খাগড়াছড়িতে গঞ্জপাড়া মাদ্রাসা’র ৩০লাখ টাকার চুক্তিতে আওয়ামীলীগ নেতার পুকুর ভরাট

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা সদর উপজেলাতে গঞ্জপাড়া আল আমিন বারিয়া মাদ্রাসা’র(এমএ হক) পাশে তিন রাস্তার মোড়ে একটি বিশালকার ৩০লাখ টাকার চুক্তিতে আওয়ামীলীগ নেতার পুকুর মাটি ভরাট চলছে। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের অর্থ সম্পাদক মো: আক্তার হোসেন।

গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নাগরিক পরিষদের ব্যানারে তিনি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি ছিলেন ছাত্রদল নেতা। হাইব্রীড আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে মিছিলও করেছেন বহুবার। কিন্তু ক্ষমতা পালা বদলেরর সাথে সাথে তার চরিত্র বদল করে হয়েছেন আওয়ামীলীগ নেতা। শুধু নেতা নয়, স¤প্রতি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের অর্থ সম্পাদক পদও ভাগিয়ে নিয়েছেন। আর সরকার দলীয় ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে তিনি স¤প্রতি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার গঞ্জপাড়া এলাকায় প্রায় ১০০শতকের পুকুর ভরাট করেছেন। যদিওবা আক্তার হোসেনের দাবি, তিনি ৩০লাখ টাকার চুক্তিতে এই পুকুর ভরাট করেছেন, এখানে কোন স্বার্থ নেই।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মাত্র এক মাস আগেও গঞ্জপাড়া আল আমিন বারিয়া মাদ্রাসা’র(এমএ হক) পাশে তিন রাস্তার মোড়ে একটি বিশাল পুকুর ছিল। এ পুকুরে মাছ চাষ হতো, স্থানীয়রা গোসল করতেন, গরমের দিনে শিশুরা দাপাদাপি করতো। কিন্তু এখন পুকুরের কোন চিহ্ন নেই। এখন যেন বিশাল এক ফুটবল মাঠ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুরো এপ্রিল মাস জুড়ে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের অর্থ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন প্রকাশ্য দিনের আলোতে বালু ও মাটি ফেলে পুকুর ভরাট করেন। খাগড়াছড়ি শহরের গঞ্জপাড়ায় এমন ঘটলেও প্রশাসন ছিলেন ঘুমে। বর্তমাণে গঞ্জপাড়ায় প্রতি গন্ডা জমি বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১৬লাখ টাকা করে। সে হিসেবে ভরাট করা একশ শতক পুকুরে বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৮কোটি টাকা। তবে এ নিয়ে স্থানীয় ক্ষোভ থাকলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহজ পাচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয়রা জানান, পুরো এপ্রিল মাস জুড়ে পুকুরটি মাটি ফেলে ভরাট করেন। শেষ মুহূর্তে প্রশাসনের বাঁধা আসায় পুকুরের সামন্য অংশ ভরাট না করে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মো: ইব্রাহিম বলেন, এখানে তাদের ১০জনের জায়গা রয়েছে। প্রত্যেকের ১০শতক করে।

তবে আব্দুল কাইয়ুম নামে জনৈক ভূমিখোকে বলেন, এখানে সব জায়গা তার একার। তিনি নিজেই ৬৮শতক জায়গার মালিক। এছাড়া মাদ্রাসার জন্য ১০শতক ও মসজিদের ১০শতক জায়গা রাখা হয়েছে।

মো: ইব্রাহিমের জায়গা থাকা প্রসঙ্গে আব্দুল কাইয়ুম বলেন, জায়গাটি কেনার সুবিধার্থে এলাকার কিছু লোককে নাম মাত্র রাখা হয়েছে। আব্দুল কাইয়ুমের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মো: ইব্রাহিম পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, আমরা কি তাহলে আব্দুল কাইয়ুমের ক্যাডার বাহিনী নাকি? শুধু বিএনপি নেতা ইব্রাহিম নয় এখানে কয়েক কোটি টাকার জায়গা ভাগভাটায়ারা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা টেড়া মুফিজসহ অনেকে প্রভাবশালী মহলের মধ্যে। তবে নেপথ্যে ছিলেন আব্দুল কাইয়ুম। যার বিরুদ্ধে ১/১১ সরকারের আমলে রাজনৈতিক নেতাদের হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে।

গঞ্জপাড়া আল-আমিন বারিয়া মাদ্রাসার(এমএ হক) সহকারী শিক্ষক মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ট্রেনিং-এ ছিলেন। ট্রেনিং-এ যাওয়ার আগে পুকুর ছিল। এসে দেখি পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এ পুকুরটি এলাকার একমাত্র পানির উৎস। মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গোসলসহ এ পুকুরের পানি ব্যবহার করতেন।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) মো: এরফার উদ্দিন বলেন, গঞ্জপাড়ায় কোন পুকুর ছিল কিনা জানা নেই। যদি কেউ অভিযোগ করেন, তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পক্ষান্তরে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ভাইস-চেয়াম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামীলীগে অর্থ সম্পাদক মো: আক্তার হোসেন বলেন, শেষ মুহূর্তে প্রশাসনের বাঁধার কারণে পুকুরের প্রায় ৫শতাংশ কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, প্রায় একশ শতক পুকুর ভরাট ও ভাগাভাগিতে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির যৌথ প্রযোজনা ছিল। তার মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও সদর উপজেলা যুবদলের আহবায়কসহ আরও অনেকে রয়েছেন। এলাকাবাসী পুকুর ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।