‘খাদ্য অধিকার আইন’ প্রণয়নের দাবিতে সাতক্ষীরায় নাগরিক সংলাপ

‘খাদ্য অধিকার আইন’ প্রণয়নের দাবিতে সাতক্ষীরায় নাগরিক সংলাপ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে উক্ত নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

উন্নয়ন সংগঠন প্রগতি ও খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি), বাংলাদেশ আয়োজিত এ নাগরিক সংলাপে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ক্যাব সাতক্ষীরার উপদেষ্টা সাবেক অধ্যক্ষ আবদুল হামিদ।

‘প্রগতি’র (পিপলস রিসার্স অন গ্রাসরুট ওনারশীপ এন্ড ট্রাডিশনাল ইনিসিয়েটিভ) প্রধান নির্বাহী ও জলবায়ু পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহীর সঞ্চালনায় নাগরিক সংলাপে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরার প্রবীণ সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরী, জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মো. আনিসুর রহিম, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এ্যাড. আবুল কালাম আজাদ, মানববাধিকার কর্মী পবিত্র মোহন দাশ, সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রাসেল, ‘স্বদেশ’র নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক হারুন-উর-রশিদ প্রমুখ।

নাগরিক সংলাপে বক্তারা বলেন, খাদ্যের অধিকার শুধুই রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক অধিকার নয় বরং মানবাধিকারের অংশ। মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের ২৫ এর (১) অনুচ্ছেদে খাদ্য অধিকারের বিষয় ¯পষ্ট করে বলা আছে। তবে এই অধিকার শুধুমাত্র ক্ষেত্র বিশেষে জরুরি অবস্থায় খাদ্যের সরবরাহ যোগান নয়, বরং আইনী কাঠামো ও ফলপ্রসূ কৌশলের মাধ্যমে সকলের জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তা প্রদান ও সবসময় খাদ্য ও পুষ্টির সরবরাহের অধিকার নিশ্চিত করাকে বোঝায়। যেহেতু খাদ্যের অধিকার একটি মানবাধিকার, তাই নাগরিকের খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সেটি করতে হলে খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়নের কোন বিকল্প নেই।

বক্তারা আরও বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা সূচক-২০২০ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১০৭ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৫; যেখানে বাংলাদেশ ক্ষুধা সূচকে ‘গুরূতর মাত্রা’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। দেশে প্রায় ৪ কোটি মানুষ পুষ্টিহীনতার শিকার এবং প্রায় ৪৪ শতাংশ নারী রক্ত স্বল্পতায় ভোগেন।

নাগরিক সংলাপের অতিথিরা আরও বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল দুর্গম এলাকার দলিত, আদিবাসী, বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও শহরের নি¤œআয়ের মানুষের মধ্যে পুষ্টিহীনতা বেশি। করোনাকালে এই অবস্থা আরও গুরূতর আকার ধারণ করেছে। লকডাউন চলাকালীন সময়ে দেশের শহরাঞ্চলে মানুষের ৪৭ শতাংশ ও গ্রামের মানুষের ৩২ শতাংশ খাবারের পরিমাণ কমেছে। সরকারি তথ্য মোতাবেকই দেশের প্রায় পৌনে ৪ কোটি মানুষ (দরিদ্র ২১.৮ শতাংশ) পর্যাপ্ত খাবার গ্রহণ করতে পারতেন না। যা সরাসরি মানবাধিকারের স্খলন।

নাগরিক সংলাপের আগে সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের সকল মানুষের জীবিকা, খাদ্য এবং পুষ্টির নিরাপত্তা অধিকার-মানবাধিকার নিশ্চিত করতে ‘খাদ্য অধিকার আইন’ প্রণয়নের দাবিতে পোস্টার প্রদর্শনী ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।