কিশোরগঞ্জে তীব্র শীতে কাঁপছে সাধারণ মানুষ

খাদেমুল মোরসালিন শাকীর, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি : সারাদেশের ন্যায় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার সব বয়সী মানুষ তীব্র শীতে কাঁপছে। শীতের তীব্রতা সইতে না পেরে পাড়ায় পাড়ায় ও হাট বাজারের ফাঁকা জায়গায় আগুন জালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে সাধারণ মানুষজন।

শনিবার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সুর্যের আলো না থাকায় এবং ঘন কুয়াশার সাথে হালকা ঠান্ডা বাতাসের আঘাতে শিশু ও বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ যবুথবু হয়ে পড়েছে। শিশু ও বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষের ঠান্ডা জনিত কারণে পাতলা পায়খানা ও ডায়রিয়ায় ভূগছে। কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্ধারিত বিছানার চেয়ে দ্বিগুন হারে ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হয়েছে। বহির্বিভাগ থেকে প্রতিদিন শতাধিক রোগী ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিয়ে বাড়ী ফিরছে। শীতের কারণে কৃষকেরা কাজে না গিয়ে কোনমতে দিনাতিপাত করছে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না। হাট-বাজার গুলোতে সন্ধ্যার আগেই দোকানপাট বন্ধ করে বাড়ী ফিরেছে ব্যবসায়ীরা। ফলে উভয় সংকটে পড়ছে সব পেশার মানুষ। অনেকে আবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসলেও ক্রেতা বিক্রেতা না থাকায় দোকান খুলে বাজারের মাঝখানে ফাঁকা জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে শরীর তাপ দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাজারের কোন খোলা জায়গায় কেউ আগুন জ্বালিয়ে শরীর তাপ দেয়ার চেষ্টা করলে সাধারণ মানুষ সেখানে গিয়ে ভীড় করছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ বয়সী মানুষের নাভিশ্বাস হয়ে দাড়িয়েছে। তারা কোনভাবে শীত সহ্য করতে পারছে না। কষ্ট হয়ে দাড়িয়েছে গরীব দুঃখী মানুষের। যারা প্রতিদিন অন্যের বাসায় দিন মজুর হিসাবে কাজ করে টাকা উপার্জন করে বাজার কিনে খায়। কিন্তু অতিরিক্ত শীত পড়তে থাকায় খোলা মাঠেও কাজ করতে পারছে না তারা। গবাদিপশু ও হাঁস মুরগীর শীত জনিত রোগে মারা যাচ্ছে বলে জানা গেছে। শুধু শিশু ও বৃদ্ধ নয়, উঠতি বয়সী যুবক যুবতীরাও এ বছরের শীতে আগুনের তাপে শরীর গরম করে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। বাজার গুলোতে জমে উঠেছে পুরাতন কাপড়ের বেচাকেনা।
কিশোরগঞ্জ বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,এমন যন্ত্রনাদায়ক শীত আমার জীবনে আমি পাইনি। শীতের কারণে বাজারে লোকজন তেমন একটা নেই। হোটেলের কর্মচারীরাও শীতের দিন কাজ করতে চায় না। প্রতিদিন কর্মচারীদের বিল দিতে হয় প্রায় ৪ হাজার টাকা। কিন্তু আজ সারাদিন দোকানে ৪ হাজার টাকার বেচাকেনা হয়নি। এমন শীত হলে আমার অনেক ক্ষতি হবে।
বাহাগিলী ইউনিয়নের কৃষক আব্দুর রহিমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,শীতের কারণে আমি অন্যের বাসায় কাজ করতে পারছি না। আর একদিন কাজ করলে আমরা গরীব মানুষ খাব কি? ট্রাক্টর ব্যবসায়ী লাকুর সাথে কথা হলে তিনি বলেন,মানুষের আবাদী জমি চাষ করার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছে কিন্তু ট্রাক্টরের চালক শীতের কারণে আসতে চায় না। এ অবস্থায় আমার অনেক ক্ষতি হচ্ছে। যেখানে সারাদিন ট্রাক্টর চালিয়ে কর্মচারীর বেতনসহ দেড় থেকে দুই হাজার টাকা আয় হতো। আজ ট্রাক্টর না চালার কারণে ২হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে। অনেক গরীব মানুষ শীতের গরম কাপড়,কাথা না থাকায় রাতের বেলা ঠিকমত ঘুমাতেও পারছে না।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক অফিসার ডাঃ সুজাত শরীফ জেমসের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,মেডিকেলের বহিঃর্বিভাগে সকালে কম সংখ্যক রোগী থাকলেও বেলা ১১টার দিকে শিশু রোগীর চাপ একটু বেশী ছিল। আমিও গ্রামে এই প্রথম প্রচন্ড শীত অনুভব করছি।