খাগড়াছড়ির বিভিন্ন ক্যাম্প পরিদর্শন করলেন সেনাপ্রধান

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় সেনা সদস্যদের মনোবল বাড়াতে ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ।

রোববার (১০ই জুলাই) পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে খাগড়াছড়ি রিজিয়নের বাঘাইহাট জোন পরিদর্শন করেন এবং পরে দীঘিনালা জোনের পাংখোয়া পাড়া সেনাবাহিনী ক্যাম্প পরিদর্শন করেন তিনি।

মূলত: সেনাসদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এ দুর্গম পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। জোন পরিদর্শনকালে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মকর্তা ও সৈনিকদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

দুপুরে সেনাপ্রধান বাঘাইহাট জোনে আসলে তাকে অভ্যর্থনা জানান ২৪পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং(জিওসি) মেজর জেনারেল মো: সাইফুল আবেদীন ও খাগড়াছড়ির রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম। পরিদর্শনকালে সেনাপ্রধান সকল সদস্যদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা এবং কুশলাদি বিনিময় করেন।

আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের(আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ রোববার পবিত্র ঈদুল আজহার দিন দুর্গম পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সেনা ক্যাম্পে দায়িত্বে থাকা সেনাসদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন। সেনাপ্রধান রাঙামাটি জেলার পাংখুপাড়া সেনা ক্যাম্প, বাঘাইহাট জোন সদর দপ্তর ও খাগড়াছড়ি দীঘিনালা জোন সদর দপ্তর পরিদর্শন করেন।

সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাসদস্যদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করেন। তিনি এসব ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনরত সেনাসদস্যদের সামগ্রিক খোঁজখবর নেন। এ ছাড়া তাঁদের হাতে তুলে দেন ঈদ উপহারও। নিখাদ আনন্দঘন এমন মুহূর্তে উচ্ছসিত সেনাসদস্যরাও।

সেনাবাহিনীর প্রধান প্রথমে রাঙামাটির পাংখুপাড়া আর্মি ক্যাম্পে যান। তিনি সেখান থেকে বাঘাইহাট জোন সদর দপ্তরে যান। সেখানে তিনি বলেন, ‘দুর্গম পাহাড়ে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। তাঁদের মনোবল বৃদ্ধি করতে ঈদের দিনে তাঁদের পাশে এসে দাঁড়াতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান ও ধন্য মনে করছি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশেবিদেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আত্মীয় স্বজন থেকে দূরে থেকে যাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন, এই শুভদিনে তাঁদের অভিভাবক হিসেবে দেখতে এসেছি।’

এসময় সেনাপ্রধান বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুর্গম পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে। তারা পরিবার স্বজন ছেড়ে পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় দেশের স্বাধীন সার্বভৌমত্ত্ব নিরাপত্তায় কাজ করছে। দেশের যেকোন সংকটে সেনাবাহিনীর তার অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে।

সেনাপ্রধান এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ উভয় ক্যাম্পেই গাছের চারা রোপণ করেন এবং দীঘিনালা জোনে সেনা সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উপলক্ষে আয়োজিত প্রীতিভোজে অংশ নেন।
এ সময় সেনাপ্রধান পবিত্র ঈদুল আজহার ত্যাগের মহিমায় সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে আত্মনিয়োগ করতে সেনাসদস্যদের প্রতি আহব্বান জানান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সেনাবাহিনীর প্রধান বলেন, স্থানীয় জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে সেনাবাহিনী যা যা প্রয়োজন, সব করবে।

পরে তিনি বাঘাইহাট জোন সদর দপ্তর থেকে দীঘিনালা জোন সদর দপ্তরে যান। সেখানে সৈনিক ও অফিসারদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ করেন।

এ সময় পরিদর্শনকালে সামরিক সচিব মেজর জেনারেল খালেদ আল-মামুন, ২৪পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো: সাইফুল আবেদীন, খাগড়াছড়ির রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, খাগড়াছড়ি রিজিয়নের স্টাফ অফিসার মেজর জাহিদ হাসানসহ ডিভিশন ছাড়াও সেনা সদরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, অন্যান্য সেনা কর্মকর্তারা পাংখুপাড়া আর্মি ক্যাম্প, বাঘাইহাট এবং দীঘিনালা জোনের অন্যান্য কর্মকর্তা এবং ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ঢাকাসহ সব সেনানিবাসে যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য এবং আনন্দ–উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ঈদুল আজহা পালিত হয়। সকালে সেনাবাহিনীর প্রধান ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন এবং সেখানে সেনাবাহিনীর সর্বস্তরের অফিসার, জেসিও এবং অন্যান্য পদবির সৈনিকদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

এদিকে সারাদেশে ন্যায় খাগড়াছড়িতেও পালিত হয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত ও যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ উচ্ছাসের মধ্য দিয়ে পালিত হয় দিনটি। রোববার(১০ই জুলাই) সকাল ৮টায় খাগড়াছড়ি কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান জামাত। জামাতে ইমামতি করেন খাগড়াছড়ি কেন্দ্রীয় শাহী জামে মসজিদের ঈমাম মাওলানা মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন আলকাদেরী। দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৮টায়।

এখানে নামাজ আদায় করেন, খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আবদুল আজিজ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক গোলাম মো: বাতেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোসের নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল হক ও খাগড়াছড়ি পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো: শাহ্ আলমসহ পৌর এলাকার কয়েক হাজার মুসল্লিরা অংশ নেয়।

নামাজ শেষে মোনাজাতে বিশ্ব উম্মার শান্তি কামনা ও পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রীতির জন্য আল্লাহ নিকট প্রার্থনা করা হয়। পরে জেলার ধর্মপ্রাণ সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা মহান সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনে পশু কোরবানি করেন।
এছাড়া জেলার ৯টি উপজেলার ২৯১টি ঈদগাহে এবার ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।