গরুর মুখোশ পরে যে কারণে ছবি তুলছেন ভারতীয় নারীরা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভারতীয় নারীদের এক ধরনের ছবি বেশ অালোড়ন তুলেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে গরুর মুখোশ পরে ছবি তুলছেন তারা। বিভিন্ন জায়গায় এমন ভঙ্গিতে তাদের ছবি তোলার অাসল রহস্য কী?

ভারতীয় সমাজে নারীরা আসলে কতোটা অবহেলা আর নিরাপত্তাহীনতার শিকার, তা তুলে ধরতেই এ ধরনের অভিনব প্রতিবাদ করছেন।

এই ফটোগ্রাফি প্রজেক্ট শুরু করেছেন ভারতের ২৩ বছর বয়সী ফটোগ্রাফার সুজাত্র ঘোষ। তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন গো-রক্ষার নামে ভারতে যা ঘটছে, তা দেখে। সমাজের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে তার প্রশ্ন ভারতের মেয়েরা কি গরুর চেয়েও অধম?

সুজাত্র ঘোষ বলেন, মেয়েদের তুলনায় আমাদের দেশে গরুকে যে এতো বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়, সেটা দেখে আমি বিচলিত। এখানে একজন মেয়ে ধর্ষিত বা লাঞ্ছিত হওয়ার পর বিচার পেতে যে সময় লাগে, তার চেয়ে অনেক দ্রুত বিচার পায় একটি গরু। কারণ হিন্দুরা এই গরুকে পবিত্র মনে করে।

তিনি আরও বলেন, ধর্ষণের মামলা চলতে থাকে বছরের পর বছর। অথচ একটি গরু জবাই করা হলে, হিন্দু চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো তখনই সন্দেহভাজনদের ধরে পিটিয়ে মারে।

গত দুই বছরে তথাকথিত হিন্দু গো-রক্ষকদের হাতে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো প্রমাণ ছাড়া, শুধু গুজবের ভিত্তিতে মুসলিমদের ওপর এসব হামলা চালানো হয়। এমনকি গরুর দুধ পরিবহনের কারণেও মুসলিমদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। বিষয়গুলোর প্রতিবাদে এই ফটোগ্রাফির আয়োজন বলেও জানান সুজাত্র।

ভারতের নানা জায়গায় তিনি গরুর মুখোশে নারীর ছবি তুলেছেন। রাস্তায়, আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনের সামনে, ট্রেনে, নৌকায়, ঘরে। নারী যে আসলে ভারতের কোথাও নিরাপদ নয় সেই বার্তা তুলে ধরাই ছিল তার প্রধান উদ্দেশ্য।

বন্ধু,পরিচিতজনদেরকেই ছবির মডেল হিসেবে ব্যবহার করেছেন তিনি। তিনি মনে করেন, এটি এমন এক স্পর্শকাতর বিষয় যে অপরিচিতদের গরুর মুখোশ পরে ছবির জন্য পোজ দিতে বলা খুব কঠিন। সেকারণে আমার পরিচিতদের নিয়েই কাজটি করেছি।

দুই সপ্তাহ আগে তার এসব ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করার পর ভাইরাল হয়ে পড়ে। তবে সংবাদ হওয়ার পর থেকেই পাল্টা প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করে। অনেকেই তাকে হুমকি দেয়া শুরু করে। টুইটারে লোকজন তাকে নিয়ে ট্রল করতে শুরু করে। এমনকি ফটোগ্রাফার এবং তার মডেলদের দিল্লির জামে মসজিদে নিয়ে জবাই করারও দাবি ওঠে। অভিযোগ ওঠে দাঙ্গায় উস্কানি দেয়ারও। বিবিসি বাংলা।