ক্ষুধার্ত শিশুকে বুকের দুধ পান করিয়ে মিললো পদোন্নতি

কর্তব্যরত অবস্থায় ক্ষুধার্ত শিশুকে বুকের দুধ খাইয়ে শান্ত করে মানবিকতার নতুন নজির সৃষ্টি করেছেন আর্জেন্টিনার এক নারী পুলিশ অফিসার। বিষয়টি জানতে পেরে ওই পুলিশকর্মীর পদোন্নতির সিদ্ধান্তও নিয়েছে আর্জেন্টিনা পুলিশ।

আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের একটি শিশু হাসপাতালের সামনে নিয়মমাফিক টহল দিচ্ছিলেন পুলিশ অফিসার সেলেস্তে জ্যাকেলিন আয়ালা। মারিয়া লুডোভিকা নামের এই হাসপাতালটির নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন তিনিই। টহল দেয়ার সময়ই তার নজরে আসে অপুষ্টিতে ভোগা একটি শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। ক্ষুধার জ্বালায় শিশুটি ভীষণ চিৎকার করছে। বাচ্চাটি মুখে বুড়ো আঙুল চুষছে দেখেই সেলেস্তে জ্যাকেলিন বুঝতে পারেন শিশুটি ক্ষুধার্ত। কিছুদিন আগেই তিনি মা হয়েছেন।

সহজেই বুঝে যান তাকে কী করতে হবে। হাসপাতালের কর্মীদের অনুমতি নিয়ে ক্ষুধার্ত বাচ্চাটিকে দুধ খাওয়াতে শুরু করেন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই শান্ত হয় শিশুটি। এরপর চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যান কর্মীরা।

পুরো বিষয়টি দেখে অবাক হন এক স্থানীয় বাসিন্দা। তিনি ছবি তুলে ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেন। তারপরই সেলেস্তে জ্যাকেলিনের কীর্তি ছড়িয়ে পড়ে সারা পৃথিবীতে। সাধারণ পুলিশ অফিসার থেকে হয়ে যান হিরো। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই পোস্ট এক লাখ ‘শেয়ার’ হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেলেস্তে জ্যাকেলিনের ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও অভিনন্দন, শুভেচ্ছা আর কৃতজ্ঞতার মেসেজের বন্যা বইতে থাকে। খবর পৌঁছায় প্রশাসনের কাছেও।

এ ঘটনায় তাকে অভিনন্দন জানান বুয়েন্স আয়ার্স শহরের ভাইস প্রেসিডেন্ট। স্বতস্ফূর্ত ভালোবাসার এই মানবিক উদাহরণ তৈরি করার জন্য তাকে পুলিশ অফিসার থেকে সার্জেন্ট পদে প্রমোশনও দেয়া হয়েছে। তার বাড়িতে গিয়ে দেয়া হয় পদোন্নতির চিঠি। সেই ছবি টুইটও করেন শহরের মেয়র।

ভারতীয় পত্রিকা আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেলেস্তে জ্যাকেলিন পুলিশে চাকরির পাশাপাশি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গেও যুক্ত। সেচ্ছাসেবী সংস্থাটির পক্ষ থেকেও তাকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জ্যাকেলিন বলেন, ‘আমি বেশি কিছু ভাবিই নি। ক্ষুধার্ত, অপরিষ্কার শিশুটিকে দেখে আমার মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। শিশুটির এই অবস্থা হলো কী করে-সেটা ভেবে আরও খারাপ লাগছিল।’বাচ্চাদের জন্য সবারই একটু সংবেদনশীল হওয়া উচিত বলে জানান এই নারী পুলিশ কর্মকর্তা।

আনন্দবাজার আরও আরও জানায়, শিশুটি একজন ‘সিঙ্গল মাদারের’। তার ছয়টি সন্তান। ছয়টি সন্তান লালন করার ক্ষমতা তার নেই। সেই কারণেই দীর্ঘদিন অভুক্ত থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশুটি।

এই বছরের জুন মাসেও একই ঘটনা ঘটেছিল ভারতের কর্নাটকে। সদ্যোজাত এক অনাথ শিশুকে দুধ খাইয়ে শিরোনামে এসেছিলেন বেঙ্গালুরুর এক নারী পুলিশকর্মী।