এ বছরে বিদায় নেয়া শিল্পপতিরা

বিদায়ী ২০২০ সালে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস অনেককেই কেড়ে নিয়েছে। হারানোর এই তালিকায় এগিয়ে আছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা। করোনা ছাড়াও শারীরিক জটিলতায় এবং বার্ধক্যেও প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। নিজ নিজ খাতে বিশাল অবদান রেখে যাওয়া দেশের স্বনামধন্য শিল্পপতিদের হারিয়ে শোকাহত ব্যবসায়ী সমাজ। এজন্য এ বছরকে ব্যবসায়িক সহযোদ্ধা হারানোর বছর হিসেবেই মনে রাখবেন তারা।

আবদুল মোনেম
দেশের সুপরিচিত শিল্পগোষ্ঠী আবদুল মোনেম লিমিটেডের (এএমএল) প্রতিষ্ঠা করেন আবদুল মোনেম। তিনি ১৯৫৬ সালে নিজের নামে ব্যবসা শুরু করেন। তার প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজারের বেশি কর্মী কাজ করেন। আবদুল মোনেম লিমিডেটের নির্মাণ, খাদ্য, পানীয়, ওষুধ, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ নানা খাতে ব্যবসা রয়েছে। ৩১ মে ৮৮ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

লতিফুর রহমান
১৯৭২ সালে প্রায় শূন্য হাতে ব্যবসা শুরু করেন ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান। দাদা ও বাবা ব্যবসায়ী হলেও নিজে ব্যবসা শুরু করেছিলেন ব্যাংক ঋণ নিয়ে। এরপর ইলেকট্রনিকস, খাদ্যপণ্য, ওষুধ, চা, মিডিয়াসহ বিভিন্ন খাতে ছড়িয়ে পড়ে ট্রান্সকমের ব্যবসা। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা, সুনাম আর সততার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১২ সালে তিনি পান বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড, যা ব্যবসা-বাণিজ্যের জগতে নোবেল হিসেবে পরিচিত।

৭৫ বছর বয়সী লতিফুর রহমান করোনাভাইরাস শুরুর পর থেকেই কুমিল্লার গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন না। তবে দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থতাসহ বার্ধক্যজনিত আরো কিছু জটিলতায় ভুগছিলেন। চলতি বছরের পয়লা জুলাই চৌদ্দগ্রামে নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন এই ব্যবসায়ী।

নুরুল ইসলাম বাবুল
১৯৭৪ সালে যমুনা গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। তার মেধা, দক্ষতা, পরিশ্রম ও সাহসিকতার মাধ্যমে একে একে শিল্প এবং সেবা খাতে গড়ে তোলেন ৩৮টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে ইলেকট্রনিকস, বস্ত্র, ওভেন গার্মেন্টস, রাসায়নিক, চামড়া, মোটরসাইকেল, বেভারেজ টয়লেট্রিজ, নির্মাণ, সংবাদমাধ্যম এবং আবাসন খাত।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পপরিবার যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বাবুল ১৩ জুলাই না ফেরার দেশে চলে গেছেন। ৭৪ বছর বয়সী এই শিল্পোদ্যোক্তা আজীবন অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করেছেন।

এম এ হাসেম
দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাসেম। রাজনীতিতে সক্রিয় এই ব্যবসায়ী বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। ১৯৬২ সালে পারটেক্স নামে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৩ সালে বেসরকারীকরণের মাধ্যমে পারটেক্স স্টার গ্রুপ নামে পরিচালিত হয়ে আসছে। এর প্রতিষ্ঠাকালীন কর্ণধার করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

শেখ মোমিন উদ্দিন
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৪ আগস্ট অন্যতম বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকিজ উদ্দিনের মেজো ছেলে ও আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশনের পরিচালক শেখ মোমিন উদ্দিন মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।

মোরশেদুল আলম
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২২ জুন এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোরশেদুল আলম মারা যান। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের বড় ভাই। তিনি এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

শরীফ এম আফজাল
বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ এম আফজাল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৯ ডিসেম্বর মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তিনি টাইমস ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা। আমৃত্যু তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ঢাকার নর্দান কলেজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, হার্ভার্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ছিলেন।