খাগড়াছড়ির ৯টি উপজেলায় করেনাকালীন জনবল ও সরঞ্জাম সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মহামারি কোভিড়-১৯ করেনাকালীন ৯টি উপজেলায় জনবল ও সরঞ্জাম সংকটে স্বাস্থ্যসেবা চরম ব্যাহত হচ্ছে।

এককথায় জেলায় দীঘিনালা, পানছড়ি, মহালছড়ি, মাটিরাংগা, গুইমারা, রমাগড়, মানিকছড়ি, লক্ষীছড়ি ও সদর উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা অত্যান্ত নাজুক। পর্যাপ্ত জনবল ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ অঞ্চলের মানুষ। টেকনিশিয়ান সংকটের কারণে এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনসহ অধিকাংশ যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। কোনো কোনো উপজেলা হাসপাতালে বন্ধ রয়েছে অপারেশন কার্যক্রম। দুর্গম পাহাড়ি এলাকার করোকালিন ওমিক্রন আর্বিভাব হলে মানুষের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি হবে। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও পর্যাপ্ত সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হয় তাদের।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের পাহাড় অভিযোগ খাগড়াছড়িতে চিকিৎসক সংকটে সেবা চরম ব্যাহত হচ্ছে। করোনাকালেও জেলা ৯টি উপজেলাতে প্রয়োজনের অর্ধেক চিকিৎসক ও নার্স নিয়ে চলেছে স্বাস্থ্যসেবা। বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। জেলা আধুনিক সদর হাসপাতাল থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত ৯টি উপজেলার একই চিত্র। জেলাতে ১২৯জন চিকিৎসকের মঞ্জুরি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ৭৪জন। ২২৫জন নার্সের বিপরীতে আছেন ১১৫জন।

সরেজমিনে ঘুড়ে দেখা যায়, খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতাল কাগজে-কলমে এক’শ শয্যার হলেও ৫০শয্যার জনবলে চলছে ১০বছরের বেশি সময় ধরে। ২০জন চিকিৎসকের বিপরীতে জরুরি বিভাগসহ ৪জন মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য। চিকিৎসকের পাশাপাশি শূন্যপদ রয়েছে নার্স ও ব্রাদার্স।

হাসপাতাল সূত্র মতে, সার্জারি, অ্যানেস্থেসিয়া এবং গাইনীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোও শূন্য। ফলে ছোট ধরনের অপারেশন ও সম্ভব হচ্ছে না এখানে এবং মাতৃত্বকালীন বা প্রসূতিসেবা এমনকি ঝুকি ডেলিভারিও সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে বর্হিঃবিভাগের রোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা প্রদানেও সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। জুনিয়র কনসালটেন্ট-সার্জারি, মেডিসিন, গাইনি, অ্যানেস্থেসিয়ার অনুমোদিত পদ কিছু থাকলেও অধিকাংশ পদই দীর্ঘদিন ধরেই শূন্য হয়ে আছে। ফলে অপারেশনসহ দুর্ঘটনা কবলিত গুরুত্বপূর্ণ রোগীদের প্রত্যন্ত উপজেলা স্থানান্তর থেকে আসে খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে। এর ওপর করোনাকালীন সময়ে করোনার পরীক্ষা এবং টিকা প্রদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাড়তি কাজও করতে হচ্ছে কর্মরতদের।

বিশেষ সূত্রে জানা যায়, জুনিয়র কনসালটেন্ট(সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট(মেডিসিন) জুনিয়র কনসালটেন্ট(গাইনি) জুনিয়র কনসালটেন্ট(অ্যানেস্থেসিয়া) এবং আরএমও এসব বিভাগে একটি করে অনুমোদিত পদ থাকলেও অধিকাংশ পদই শূন্য রয়েছে। এছাড়া মেডিকেল অফিসারের ১২টি পদ থাকলেও রয়েছেন মাত্র ৫জন, ৭টি পদই শূন্য। আরো শূন্য পদের মধ্যে রয়েছে সিনিয়র স্টাফ নার্স ৬জন, স্যাকমো ১জন, ফার্মাসিস্ট ২জন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট(ল্যাব) ১জন, স্টোর কিপার ১জন। স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ২টি পদের ২টিই শূন্য রয়েছে। শূন্য পদে আরো আছে, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ২জন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ৩জন, স্বাস্থ সহকারী ১৫জন, সহকারী নার্স ১জন এবং এমএলএসএস/অফিস সহায়ক ৪জন।

এদিকে ৯টি উপজেলা পর্যায়েও চিকিৎসক সংকটের একই চিত্র। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাত্র তিনজন চিকিৎসক দিয়ে রোগীদের চিকিৎসাসেবা চলছে। প্রতিদিন এখানে সেবা নিতে আসে অন্তত ৩থেকে ৪শ রোগী। দীঘিনালা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রাংগামাটি জেলার লংগদু, বাঘাইছড়ি উপজেলা ও পর্যটন নগরী সাজেক থানা থেকে রোগীরা এখানে সেবা নিতে আসেন। চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। মোটকথা দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০জন চিকিৎসকসহ ৪৮টি পদই খালি। একই সমস্যা জেলার সব উপজেলায়।

দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: তনয় তালুকদার জানান, দীঘিনালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। আশাকরি দ্রæুত এ সমস্যার সমাধান করবেন। জেলার দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০জন চিকিৎসকসহ গুরুত্বপূর্ণ ৪৮টি পদ শূন্য রয়েছে। ফলে চিকিৎসা সেবা প্রদানে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকা কর্মকর্তাদের। আর উপজেলাবাসী বঞ্চিত হচ্ছে জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সেবা থেকে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: তনয় তালুকদার আরো জানান, চিকিৎসার সংকট উত্তরণে শূন্যপদের তালিকা প্রেরণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলা হয়েছে। সমস্যা সমাধানে আশ্বাসও দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আশাকরি কিছুদিনের মধ্যে যে সমস্যা চলছে তা সমাধান হবে।

পানছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: অনুতোষ চাকমা বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের সংকট দীর্ঘদিনের। আমরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। আমাদেরকে দ্রæুত এ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।

জনবল সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতার বিষয়টি স্বীকার করে খাগড়াছড়ি জেলা সিভিল সার্জন ডা: নুপুর কান্তি দাশ জানান, জনবল সংকটে রোগীদের কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ সংকট নিরসনে দ্রæুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, পর্যটন এলাকা রাঙ্গামাটির সাজেকসহ রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা এবং লংগদু উপজেলার একাংশ এলাকার মানুষ সড়ক যাতায়াতের সুবিধার কারণে যে কোন গুরুত্বপুর্ন চিকিৎসা সেবার জন্য দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয়।