ক্লাস-পরীক্ষা নিতে গিয়ে কেউ আক্রান্ত হলে দায় কে নেবে?

যারা মহামারিকালে মূল্যায়ন ছাড়া এইচএসসি’র ফল প্রকাশ নিয়ে যারা সমালোচনা করেছেন, তাদের এবার পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, ‘কোভিড-১৯ এর কারণে যাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে, সেজন্যই এই ব্যবস্থাগুলো নিতে বাধ্য হয়েছে সরকার। আমি চাই না শিক্ষার্থীরা ক্ষতির সম্মুখীন হোক। অনেকেই অনেক রকম কথা বলছেন যে, আমরা-ক্লাস পরীক্ষা নেব। কিন্তু এগুলো করতে গিয়ে যদি কেউ সংক্রমিত হয়, তার দায়দায়িত্ব কে নেবে? এ পদ্ধতিতে ফলাফল দেওয়ার বিরোধিতা যারা করছেন, তারা নেবেন? মোটেই তারা সেটি নেবেন না। তারা তখন অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করবে। এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য যে, এক শ্রেণির লোক যা কিছু করা হোক না কেন, তারা শুধু সমালোচনাই করে যায়। কিন্তু পরিস্থিতি কী হবে, তারা সেটি ভাবে না।’

শনিবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা-২০২০ এর ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে একটা বছর নষ্ট হয়ে যাক; এটা তো আমরা চাই না। তাদের জীবনটা চলমান থাকুক, সেটাই আমরা চাই। সে কারণেই এভাবে ফলাফলটা দিলাম এবং আমরা আশা করি, সবাই-ই এটাতে আনন্দিত হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবী করোনামুক্ত হলে আবারও যথারীতি সব শ্রেণিকক্ষ খুলে দেওয়া হবে। যারা ফলাফল পেল তারা তাদের শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখতে পারবে। এছাড়া, পরবর্তী পরীক্ষায় ফলাফলের ওপর তাদের ভাগ্য নির্ভর করছে। কাজেই এটা নিয়ে কথা বলার কিছু নেই। অনেকেই এটা নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমি মনে করি, এটা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য বা তিক্ততা সৃষ্টি করা ঠিক না। কারণ, আমাদের ছোট্ট শিক্ষার্থীরা-ছেলেমেয়েরা, তারা যেন কোনো মতেই হতাশাগ্রস্ত না হয়ে পড়ে। এমনিতেই তারা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কোথাও যেতে পারছে না, সেটা তাদের জীবনে বিরাট বাধার সৃষ্টি করেছে। সেক্ষেত্রে যদি আবার ফলাফল নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা হয় বা ফল দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে মন্তব্য করা হয়, এটাও কিন্তু তাদের জন্য মানসিক চাপ তৈরী করবে। কাজেই আমি বলবো, যারা এ ধরণের সমালোচনা করছেন তাদের বিরত থাকা উচিত।’

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত ফল প্রদান অনুষ্ঠানে গণভবন থেকেই ল্যাপটপের বাটন চেপে একযোগে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন সরকার প্রধান। এ সময় তিনি বলেন ‘করোনাকালে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন যাতে চলমান থাকে, তার জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছি। সংসদ টেলিভিশনের পাশাপাশি ডিজিটাল ক্লাস পরিচালনা করা হচ্ছে। যাতে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে যে কোনো সময় তারা এসব থেকে পাঠগ্রহণ করতে পারে। করোনাকালে শিক্ষাখাতে বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, এইচএসসি উত্তীর্ণদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছ পদ্ধতিতে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করতে ৪টি অ্যাপস তৈরী করা হয়েছে। সরকারি ৪২টি এবং বেসরকারি ৯২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন পদ্ধতিতে ক্লাস পরিচালিত হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষাও সম্পন্ন করা হচ্ছে।’

আওয়ামী লীগ সরকার যুগোপযোগী ও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নে বিশ্বাসী উল্লেখ করে শেখ হাসিনা করোনার জন্য গণভবনে থাকাকে জেলখানায় বন্দি অবস্থার সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘করোনা মোকাবিলায় সব পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণার শুরু থেকেই অগ্রিম টাকা দিয়ে রেখেছিল বলেই বাংলাদেশে সেই ভ্যাকসিন চলে এসেছে সময় মতো।’

স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাখাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দ্রুত ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যেভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ করছি, সবাই আরেকটু সচেতন হলে আমরা এটা নির্মূলের পথে এগিয়ে যেতে পারবো এবং খুব দ্রুতই আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে পারবো। আমরা ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসটা দেখবো। কেননা, এই মার্চ মাসেই আমাদের দেশে করোনা ব্যাপক হারে ছড়িয়েছিল। যদি ফেব্রুয়ারিতে পরিস্থিতি ভালো হয়, তাহলে আমরা সীমিত আকারে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার চেষ্টা করবো। এ জন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি।