কাতারকে আকাশসীমাও ব্যবহার করতে দেবে না প্রতিবেশিরা

এবার কাতারকে আকাশসীমা ব্যবহার করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিসর। দেশটি তাদের আকাশসীমা কাতারের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। মঙ্গলবার দেশটির তরফ থেকে এমন তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। মিসরের এমন পদক্ষেপের পর সৌদি আরব এবং বাহরাইনও একই পথে হাঁটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর বিবিসির।

উপসাগরীয় অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থনের অভিযোগ এনে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন, আরব আমিরাত, লিবিয়া এবং ইয়েমেন।

এদিকে, কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা দেশগুলোর নাগরিকদের কাতারে যাওয়া, সেখানে বসবাস করা বা কাতার হয়ে অন্য কোন দেশে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এসব দেশের নাগরিকদের দুই সপ্তাহের মধ্যে কাতার ছাড়তে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সৌদি আরব, আরব আমিরাত এবং বাহরাইনে বসবাসরত কাতারিদেরও একই সময়ের মধ্যে এসব দেশ ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে।

তবে যে অভিযোগে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে দোহা। দেশটি বলছে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের পেছনে উপযুক্ত কোনো যুক্তি নেই।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের ওপর অবিচার করা হচ্ছে। যে অভিযোগ করা হয়েছে তার কোনো ভিত্তি নেই। একটি উন্মুক্ত এবং আন্তরিক সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।

মিসরের তরফ থেকে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার থেকেই তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়া হবে। পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত কাতার তাদের আকাশসীমা আর ব্যবহার করতে পারবে না।

এই নিষেধাজ্ঞার কারণে কাতারের রাজধানী দোহার বিমানবন্দরে বিমান চলাচল বিঘ্নিত হবে। অপরদিকে, কাতার এয়ারওয়েজ, এতিহাদ এয়ারওয়েজ এবং এমিরেটস এর সকল বিমানের ফ্লাইটও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বর্তমানে এতিহাদ এয়ারওয়েজ এবং এমিরেটস এই দুই বিমান সংস্থা দোহাতে দিনে চারটি ফ্লাইট পরিচালনা করে।

স্বল্প ব্যয়ের বিমান সংস্থা ফ্লাইদুবাই এবং এয়ার অ্যারাবিয়াও তাদের দোহার ফ্লাইটগুলো বাতিল করেছে। ধারনা করা হচ্ছে উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য বিমান সংস্থাও তাদের ফ্লাইট বাতিল করবে।

কাতারের জাতীয় বিমান সংস্থা এখানে সবচেয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে। প্রথমত দুবাই, আবুধাবি, রিয়াদ এবং কায়রোর মত জায়গায় তাদের ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাবে। তার মানে দিনে তাদের বহু ফ্লাইট বাতিল হবে।

কিন্তু উপসাগরীয় অঞ্চলের আকাশপথের একটি বড় অংশ কাতারের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে তারা বাধ্য হবে যাত্রাপথ বদলাতে। এর ফলে অনেক রুটে সময় বেশি লাগবে।

সময় বাড়লে শুধু বেশি জালানি খরচ হবে তাই না, যাত্রীদের জন্যও তা বড় প্রভাব ফেলবে। কাতার এয়ারওয়েজ দোহার মাধ্যমে ইউরোপ এবং এশিয়াকে যুক্ত করে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে।

কিন্তু ইউরোপে আগে যেখানে ছয় ঘণ্টা লাগতো, সেটা এখন রুট বদলানোর কারণে আট থেক নয় ঘণ্টাও সময় লাগতে পারে। ফলে এটি আর যাত্রীদের জন্য সুবিধাজনক থাকবে না এবং তারা বিকল্প খুঁজবে।

তবে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেইখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রাহমান আল থানি আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, তাদের আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা এবং আন্তর্জাতিক আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে।

সৌদি আরব, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত কাতারের সঙ্গে আকাশ, স্থল এবং সাগরে সব ধরনের পরিবহন বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে।

এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মিসর তাদের দেশের কাতারি কূটনীতিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে।