খাগড়াছড়ি মানিকছড়ি পুরাতন রাজবাড়ি নানুমা দেবী দরবার হল ফলক উম্মোচন

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় মং সার্কেল রাজা(চীফ) পুরাতন রাজবাড়ি মানিকছড়ি উপজেলায় পার্বত্য চট্টগ্রামের মং সার্কেল ও রাজতন্ত্রের ইতিহাস বহুকাল পুরনো। রাজবাড়ি নানুমা দেবী দরবার হল শুক্রবার(১৪ই এপ্রিল) বিকেলে বীরমুক্তিযোদ্ধা মং সার্কেল মংপ্রুসেইন ফাউন্ডেশন উদ্যোগে আনুষ্ঠানিক ফলক উম্মোচন করা হয়েছে।

প্রধান অতিথি হিসেবে ফলক উম্মোচন ও রাজাবাড়ি পরিদর্শন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারত প্রত্যাগত শরনার্থী বিষয়ক টাস্কাফোর্স’র চেয়ারম্যান(প্রতিমন্ত্রী সমমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য কল্যান মিত্র বড়ুয়া, এড. আশুতোষ চাকমা, আব্দুর জব্বার, মো: মাইন উদ্দিন, মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: জয়নাল আবেদীন, সহকারী কমিশনার(ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেড রুম্পা ঘোষ, ওসি আনচারুল করিম, বীরমুক্তিযোদ্ধা মং সার্কেল মংপ্রুসেইন ফাউন্ডেশন’র চেয়ারম্যান কুমার সুইচিংপ্রু চৌধুরী, খাগড়াছড়ি রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি চাইথোয়াই মারমা, বান্দরবানে বোমাং সার্কেলের নেত্রী ডনাইপ্রু নেলী, কুমার মেয়ে ডালিয়া চৌধুরী, মানিকছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান শফিক, ৪নং যোগ্যাছোলা ইউপি চেয়ারম্যান ক্যয়জরী মহাজন প্রমূখ। এতে মারমা নেতৃবৃন্দের পাশাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের সাড়ম্বর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
প্রধান অতিথি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি পরিদর্শন বহি স্বাক্ষর করার আপ্যায়ন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে রাজবাড়ি নানুমা দেবী দরবার হল ও প্রাচীন ভবনগুলো সংস্কারের ফলে নতুন রূপে সেজেছে রাজবাড়ি। অন্যদিকে উপজেলায় ত্রিপুরারা বৈসু, মারমা জনগোষ্ঠীরা সাংগ্রাই, চাকমারা বিজু ও বাঙালিরা বৈশাখিতে নববর্ষ উৎসব পালন করে থাকেন। যাকে এ বাক্যে বলা যায়’ বৈসাবিন’।

১৭৯৬সাল রাজা কংজঅংয়ের রাজত্বকাল থেকে রাজ পরিবারের ধারাবাহিক ইতিহাস ঐতিহ্যের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। ১৮৮৩সালে রাজবাড়ির অদূরে খালের ওপারে মহামুনি টিলায় প্রথম বুদ্ধমূর্তি স্থাপনের মধ্যদিয়ে বুদ্ধমেলার যাত্রা শুরু হয়। এবার মেলার ১৩৯তম আসর। ফলে এই বুদ্ধ মেলা ও বাংলা নববর্ষ বরণে ঐতিহ্যে ঘেরা মং রাজবাড়ি, মহামুনি চত্বর ও ত্রিমৈত্রী বটমূলে সাজানো হয়েছে নতুন আলপনায়। সংস্কার ও রংচুনে নতুন রূপে সেজেছে রাজবাড়ীও।

এদিকে খাগড়াছড়ি মং সার্কেলের ঐতিহ্যবাহী মহামুনি বিহার চত্বরে ১৩৯তম’ বুদ্ধ মেলা’ ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ১৪ই এপ্রিল শুক্রবার সকাল-বিকেল পাহাড়ি-বাঙালি মিলন মেলায় অসা¤প্রদায়িক চেতনার চিত্র ফুটে উঠবে। ”এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’, শ্লোগানে মুখরিত হবে পাহাড়ি-বাঙালির মেলনবন্ধন।

মহামুনি টিলার বুদ্ধ মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি কুমার নিপ্রু সাইন বলেন, ১৮৮৩সালে মিয়ানমার থেকে অষ্টধাতুর তৈরি একটি ‘বুদ্ধ মূর্তি’ এখানে স্থাপন করা হয়। বুদ্ধ মূর্তির স্থাপন কালটি মঘাব্দ চন্দ্র মাসের প্রথম দিন হওয়ায় মারমা জনগোষ্ঠীরা এ দিনটিতে ‘বুদ্ধ মেলা’ হিসেবে পালন করে আসছে। এ বছর মেলার ১৩৯তম বছর। ফলে পহেলা বৈশাখ বা ১৪ই এপ্রিলের এ মেলায় এবার মানুষের বাঁধভাঙ্গা জোয়ারে পরিণত হবে। খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবানসহ পাহাড়-সমতলের ২০/২৫ হাজার মানুষের বাঁধভাঙ্গা জোয়ারে মাতোয়ারা হয়ে উঠছে মেলা প্রাঙ্গন ও রাজবাড়ি এলাকা। ফলে প্রাচীন রাজপ্রাসদের বিভিন্ন ভবনে রংচুনের কাজে ফুটে উঠেছে।

এদিকে উপজেলা প্রশাসন ১৪৩০বর্ষবরণে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে ত্রিমৈত্রী বটমূলে। রংতুলির আঁচড়ে নতুন, নতুন আলপনা আকাঁ হয়েছে অফিসপাড়া ও বটমূলে।
মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) রক্তিম চৌধুরী বলেন, আবহমান বাংলার চিরাচরিত বাংলা নববর্ষ বরণে পাহাড়ে হরেকরকম অনুষ্ঠানাদি হয়ে থাকে। যা অসা¤প্রদায়িক স¤প্রীতিকে আরও মজবুত করে। ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীরা বিভিন্ন নামে বৈসু, সাংগ্রাই, বিজু নামে সপ্তাহব্যাপি পাড়া, মহল্লায় অনুষ্ঠানে মুখরিত রাখেন। এ বছর উপজেলা প্রশাসন ও মারমা জনগোষ্ঠীর আয়োজনে বর্ষবরণে শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বুদ্ধ মেলায় জনস্বাতে সম্প্রীতির চিত্র ফুটে উঠেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের মং সার্কেল ও রাজতন্ত্রের ইতিহাস যুগ-যুগান্তরের। ১৭৯৬সালে রাজা কংজয়ের রাজত্বকাল থেকে রাজ পরিবারের ধারাবাহিক ইতিহাস ঐতিহ্যের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। ১৮৮৩সালে রাজবাড়ির অদূরে খালের ওপারে মহামুনি টিলায় প্রথম বুদ্ধমূর্তি স্থাপনের মধ্য দিয়ে বুদ্ধ মেলার যাত্রা শুরু হয়। এবার মেলার ১৩৯তম আসর। ফলে এই বুদ্ধ মেলা ও বাংলা নববর্ষ বরণে ঐতিহ্যে ঘেরা আদি মং রাজবাড়ির প্রাচীন স্থাপনায় রং চুনে নবরূপ ধারণ করেছে।