যু চক্রের ঘাঁটি। আধাস্বায়ত্তশাসিত এই অঞ্চলটির পুলিশ বাহিনী জানিয়েছে, তারা উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে এবং এমভি আবদুল্লাহকে জব্দ করা জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিয়েছে।

তবে জাহাজটির মালিকপক্ষ কবির গ্রুপ এই ধরনের অভিযানের বিষয়ে কিছু জানে না বলে দাবি করেছে।

প্রতিষ্ঠানটির মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার নাবিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনা। এ ধরনের অভিযানের বিষয়ে আগেও সরকার থেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন নৌবাহিনীর কাছে সুস্পষ্ট বার্তা দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর অভিযান নিয়ে আমাদের ধারণা নেই।’

কবির গ্রুপের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম বলেন, ‌‘এখানে হামলা হলে আমাদের নাবিকদের প্রাণহানির শঙ্কা থেকে যায়। সুতরাং আমাদের কোম্পানি ওই পথে হাঁটবে না। আমরা নাবিকদের জীবিত অবস্থায় স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই।’

গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। ৫৫ হাজার মেট্রিকটন কয়লা বহনকারী জাহাজটির ২৩ জন নাবিকই বাংলাদেশি।