গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে হস্তান্তরের আগেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে ফাটল

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে মুজিবর্ষে ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর হস্তান্তরের আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রথম পর্যায়ের তুলনায় ঘর নির্মাণে প্রায় দ্বিগুণ বরাদ্দ বাড়ালেও বাড়েনি কাজের মান। ফলে হস্তান্তরের আগেই ঘরের বিভিন্ন অংশে দেখা দিয়েছে ফাটল। প্রায় ৬ মাস পূর্বে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়। উক্ত ঘর নির্মাণে নানা অনিয়ম সহ নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় পর্যায়ে উপজেলায় ভূমিহীন পরিবার পূনর্বাসনের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৮০টি ঘর নির্মাণের বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিটি ঘরের বিপরীতে ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ ছিল প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সেই তুলনায় তৃতীয় পর্যায়ে ঘর নির্মাণে প্রায় দ্বিগুণ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু বরাদ্দকৃত ঘর নির্মাণে ইট, খোয়া, বালু, সিমেন্ট, কাঠ সহ যেসব সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে তা অত্যান্ত নি¤œমানের। যার ফলে ঘরের বিভিন্ন অংশে দেখা দিয়েছে ফাটল।

এতে সুবিধাভোগিদের মাঝে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। সম্প্রতি কিছু ঘর হস্তান্তরের আগেই মেরামতও করা হয়েছে। কিন্তু এতেও আশানুরুপ ফল মেলেনি।
এছাড়া সুবিধাভোগিদের কাছ থেকে ঘর নির্মাণে ভিত্তি প্রস্তর খনন, ঘরে মাটি ভরাট এবং নির্মাণ শ্রমিকদের খাবার সরবরাহ করতে বাধ্য করা হয়। এতে করে প্রতিটি সুবিধাভোগিদের কায়িক পরিশ্রম সহ প্রায় ১০/১২ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলার কামদিয়া ইউনিয়নের বইলগ্রাম বস্তাহার গ্রামে সরকারি খাস পুকুরপাড়ে দীর্ঘদিন ধরে শতাধিক ভূমিহীন পরিবার বসবাস করে আসছে। মুবিজবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে উক্ত ভূমিহীনদের বসবাসের লক্ষে উপজেলা প্রশাসনের বাস্তবায়নে ৫৪টি ঘর নির্মাণ করা হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উল্লেখিত স্থানে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের বিভিন্ন অংশে দেখা দিয়েছে ফাটল। নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণ নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন সুবিধাভোগিরা।

সুবিধাভোগি নাজনীন বেগম ও আব্দুর রহিম জানান, তাদের মাটির ঘর ছিল। সেগুলোটি ভেঙে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই ঘর হস্তান্তরের আগেই দেখা দিয়েছে ফাটল। তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মাটির ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছি। মাটির ঘরই ভালো ছিল। অন্যদের ঘরেরও একই চিত্র। ফলে সুবিধাভোগিদের মাঝেও দেখা দিয়েছে অসন্তোষ।

আরেক সুবিধাভোগি নাজমা বেগম জানান, নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে ঘর ফেটে গেছে। এই ঘরে বসবাস করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন নড়বড়ে ঘর দিবে জানলে নিতাম না। তিনি বলেন, আমরা আগে মাটির ঘরেই ভালো ছিলাম।

অপরদিকে, উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের কন্দবপুর নামকস্থানে প্রায় ৩২টি ঘর নির্মাণ করা হয়। সেখানেও নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্মাণ শ্রমিক বলেন, ভালো মন্দ বলতে গেলে আর কাজে নেবেনা। আমাদের যেসব সামগ্রী দেয়া হয় তা দিয়েই কাজ করি। এখানে আমাদের করার কি আছে।

প্রায় ১বছর আগে দ্বিতীয় পর্যায়ে একই এলাকায় ২১টি ঘর নির্মাণ করা হয়। বছর না পেরোতেই ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। ফলে তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, এই প্রকল্পের সভাপতি ইউএনও সাহেব। আপনারা তার সঙ্গে কথা বলেন।
ঘর নির্মাণে অনিয়ম বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অস্বীকার করছিনা। তবে যেহেতু ঘরগুলো হস্তান্তর করা হয়নি। সেহেতু ঘরগুলো প্রয়োজনে মেরামত করে দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় এ পর্যন্ত মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৮৫০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। সেইসাথে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শতভাগ ভূমিহীন উপজেলা ঘোষণা করা হয়।