গতিপথ পাল্টেছে ‘ইয়াস’: ঝুঁকি কম, তবুও মোকাবেলায় সবধরনের প্রস্তুতি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ গতিপথ পাল্টেছে। ঘূর্ণিঝড়টি কলকাতা হয়ে উড়িষ্যার দিকে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশ অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তবে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকার লাখ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি ঠেকাতে নেয়া হয়েছে সবধরনের প্রস্তুতি।

সোমবার রাতে সবশেষ খবর অনুযায়ী, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ একই এলাকায় (১৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি অক্ষাংশ এবং ৮৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে) স্থির হয়ে আছে। অনুকূল আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বুধবার ভোর নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূলের কাছে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় পৌঁছাতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সতর্ক দেখাতে বলা হয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসাথে তাদেরকে গভীর সমুদ্রে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যায় ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, গত ছয় ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ঘণ্টায় সাত কিলোমিটার বেগে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়েছে। এটা আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী ১২ ঘণ্টায় শক্তি সঞ্চয় করে ইয়াস প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে। পরের ২৪ ঘণ্টায় আরও শক্তি নিয়ে হয়ে উঠবে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর প্রভাবে সোমবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। এতে গত কয়েক দিন ধরে চলা তাপপ্রবাহ কিছুটা প্রশমিত হযেছে। আগামী দুই দিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

ঝুঁকি না থাকলেও প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ বর্তমান গতিপথ অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা খুবই কম। তবে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেশে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’

তবে সরকারের প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াসকে আমরা কঠোর পর্যবেক্ষণে রেখেছি। এটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের পর্যবেক্ষণ অব্যাহত থাকবে। যদি কোনো কারণে এটি দিক পরিবর্তন করে তাহলে আমরা আমাদের জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাব। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জনগণকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ইনশাল্লাহ, আল্লাহ যেভাবে আমাদের বাংলাদেশের প্রতি রহমত করেছেন, দয়া করেছেন সেটা অব্যাহত থাকলে এবার হয়তো ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে পারবো। আমরা প্রতি চার বা ছয় ঘণ্টা পরপর মনিটরিং করবো। এরপরে যদি গতিবেগ আরও বাড়ে তারপরে আমরা ঘণ্টায় ঘণ্টায় সংবাদ দিতে পারবো। আপনারা সে সব সংবাদ পরিবেশন করবেন যাতে জনগণ কোনো রকম ভুল বা ঢিলেমি করার সুযোগ না পায়।’

এদিকে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান সোমবার দুপুরে বিভাগীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বিভাগের ছয় জেলার কর্মকর্তাদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠকে জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে চার হাজার ৯৯৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ঝুঁকিপ্রবণ এলাকার ২০ লাখ লোককে যাতে তাৎক্ষণিক নিরাপদে সরিয়ে আনা যায়, সে লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে যাতে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত না হয়, সেদিকেও খেয়াল রেখে বিশেষ ব্যবস্থাপনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এদিকে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজন বোধ করলে জনসাধারণকে তাৎক্ষণিক আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে।