কেমন আছেন সোনালি দিনের নায়ক মাহমুদ কলি

মাহমুদ কলি। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের সোনালি দিনের একজন জনপ্রিয় অভিনেতা। দীর্ঘদিন তিনি রূপালী পর্দায় দর্শক মাতিয়েছেন। সুন্দর মুখ, সুঠাম লম্বা দেহ, স্টাইলিশ চুল- মাহমুদ কলিকে দিয়েছিলো অন্য নায়কদের চেয়ে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা। বিদেশের মনোরম লোকেশনের সিনেমার নায়ক হিসেবে মাহমুদ কলির সুনাম ছিল।

অনেকদিন হলো তিনি আলোচনার বাইরে। নেই কোনো চলচ্চিত্রেও। মাঝে কিছুদিন টিভিতে সরব থাকলেও সেখান থেকেও বিদায় নিয়েছেন। একসময় যাকে নিয়মিতই দেখা যেত চলচ্চিত্রে, যার দিনের বেশিরভাগ সময় কাটতো লাইট-ক্যামেরা আর অ্যাকশান নিয়ে সেই মানুষের দিন এখন এসব থেকে দূরে কেমন কাটে?

জাগো নিউজকে এই প্রশ্নের জবাবে মাহমুদ কলি জানালেন, ‘জীবন গতিশীল। সে কোথাও এক জায়গায় আটকে থাকে না। কোনো না কোনোভাবে সময় কেটেই যায়। আগে সিনেমায় সময় কাটতো, এখন ব্যবসা আর পরিবারের সঙ্গে দিন কেটে যায়।’

এই অভিনেতা আরও বলেন, ‘একটা সময় চলচ্চিত্রেই মনযোগ ছিলো। নতুনদের আগমণে সেখানে অনেক পরিবর্তন এলো। ধীরে ধীরে আমাদের প্রজন্মের গল্প ও চরিত্রগুলো বদলে গেল। তারও কিছু পরে ঢুকে গেল অশ্লীলতা। তখন থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি।’

চলচ্চিত্রের কারো সঙ্গে যোগাযোগ হয় না? কোথাও তো দেখা যায় না আপনাকে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘এখন তো চলচ্চিত্রে কাজ করি না। সেজন্য এফডিসিতেও যাওয়া হয় না। তবে চলচ্চিত্রের অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ হয়। দেখা হয়। যতোই আড়ালে থাকি না কেন, যেখানে জীবনের এতগুলো বসন্ত কেটেছে সেখানে তো মায়া পড়ে থাকবেই। অনেক সময় নানা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পাই। শিল্পী সমিতির আমন্ত্রণ পাই। তবে শিগগিরই হয়তো যাবো একবার।’

মাহমুদ কলি ছিলেন আশি ও নব্বই দশকের নায়ক। তার পারিবারিক নাম মাহমুদুর রহমান উসমানী। তিনি বাংলাদেশের স্বনামধন্য চিত্রনির্মাতা আজিজুর রহমান বুলি’র ছোট ভাই। মূলত ভাইয়ের হাত ধরেই তিনি চলচ্চিত্রে আসেন। এরপর দেখিয়েছেন অভিনয়ের মুন্সিয়ানা। মাহমুদ কলি’র প্রথম চলচ্চিত্র ‘মাস্তান’। তিনি এই চলচ্চিত্রে সহ-অভিনেতার ভুমিকায় ছিলেন। এরপর ১৯৭৮ সালে অশোক ঘোষ নির্মিত ‘তুফান’ চলচ্চিত্রে মূল নায়কের ভুমিকায় অভিনয় করেন।

মাহমুদ কলি জানান, তিনি ৬১টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তারমধ্যে ২টি ছবি মুক্তির মুখ দেখেনি। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘লাভ ইন সিঙ্গাপুর’, ‘গোলমাল’, ‘নেপালি মেয়ে’, ‘শ্বশুরবাড়ি’, ‘সুপারস্টার’, ‘গ্রেফতার’, ‘খামোশ’, ‘মহান’, ‘দেশ বিদেশ’, ‘মা বাপ’ ইত্যাদি। শাবানা, ববিতা, রোজিনা, অলিভিয়া, দিতি, চম্পা, অঞ্জনা, সূচরিতা, নূতনসহ অনেক নায়িকার সঙ্গেই তাকে দেখা গেছে সপ্রতিভ। তিনি কলকাতার দেবশ্রী রায়ের বিপরীতে ‘সবার উপরে’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এর পরিচালক ছিলেন শওকত জামিল।

১৯৯৪ সালে নায়ক হিসেবে মাহমুদ কলি অভিনীত সর্বশেষ মুক্তি পায়। এর নাম ছিলো ‘মহাগ্যাঞ্জাম’। তবে ২০০২ সালে তাকে আবারও দেখা গিয়েছিলো ‘আবার একটি যুদ্ধ’ চলচ্চিত্রে। সেখানে তিনি উকিল চরিত্রে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন।

অভিনয়ের পাশাপাশি দীর্ঘদিন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নেতৃত্বের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে তিনি সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তার সঙ্গে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন খল অভিনেতা আহমেদ শরীফ। এরপর তিনি একই প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়ে ১৯৯৫-১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

তবে এর পরের বছরে তিনি অভিনেতা মিজু আহমেদকে নিয়ে নতুন প্যানেলে সভাপতি পদে প্রার্থি হন এবং নির্বাচিত হন। ৯৭ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত টানা দুই মেয়াদে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

১৯৯৭ সালে তিনি টিভি নাটক নির্মাণেও নাম লেখান। ‘তাদের কথা’ নামি ছিলো তার প্রথম নাটকের। এরপর তিনি ‘আলোকিত আঙ্গিনা’ নামে আরও একটি ধারাবাহিক নাটক নির্মান করেন।

সম্প্রতি তিনি ব্যবসায়ে মনোনিবেশ করেছেন। সর্বশেষ গেল ৬ জুন তার দেখা মিলল একটি রাইড অ্যাপস কোম্পানির সংবাদ সম্মেলনে। ঢাকার রাজপথে যাত্রীসেবার নতুন পরিবহন সার্ভিস রাইডহোস্ট রাইড শেয়ারিং। এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন তিনি। জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন মাহমুদ কলি।

জন্ম ও পরিবার
মাহমুদ কলির জন্ম ঢাকাতেই। সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান তিনি। ঢাকাতেই হয়েছে পড়ালেখার হাতে খড়ি। তবে মাধ্যমিক শেষ করেছেন যশোর ক্যান্টনমেন্টে অবস্থিত বাংলাদেশ সরকারের সামরিক ভূমি ও সেনানিবাস অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত দাউদ পাবলিক স্কুলে। সেখানে তিনি হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতেন বলে জানিয়েছেন। ১৯৭২ সালে তিনি মেট্রিক পাশ করেন।

এরপর আবার চলে আসেন ঢাকায়। নটরডেম কলেজ থেকে আইএসসি সম্পন্ন করেন। পরে ১৯৮০ সালে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

ব্যক্তি জীবনে তিনি স্ত্রী আয়েশা উসমানী ও এক কন্যা আনিকা উসমানীকে নিয়ে সুখেই দিনযাপন করে চলেছেন।