খাগড়াছড়িতে তিন দিনের মং সার্কেলের রাজ পূণ্যাহ শুরু

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী প্রথাগত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দায়িত্ব ব্যক্তি হেডম্যান-কার্বারীরা(মৌজা প্রধান-গ্রাম প্রধান) আঞ্চলিক সন্ত্রাসীগোষ্ঠীদের প্রভাব ও পর্যাপ্ত পরিমানে জনবল না থাকায় স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারছেন না।

সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অধিকার আদায়ের পাশাপাশি নীতিগত নিয়মে প্রথাগত এই অধিকার সমুন্নত রেখে কাজ করার জন্য মং সার্কেল(রাজা) প্রথার এই স্তর কাঠামোর গুরুর দায়িত্ব প্রাপ্তদের প্রতি আহবান জানান খাগড়াছড়ির ২৯৮নং আসনে সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।

শুক্রবার সকালে মং সার্কেল স্থায়ী কার্যালয় প্রাঙ্গণে তিন দিন ব্যাপী ৭ম রাজপূণ্যাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শুক্রবার(১০ই ডিসেম্বর) খাগড়াছড়ি সদরের মহালছড়ায় রাজার মাঠ এ উৎসব শুরু হয়।

এর আগে, সকালে দরবার হল থেকে ঐতিহ্যবাহী পোষাক পরিচ্ছেদ ও আবহে আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে রাজপূণ্যাহস্থলে আগমন করেন মং সার্কেলের চীফ রাজা সাচিংপ্রুু চৌধুরী।

পূণ্যাহ অনুষ্ঠানে পাহাড়িদের ঐহিত্যবাহী নৃত্য পরিবেশনের পর রাজপূণ্যাহ’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারত প্রত্যাগত শরনাথর্ী বিষয়ক টাস্কফোর্স’র চেয়ারম্যান(প্রতিমন্ত্রী সমমর্যাদা সম্পন্ন) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রুু চৌধুরী, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়াকে’র সভাপতি কংজরী চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম কার্বারী এসোশিয়েশনের সভাপতি রনিক ত্রিপুরাসহ সামরিক, বেসামরিক কর্মকর্তা, হেডম্যান-কার্বারী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত ভূমি ব্যবস্থাপনাকে সমুন্নত রাখা, সরকারের ১৯০০সালের আইনের শাসনবিধি(হিলট্র্যাক্ট ম্যানুয়েল) অধিকতর কার্যকর করা, হেডম্যান-কার্বারীদের সম্মানী বৃদ্ধিসহ ক্ষমতায়িত করা, হেডম্যানদের কার্যালয় নির্মাণ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়নের বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন মং সার্কেলের প্রধান রাজা সাচিংপ্রুু চৌধুরী।

রাজা সাচিংপ্রুু চৌধুরী আরো বলেন, ১৯০০সালের হিলট্রাক্টস ম্যানুয়েল অধিকতর কার্যকর পাশাপশি পার্বত্য শান্তি চুক্তির সকল ধারাসমূহ যথাযথ বাস্তবায়ন করাসহ পাহাড়ের উন্নয়নে হেডম্যান-কার্বারিদের ক্ষমতাশালী করার দাবি জানান।

আলোচনা সভা শেষে হেডম্যান, কার্বারী ও আমন্ত্রিত অতিথিরা মং সার্কেল চীফ রাজা সাচিংপ্রুু চৌধুরীকে সম্মানসূচক ঐতিহ্যবাহী নাজরানা উপঢৌকন প্রদান করেন। রাজ পূণ্যাহ উপলক্ষে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রোববার নারী হেডম্যান-কার্বারীদের সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে তিন দিন ব্যাপী রাজ পূণ্যাহ অনুষ্ঠান।

দ্বিতীয় দিন শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বার্ষিক রাজস্ব খাজনা আদায় অনুষ্ঠানে মং সার্কেল চীফ সাচিংপ্রু চৌধুরী দিনভর ৮৮টি মৌজা’র প্রধান বা হেডম্যান এবং সাত’শ একজন পাড়া প্রধান(কার্বারী)-এর কাছ খাজনা ছাড়াও বিভিন্ন উপঢৌকন গ্রহণ করবেন। এদিন রাজবাড়িতে হেডম্যান-কার্বারীদের মধ্যাহ্ন ভোজের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

রাজবাড়ি সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় দিন(১২ই ডিসেম্বর) নারী হেডম্যান ও নারী কার্বারীদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংরক্ষিত মহিলা এমপি বাসন্তি চাকমা প্রধান অতিথি থাকবেন। উপমহাদেশের সর্বকনিষ্ট রাজা সাচিংপ্রুু চৌধুরীর হাতে নজরানা ও রাজস্ব তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ই রাজপূণ্যাহ‘র মূল কর্মসূচি সূচিত হয়। এটি মং সার্কেলের অষ্টম রাজ পরিবারর ষষ্ঠ রাজপূণ্যাহ। মং সার্কেল প্রধান রাজা সাচিংপ্রুু চৌধুরী মঞ্চে আসার পর তার প্রতি আনুগত্য স্বরূপ তলোয়ার প্রদান করেন প্রজাদের পক্ষ হতে একজন হেডম্যান। 

পার্বত্য চট্টগ্রামর তিন জেলা তিন সার্কেলের আওতায়। রাঙামাটি চাকমা সার্কেল, বান্দরবান বোমাং সার্কেল ও খাগড়াছড়ি মং সার্কেল। মং সার্কলের আওতাধীন ১২১জন হেডম্যান(মৌজা প্রধান) ও ৭০০জন কার্বারি(পাড়া প্রধান) রাজার কাছে জুম(ভুমি) কর দিয়ে থাকেন।

২০০৮সালের ২২শে অক্টোবর ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি সৌদিয়া নৈশ কোচের এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বর্তমান রাজার পিতা রাজা পাইহ্লাপ্রুু চৌধুরী নিহত হবার পর তার সন্তান কম বয়সে সাচিংপ্রুু চৌধুরী রাজা নিয়োগ পেয়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন।