খাগড়াছড়ির ৯টি উপজেলাতে বর্ণিল আয়োজনে কমিউনিটি পুলিশিং ডে উদযাপন

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় “কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মূলমন্ত্র, শান্তি-শৃক্সখলা সর্বত্র” এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে বর্ণিল আয়োজনের মধ্যদিয়ে জেলা ৯টি উপজেলাতে পুলিশ ও কমিউনিটি পুলিশিং জেলা সমন্ময় কমিটি’র আয়োজনে কমিউনিটি পুলিশিং ডে ২০২২-উদযাপন করা হয়েছে।

শনিবার(২৯শে অক্টোবর)সকাল ১০টার দিকে জেলা শহরের টাউন হল প্রাঙ্গণ থেকে বেলুন উড়িয়ে শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি খাগড়াছড়ি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে টাউন হল প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। পরে খাগড়াছড়ি পুলিশ লাইন্স ড্রিলশেড সম্মেলন কক্ষে কমিউনিটি পুলিশিং ডে উপলক্ষে আলোচনা সভা, সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট বিতরণ অনুষ্ঠানে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার ও কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির প্রধান উপদেষ্টা মো: নাইমুল হক পিপিএম এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রমুখ চৌধুরী অপু।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন-অর্থ) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। এসময় খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মিছবাহুদ্দীন আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) গোলাম মো: বাতেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেএমএইচ এরশাদ, খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: শানে আলম, পরিষদের সদস্য কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া, খাগড়াছড়ি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো: আরিফুর রহমান, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সুদর্শন দত্ত, সিনিয়র সাংবাদিক তরুণ কুমার ভট্টাচার্য্যপ্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সভাপতির বক্তব্যে, খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো: নাইমুল হক পিপিএম বলেন, পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি ও অপরাধ দমনের অন্যতম কৌশল হিসেবে কমিউনিটি পুলিশিং বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ শনিবার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ দিবসটি পালন করে থাকে বাংলাদেশ পুলিশ। কমিউনিটি পুলিশিং হলো জনগণের কাছে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পুলিশের জবাবদিহিতা করা।

দেশের প্রতিটি থানায় পুলিশের সাথে জনগণের দূরুত্ব কমলে কমিউনিটি পুলিশিং সফল হবে। দেশে ঐক্যবদ্ধ সমাজ গড়তে মাদক-জঙ্গী-সন্ত্রাসমুক্ত করতে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের বিকল্প নেই। অপসংস্কৃতি নিবৃত্ত করাই কমিউনিটি পুলিশিংয়ের কাজ। কমিউনিটি পুলিশ সক্রিয় হলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক দ্রব্য, ইভটিজিং ও বাল্য বিয়ে থাকবে না। পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে এই সকল অনৈতিক কর্মকান্ড থেকে সন্ত্রাস নির্মুল করতে সক্ষম হবে পুলিশ তাই যেকোন অপরাধ সর্ম্পকে পুলিশকে সঠিক তথ্যদিয়ে সহযোগিতা করার আহবান জানান তিনি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিনিয়া চাকমা’র সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে, মংসুইপ্রমুখ চৌধুরী বলেন, জনগনই পুলিশ, পুলিশই জনগণ। তৃণমূল পর্যায়ে সকল তথ্য পুলিশকে অবগত করা সকলের দায়িত্ব। আজকে যদি আমরা মাদক মুক্ত না হয়, আজকে যদি সন্ত্রাস মুক্ত না হয়, তাহলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশের বাস্তবায়ন হবেনা। কমিউনিটি পুলিশের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে সুন্দর প্রচেষ্টায় এ জেলায় আমরা একটি সুন্দর জেলা উপহার দিতে পারি।

কমিউনিটি পুলিশের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ওপেন হাউজ ডে’র মাধ্যমে স্থানীয়দের সমস্যা নিয়ে মত বিনিময় সভা, গণসচেতনতা মূলক কার্যক্রম, অপরাধ বিরোধী সভা ইত্যাদির মাধ্যমে সমাজে অপরাধমূলক কর্মকান্ড কমিয়ে আনা। অপরাধমুক্ত রাখতে কমিউনিটি পুলিশিং এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।

তিনি আরও বলেন, পারিবারিক ও সামাজিক অনুশাসন ফিরিয়ে আনা, মূল্যবোধ নতুন করে প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু কোন কাজ হয়েছে বলে মনে হয় না। তবুও আমরা আশাবাদী এ অবস্থার উন্নতি হবে। পাশাপাশি আমরা পাড়ায়-মহল্লায় নিজ নিজ উদ্যোগে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারি। নিজেদের গ্রাম্য অপরাধমুক্ত রাখতে আমরা আইন-শৃংখলা বাহিনীর সহায়তা নিতে পারি।

আর এটা সম্ভব নিজেদের এলাকায় কমিউনিটি পুলিশিং আন্দোলন আরো জোরদার করা। পুলিশের পক্ষে সবকিছুর ওপর নজরদারি রাখা অনেক সময় সম্ভবপর হয়ে ওঠেনা। এ জায়গায় আমরা সহায়তাকারীর ভূমিকা নিতে পারি। পাড়ায়-মহল্লায় অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই।

কমিউনিটি পুলিশিং ডে অনুষ্ঠানে, ২০২২সালে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি পুলিশিং অফিসার ও শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি পুলিশিং সদস্যদের মাঝে সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এসময় ১জন শ্রেষ্ঠ পুলিশিং অফিসার ও ১জন শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি পুলিশিং সদস্যের হাতে সম্মাননা স্বারক ক্রেস্ট তুলে দেন প্রধান অতিথি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রমুখ চৌধুরী অপু ও খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো: নাইমুল হক পিপিএম।