শাহজাদপুরে কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী উৎসব

‘কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ সাধারণ মানুষের জন্য ছিলেন নিবেদিত প্রাণ’ : নৌ প্রতিমন্ত্রী

‘কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন বংশীয় জমিদার হয়েও তিনি ছিলেন সাধারন মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ। কবিগুরু শুধু একজন কবিই নন, তিনি একজন মহাপুরুষও! কবিগুরুকে নিয়ে বক্তব্য দেয়া আমার মতো মানুষের পক্ষে দুঃসাধ্য ব্যাপার।’

রোববার (৮ মে) দুপুরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি অডিটোরিয়ামে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এসব কথা বলেন।

এ সময় প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবিগুরুকে বুকে ধারণ করেছিলেন বলেই তিনি সাধারন মানুষকে ভালোবাসতেন, ভালোবাসতেন গান ও কবিতাকেও। আমরা যদি রবীন্দ্রনাথকে মনেপ্রাণে ধারণ করতে পারতাম, তবে আমাদের অবস্থান আরও উন্নত আরও উচ্চ শিখরে অবস্থান করতো। আমাদেরও উচিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনাদর্শ অনুসরণ করে জীবনকে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলা।’

এদিন সকালে কবিগুরুর ১৬১তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন সিরাজগঞ্জ-০৬ (শাহজাদপুর) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতা।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ।

এতে বিশেষ অতিথি’র বক্তব্য রাখেন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শামীম খাঁন, শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রফেসর আজাদ রহমান, শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক এমপি চয়ন ইসলাম, সাধারন সম্পাদক স্পেশাল পিপি (নারী ও শিশু) এড. শেখ মোঃ আব্দুল হামিদ লাবলু, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শাহ আজম, শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র মনির আকতার খান তরু লোদী প্রমূখ।

সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতা বলেন, ‘শাহজাদপুরবাসীর জীবনে রবীন্দ্রনাথের প্রচন্ড প্রভাব রয়েছে। যার ফলে এখানে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী পালনে মানুষের অংশগ্রহণ থাকে।’

এদিন রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতনামা শিল্পীদের পাশাপাশি আবৃত্তি, নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করেন জাতীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীবৃন্দ।

এদিকে, ১৯৯১ সাল থেকে কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত শাহজাদপুরের কাছারিবাড়িতে কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী উৎসব পালিত হয়ে আসছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে দুই বছর কোনো রকম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই নিভৃতে কেটে গেছে কবিগুরুর জন্মদিন। তবে এবার কবিগুরু ১৬১তম জন্মজয়ন্তী উৎসবে দেশি-বিদেশি রবীন্দ্র ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে কাছারিবাড়ি প্রাঙ্গণ। সেইসাথে উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে শাহজাদপুর।

উল্লেখ্য, শাহজাদপুর জমিদারী একদা ছিল নাটোরের রানী ভবানীর জমিদারির অংশ। ১৮৪০ সালে শাহজাদপুরের জমিদারি নিলামে উঠলে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর মাত্র ১৩ টাকা ১০ আনায় এ জমিদারি কিনে নেন। রবীন্দ্রনাথ ১৮৯০ থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত জমিদারি দেখাশোনার কাজে শাহজাদপুরে সাময়িকভাবে বসবাস করতেন। এখানে অবস্থানকালে কবিগুরু রচনা করেন কাব্য: সোনারতরী, বৈষ্ণব কবিতা, দুটি পাখি, আকাশের চাঁদ, পুরস্কার, যমুনা, হৃদয়, ভরা ভাদরে, প্রত্যাখ্যান ও লজ্জা, ছোটগল্প পোস্ট মাস্টার, রাম কানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা, ব্যবধান, তারা প্রসন্নের কীর্তি, ছুটি, সমাপ্তি, ক্ষুধিত পাষান, অতিথি, ৩৮টি ছিন্ন পত্রাবলী, প্রবন্ধ ও নাটক বিসর্জনের মতো সাহিত্যকর্ম। গীতাঞ্জলী কাব্যের কাজও শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থ রচনার জন্য নোবেল পুরস্কার পান।