ঘুম ভেঙে হাজারো যাত্রী দেখেন, উড়োজাহাজ তাঁদের নিয়ে গেছে ভুল গন্তব্যে

ইউরোপজুড়ে কয়েক হাজার বিমানযাত্রী সোমবার সকালে নিজেদের ভুল গন্তব্য এমনকি ভুল দেশে আবিষ্কার করেছেন। ঘূর্ণিঝড় ইশা আঘাত হানার কারণে এমন দশা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিএনএন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ে অসংখ্য ফ্লাইট বাতিল হয়ে যাওয়া ছাড়াও নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ এবং কিছু ফ্লাইট কয়েকবারের চেষ্টায় বিমানবন্দরের রানওয়েতে ল্যান্ড করতে সক্ষম হয়।

স্থানীয় সময় রোববার রাতে আয়ারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য থেকে এবং এই দুটি গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করা ফ্লাইটগুলোকে এক ব্যতিক্রম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। কারণ ঘূর্ণিঝড় ইশা আয়ারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের বিমানবন্দরগুলোতে মারাত্মকভাবে আঘাত হেনেছিল। বিমানবন্দরগুলোর রানওয়েতে বাতাসের গতিবেগ ছিল গড়ে ৯০ কিলোমিটার।

অবস্থা এমন ছিল যে, বেশ কিছু ফ্লাইট নির্দিষ্ট গন্তব্যে অবতরণ করতে ব্যর্থ হয়ে ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশগুলোর দিকে যাত্রা করেছে। বিশেষ করে, ডাবলিনভিত্তিক আইরিশ বিমান পরিবহন সংস্থা রিয়ানএয়ার-এর বিমানগুলো ঘূর্ণিঝড় দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছিল। গত রোববার এই সংস্থাটির আসা-যাওয়ার অন্তত ১৬৬টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়।

সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে ডাবলিন এয়ারপোর্টে অবতরণ করতে না পেরে অন্তত ৩৬টি ফ্লাইট ভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে উড়ে যায়। আর কয়েকবারের চেষ্টায় এই বিমানবন্দরে অবতরণ করে ৩৪টি ফ্লাইট। রাতভর বিমানবন্দরটি কী পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে, তা বোঝার জন্য এই পরিসংখ্যানটিই যথেষ্ট।

সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যানারি আইল্যান্ডের ল্যাঁজারোট বিমানবন্দর থেকে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনের উদ্দেশে যাত্রা করা রিয়ানএয়ারের একটি ফ্লাইট গন্তব্যের একেবারে কাছাকাছি চলে এসেও ফিরে যেতে বাধ্য হয়। পরে ওই ফ্লাইটটি ফ্রান্সের বোর্দেক্স বিমানবন্দরে গিয়ে অবতরণ করে।

রিয়ানএয়ারের আরেকটি ফ্লাইট ম্যানচেস্টার থেকে ডাবলিন এসে কয়েকবার চেষ্টা করেও ফিরে যেতে হয়। পরে এটি ফ্রান্সের প্যারিসে অবস্থিত বিউভাইস বিমানবন্দরে গিয়ে আশ্রয় নেয়। মাত্র আধা ঘণ্টার ওই ফ্লাইটটিকে অন্তত আড়াই ঘণ্টা আকাশে উড়ে বেড়াতে হয়েছে।

ডাবলিন থেকে এভাবে একের পর এক বিমান নিরাপদ গন্তব্যের উদ্দেশে ফিরে যায়। এ ছাড়া আয়ারল্যান্ড থেকে যাত্রা শুরু করা বেশ কিছু ফ্লাইটও নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। দেশটির শ্যানন এয়ারপোর্ট থেকে স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গগামী একটি ফ্লাইট শেষ পর্যন্ত জার্মানির কলোঙ্গ বিমানবন্দরে গিয়ে অবতরণ করে। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে যাত্রা করা এই ফ্লাইটটি জার্মানিতে গিয়ে পৌঁছায় মাঝরাতে। জার্মানির মিউনিখ থেকে ডাবলিনে এসে অবতরণ করতে ব্যর্থ হয়ে আবারও মিউনিখে ফিরে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে একটি ফ্লাইটের।

এদিকে যুক্তরাজ্যের বিমানবন্দরগুলোতে অন্তত ১০০টি ফ্লাইটকে একাধিকবারের চেষ্টায় অবতরণ করতে হয়েছে। স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ বিমানবন্দর থেকে ৪৪টি ফ্লাইট যাত্রা বাতিল করেছে। আর এই বিমানবন্দর থেকে ৮টি ফ্লাইট ভিন্ন গন্তব্যে গিয়ে পৌঁছেছে।

যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিমানবন্দর থেকে ১৪টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়। তবে এই বিমানবন্দর থেকে ফিরে যাওয়া ফ্লাইটের সংখ্যা অন্যান্য বিমানবন্দরের তুলনায় অনেক কম বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। লন্ডনের গেটউইক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে ব্যর্থ হয়ে ভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া ফ্লাইট ছিল ২২টি। তবে অন্য গন্তব্যে অবতরণে ব্যর্থ হয়ে গেটউইকে এসে অবতরণ করেছে এমন ফ্লাইট ছিল ৫টি।

তুরস্ক থেকে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারের দিকে আসছিল একটি ফ্লাইট। শেষ পর্যন্ত এটিকে ফ্রান্সের লিওন এয়ারপোর্টে গিয়ে অবতরণ করতে হয়। এমন অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছে ইউরোপের আকাশপথকে।

লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করা একটি বিমানের পাইলট সিএনএনকে জানান, মাটি থেকে ৩ হাজার ফুট ওপরে প্রায় ১০৪ মাইল গতিবেগসম্পন্ন বাতাসের সঙ্গে তাঁকে লড়াই করতে হয়েছে। এতে তাঁর বিমানের গতি ঘণ্টায় গড়ে ৩৫ মাইল পর্যন্ত কমে গিয়েছিল।