কুমিল্লার কালাডুমুর নদ সুরক্ষায় মতিন সৈকতের ৩০ বছরের সংগ্রাম

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাজার সংলগ্ন গোমতী নদী থেকে কালাডুমুর নদের উৎপত্তি। জেলার দাউদকান্দি, মুরাদনগর, চান্দিনা এবং চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার আনুমানিক পঞ্চাশ হাজার বিঘা জমির সাড়ে বার লক্ষ মণ বোরোধান উৎপাদনে কালাডুমুর নদের পানি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কালাডুমুরে একসময় বর্ষায় মালবোঝাই নৌকা, ইঞ্জিন চালিত বড় বোট এবং কার্গো চলাচল করত। সবধরনের মালামাল নৌপথে পরিবহন করা হতো। কালের ব্যবধানে সেসব দিন এখন হারিয়ে গেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে নতুন উপদ্রুব যুক্ত হয়েছে কালাডুমুর নদের উৎস স্থলের পাশে গৌরীপুর সুবল-আফতাব উচ্চ বিদ্যালের সামনে মাইথারকান্দি খালের মুখে গৌরীপুর বাজারের সমস্ত নাগরিক বর্জ্য, পলিথিন-প্লাস্টিক ফেলে দখলে দূষণে কালাডুমুর নদকে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত করে ফেলেছে। ইলিয়টগঞ্জ বাজারের সব ময়লা আবর্জনা সরাসরি কালাডুমুর নদে ফেলে নদটি হত্যা করা হচ্ছে । দীর্ঘদিন পূনঃখনন না করায় বালি পলি জমে কালাডুমুর নদ ভরাট হয়ে গেছে। এতে করে নদের পার্শ্ববর্তী জমিগুলোতে বোরোধান আবাদে মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে।

কালাডুমুর নদ দখল-দূষণের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং পূনঃখননের জন্য জেলার দাউদকান্দি উপজেলার আদমপুর গ্রামের দুই বার বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষি, পরিবেশ ও সমাজ উন্নয়ন সংগঠক মতিন সৈকতের উদ্যোগে ২০০৭ সালে কালাডুমুর নদ প্রায় দুই কিলোমিটার এবং ২০১৫ সালে কিছু অংশ পূনঃখনন করে সেচের পানি প্রবাহের গতি সৃষ্টি করেন।
২০০৭ সালে মতিন সৈকত ব্যক্তিগত উদ্যোগে গৌরীপুর থেকে ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত ৪১৮৫০ ফুট প্রায় ১৩ কিলোমিটার পরিমাপ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডে জমা দিয়েছেন পূনঃখননের জন্য।

কালাডুমুর নদ পূনঃখননের জন্য মতিন সৈকত ১৯৯০ সাল থেকে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। বিশ বার সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, কোদাল মিছিল, প্রতিকী অনশন, নদী মেলা, নদী অল্ম্পিয়াড করে জনসচেতনতা সৃষ্টি করেন। জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে কালাডুমুর নদ পূনঃখননের আবেদন জানান।

মতিন সৈকতের দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল এবং সরকারের উদ্যোগে ইতিমধ্যে কালাডুমুর নদের ১১ কিলোমিটার পূনঃখনন শুরু হয়েছে। আগামী বছর বাকি অংশ পূনঃখননের কথা রয়েছে। গৌরীপুর এবং ইলিয়টগঞ্জ বাজারের নাগরিক বর্জ্য-আবর্জনায় কালাডুমুর নদ দখল দূষণের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য মতিন সৈকত আবারও রুখে দাড়িয়েছেন।

মতিন সৈকত বলেন, ‘একদিকে আমার নদ কালাডুমুর পূনঃখনন করাচ্ছি অন্যদিকে কালাডুমুর নদকে দখলে দূষণে ময়লা আবর্জনার ভাগাড় বানিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে কালাডুমুর নদকে সুরক্ষার জন্য আন্দোলন করছি। আমার নদ কালাডুমুর সুরক্ষার দায়িত্ব আমার-আর নয় দখল দূষণ ময়লা আবর্জনার ভাগাড়।’