কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লাল তারকায় চিহ্নিত, ভর্তি হতে মানা

ক্রমাগত নিয়ম ভেঙে চলা কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে লাল তারকা চিহ্নিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। একইসাথে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইউজিসি।

ইউজিসি জানায়, লাল তারকা দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তথ্য ইউজিসির ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়া হয়েছে। কোনও শিক্ষার্থী এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে ওই শিক্ষার্থীর কোনো দায় নেবে না বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক এই সংস্থাটি।

ছয় মাসেরও বেশি উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ নেই এবং ট্রাস্টির মাঝে দ্বন্দ্ব আছে- এমন বিশ্ববিদ্যালয়েগুলোতে লাল তারকা দেওয়া হয়েছে। এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের সতর্ক করেছে ইউজিসি।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ইউজিসি। তাতে জানানো হয়, দেশের ১০৮টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও ইউজিসির অনুমতিক্রমে ৯৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বাকি ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় এখনও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেনি।

গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অর্জিত ডিগ্রির মূল সার্টিফিকেটে স্বাক্ষরকারী হবেন সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগ করা ভিসি ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাকারী ৯৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার সকলেই নিয়োজিত রয়েছেন। এ ছাড়া, রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা ভিসি রয়েছে ৬৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে, প্রো-ভিসি ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ট্রেজারার আছে ৫৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

২১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার পদে কেউ নেই। কমিশনের ওয়েবসাইটে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যাবলী’ শিরোনামের সেবা-বক্সে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০, কমিশনের নিয়ম-নীতি ও নির্দেশনা উপেক্ষা করে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অননুমোদিত ক্যাম্পাস, প্রোগ্রাম ও নির্ধারিত আসন সংখ্যার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে। এদেরকে অবৈধভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে কমিশন থেকে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সর্বশেষ তথ্যে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্তারিত তথ্য তুলে সতর্ক করা হয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম ইবাইস ইউনিভার্সিটি। বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমোদিত ঠিকানা নেই। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদে কোনও বৈধ কর্তৃপক্ষ নেই।

সরকারকর্তৃক বন্ধ, তবে আদালতের রায় নিয়ে পরিচালিত আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ নেই বলেও জানানো হয়েছে।
সরকার কর্তৃক বন্ধ রয়েছে কুইন্স ইউনিভার্সিটিও। এক বছরের জন্য শিক্ষা কার্যক্রমের অনুমতি দেওয়া হলেও নির্ধারিত সময়ে এটি কার্যক্রম চালু করতে পারেনি।

এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদে বৈধ কর্তৃপক্ষ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০২১ সালের স্প্রিং সেমিস্টার থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকবে। টাইমস ইউনিভার্সিটি ইউজিসির অনুমোদন না নিয়েই বিবিএ, এমবিএ, এলএলবি (অনার্স) এবং এলএলএম প্রোগ্রামে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছে।

দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা এর উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদে বৈধ কর্তৃপক্ষ নেই। এটিকে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রামের দুটি ক্যাম্পাস ছাড়া সকল ক্যাম্পাস আদালতের রায়ে অবৈধ। ২০১৭ সাল থেকে ভর্তি বন্ধ রাখার জন্য কমিশনকে নির্দেশনাও দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

গণবিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, এমবিবিএস, বিডিএস, এবং ফিজিওথেরাপি প্রোগ্রাম নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা রয়েছে। এ ছাড়া উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদে বৈধ কর্তৃপক্ষ নেই।

এদিকে অবৈধ ক্যাম্পাস আছে- এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ এর ধানমণ্ডি, শংকর, লালমাটিয়ায় কয়েকটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মিরপুর রোডের শুক্রাবাদের ১০২/১, ১০০/বি, ১০৫ ক্যাম্পাস, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ পান্থপথের ক্যাম্পাস অন্যতম। এছাড়া, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বনানীতে অবৈধ ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে।

৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্বন্দ্ব ও মামলা চলছে। এগুলো হচ্ছে- ইবাইস ইউনিভিার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

অননুমোদিত প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি।

আর এখনও শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন পায়নি ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো হলো- নারায়ণগঞ্জের রূপায়ন এ কে এম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহীর আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহীর শাহমখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি, খুলনার খান বাহাদুর আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার মাইক্রোল্যাব ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং কিশোরগঞ্জের শেখ হাসিনা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।

এ ছাড়া পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।