ওবামাপত্নী সাবেক ফাস্ট লেডি মিশেল ওবামা ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীর আলোচনায়

মধ্যবর্তী নির্বাচন শেষ হলো। এই নির্বাচনে ক্ষমতাসী ডেমোক্র্যাটরা সিনেট দখল করতে পারলেও হাউজে ধরাশয়ী হয়েছে। তবে নির্বাচনোত্তর সব হিসেব-নিকেশ পাল্টে গেছে এই ফলাফলে।

সবার ধারণা ছিলো মধ্যবর্তী নির্বাচনে রেড ওয়েব ছড়িয়ে পড়বে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে। শেষ পর্যন্ত সেটি হয়নি।
ইতিহাস বলছে, সবসময়ই মধ্যবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের জনপ্রিয়তায় ধস নামে। যার প্রতিক্রিয়া দেখা যায় নির্বাচনে। এবার তার উল্টোটা ঘটেছে। হাউজে হারলেও ফলাফল নিয়ে উচ্ছ্বসিত ডেমোক্র্যাটরা। অন্যদিকে রিপাবলিকানদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এদিকে মধ্যবর্তী নির্বাচন শেষ হতে না হতেই ফের ডামাডোল বেজে গেছে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। ভোটের দু’বছর আগেই রিপাবলিকানদের হয়ে ফের প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ঘোষণা করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

কিন্তু তার বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যটদের প্রার্থী হবেন কে? এ নিয়েই এখন আমেরিকায় তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা। এর মধ্যেই সামনে চলে এলো প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পত্নী মিশেলের নামও। যদিও বাইডেন ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এদিকে ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ইস্যুতে মুখ খুলেছেন স্বয়ং ওবামাপত্নী সাবেক ফাস্ট লেডি মিশেল ওবামা। গত সপ্তাহে একটি সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন তিনি।

ঐ সাক্ষাৎকারে মিশেলকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি উত্তরে বলেন, প্রেসিডেন্ট ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না। সেখানে কে লড়বেন, সেটা এতো তাড়াতাড়ি বলা সম্ভব নয়। তবে এটা ঠিক যে, অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে। সাফল্যের সঙ্গেই বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করেছেন তিনি। পরবর্তী ভোটেও তিনি লড়বেন কিনা সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। তার স্ত্রী জিল-সহ পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ থেকে দু’দফায় ডেমোক্র্যাটদের হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতেন বারাক ওবামা। তিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন জো বাইডেন। ওবামার পর নির্বাচনে জয়ী হন রিপাবলিকান দলের নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাকে হারিয়েই ফের ক্ষমতা দখল করে ডেমোক্র্যাটরা। প্রেসিডেন্ট হন জো বাইডেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতায় আসার দু’বছরের মাথায় আমেরিকার মিড টার্ম নির্বাচনে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ ‘হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ’-র অধিকাংশ আসনই গিয়েছে তাদেও ঝুলিতে। সর্বশেষ ফলাফলে সিনেটের ৫০ আসন দখলে গেছে ডেমোক্র্যাটদের, ৪৯টি আসন রিপাবলিকানদের। জর্জিয়া আসনটি অমিমাংসিত রয়েছে। সেখানে দুই প্রার্থীর কেউ ৫০ ভাগের বেশি ভোট পাননি বলে রান-অফ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৬ ডিসেম্বর। যদি এই আসনের নির্বাচনের অপর সিনেট দখলে কোন হেরফের হবে না। ঐ আসনে ডেমোক্র্যাটরা পরাস্ত হলেও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের কংগ্রেসের ভোট দেয়ার ক্ষমতা নিয়েই সংখ্যাগরিষ্ঠতা ইতোমধ্যেই অর্জন হয়েছে ক্ষমতাসীনদের।
অন্যদিকে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউজে রিপাবলিকানদের অর্জন ২১৯টি এবং ডেমোক্র্যাটদের ২১২। বাকি চারটি আসনের চূড়ান্ত ফলাফল এখনও আসেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত কোন মহিলা প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সমানে সমানে লড়াই করেছিলেন আরেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের স্ত্রী হিলারি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন তিনি ট্রাম্পের কাছে। হিলারির পর ফের সামনে এলো মিশেল ওবামার নাম। তবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বলেই জানিয়ে দিয়েছেন মিশেল। প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে স্বামী-স্ত্রীর একসঙ্গে রাজনীতি করার নজির খুব বেশি নয়। এর আগে এই নজির দেখা গিয়েছে বিল ও হিলারি ক্লিনটনের মধ্যে। বারাক ও মিশেল ওবামার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ক্লিনটনের মতোই।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে অবসর নেয়ার পর সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে কিছুটা দূরেই রেখেছেন বারাক ওবামা। তবে বর্তমানে চুটিয়ে রাজনীতি করছেন সাবেক ফার্স্ট লেডি।