গাইবান্ধা-৩ আসনে আওয়ামী লীগ জাপা’ ও বিএনপির- সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তৎপরতা

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্যান্য এলাকার ন্যায় গাইবান্ধা-৩ আসনে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আগাম তৎপরতা থেমে নেই। সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমে পড়েছেন ভোট প্রার্থনায়। ৩১, গাইবান্ধা-৩ নির্বাচনী আসন পলাশবাড়ী ও সাদুল্লাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। পলাশবাড়ীর ১ পৌরসভা ৮ ইউনিয়ন এবং সাদুল্লাপুরে ১১ ইউনিয়ন নিয়ে নির্বাচনী আসন। এ আসনে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা মোট ৫ লাখ ২১ হাজার ২শ’ ৭ জন। এতে পুরুষ ২ লাখ ৬১ হাজার ১শ’ ১৩ জন ও মহিলা ২ লাখ ৬০ হাজার ৭৬ জন এবং হিজরা ১৮ জন।

এ আসনটি’তে অন্যান্য দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের চেয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সংখ্যা বেশি। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যেই বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, পোষ্টার লাগানো ছাড়াও স্ব-স্ব সমর্থিত নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী আসনের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্ট ছাড়াও তৃণমূল পর্যায়ে গণসংযোগ, ছোট-খাঠো বৈঠকসহ ভোটারদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হচ্ছেন। এসময় প্রার্থীরা তাদের অতীত-বর্তমান ব্যক্তি ইমেজ, রাজনৈতিক অর্জন ও দুরদর্শিতা তুলে ধরে ভোট প্রার্থনা করছেন। এ আসনে সবসময় দল বা জোটের প্রার্থীই হোক না কেন তাদের অধিকাংশরই পরিচিতি অতিথি। রাজনৈতিক অর্জন না থাকলেও শুধু দলীয় প্রার্থী হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন। এবারো ঠিক তেমনি অতিথি প্রার্থীদের আনা গোনাই বেশি। এবারের নির্বাচনে তৃণমুল পর্যায়ের ভোটাররা জানান, যে দলেরই প্রার্থী হোক না কেন সে যেন স্থানীয় নতুন মুখ হয়।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিসহ প্রায় ১৪ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম জোরে-শোরে শোনা যাচ্ছে। এছাড়াও বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের ৩, জাপা ২, জামায়াতে ইসলামী ১ জন, জাসদ ১ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ১জনসহ মোট ২৫ জন প্রার্থী তাদের ব্যক্তি ও রাজনৈতিক অর্জন তুলে ধরে এলাকার তৃণমূল পর্যায়ে অব্যাহত জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ আসনে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীরা। প্রার্থীরা গ্রাম পর্যায়ের হাট-বাজার গুলোতে ভোটারদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে শুধু আলিঙ্গন-কুশল বিনিময়ই সীমাবদ্ধ রেখেছেন। প্রার্থীরা এখন থেকেই তাদের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে জেলা-বিভাগ ছাড়াও কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতা পর্যায়ে বেশ জোরে-শোরে লবিং শুরু করেছেন। এ আসন থেকে প্রায় ১৪ জন প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। প্রার্থীরা ভোট প্রার্থনা কালে তারা নিশ্চিত নৌকার মাঝি হবেন বলে মত ব্যক্ত করছেন। এ আসনে বর্তমান এমপি অ্যাড. উম্মে কুলসুম স্মৃতি আবারো মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা যায়। তবে এ আসনে নির্বাচনী আসনের দলীয় অধিকাংশ নেতাকর্মী ছাড়াও সচেতন ভোটাররা এ আসনে এবার স্থানীয় নতুন কোন মুখ প্রত্যাশা করছেন।

ভুক্তভোগী নেতাকর্মী সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড কাকে মনোনয়ন দিবেন-কে মনোনয়ন পাবেন-তা এখনো নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। নৌকার প্রতি ভরসা রেখে যারা নিজেদের প্রার্থী হিসেবে মাঠ পর্যায়ে কম-বেশি জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা হলেন বর্তমান এমপি বাংলাদেশ কৃষকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. উম্মে কুলসুম স্মৃতি, পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ও দু’বারের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব একেএম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার (অব.) মাহামুদুল হক, বীরমুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) মফিজুল হক সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাবেক সভাপতি আবু বকর প্রধান, বর্তমান সভাপতি উপাধ্যক্ষ শামিকুল ইসলাম সরকার লিপন, সাধারণ সম্পাদক মহদীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. তৌহিদুল ইসলাম মন্ডল, কেন্দ্রীয় জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক গবেষক ড. নির্মল চন্দ্র সাহা, জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য অ্যাড. জরিদুল হক, উপজেলা আ’লীগ সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. আব্দুস সোবহান ও আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক আজিজুর রহমান সরকার।

সাদুল্লাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উপজেলা আ’লীগ সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব শাহারিয়ার খান বিল্পব, সাদুল্লাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সহিদুল্যাহেল কবির ফারুক ও দড়ি জামালপুর রোকেয়া সামাদ দ্বি-মুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আজিজার রহমান বিএসসি। সংসদের বিরোধী দল জাতীয়পার্টির সাবেক মন্ত্রী এ নির্বাচনী আসনের ৬ বারের এমপি মরহুম ড. টিআইএম ফজলে রাব্বি চৌধুরী সুযোগ্য সন্তান ইঞ্জিনিয়ার মইনুর রাব্বী চৌধুরী রুমান ও জাপা’র কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাড. মমতাজ উদ্দিন।

এদিকে; জাতীয়তাবাদীদল (বিএনপি) থেকে গাইবান্ধা জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের সাবেক পরিচালক ডা. মইনুল হাসান সাদিক, জেলা বিএনপি’র উপদেষ্টা মো. রফিকুল ইসলাম রফিক এবং সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা ড. মিজানুর রহমান মাসুম।

এছাড়াও জেলা জামায়াতের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক পলাশবাড়ী উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাওছার মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম লেবু, জাপা’র সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির প্রিসিডিয়াম সদস্য ও পার্টি চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের রাজনৈতিক উপদেস্টা ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার শিল্পী, জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটি অন্যতম নেতা সাদুল্লাপুর উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এসএম খাদেমুল ইসলাম খুদি, কৃষকশ্রমিক জনতা লীগ জেলা সভাপতি অ্যাড. মোস্তফা মনিরুজ্জামান, আমেরিকা প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার আবু জাহিদ নিউ ও পলাশবাড়ী বঙ্গবন্ধু সাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক বজলার রহমান রাজা।

উল্লেখ্য; এ আসনটি বিগত ১৯৮৬ সাল থেকে টানা ৩০ বছর জাতীয়পার্টির দখলে ছিল। ২০১৪ সাল পর্যন্ত টানা ৬ বার এ আসনের সংসদ সদস্য ড. টিআইএম ফজলে রাব্বি চৌধুরী এমপি ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি এ আসনে ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী জাতীয়পার্টির (জাফর) কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়।

এ আসনের ৬ বারের এমপি সাবেক মন্ত্রী ড.টিআইএম ফজলে রাব্বি চৌধুরী নির্বাচনে অংশগ্রহণ কালীন সময় ২০১৮ সালের ২১ ডিসেম্বর রাতে মারা যান। ২০১৪ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. ইউনুস আলী সরকার এমপি নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ডা. ইউনুস আলী সরকার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডা. মো. ইউনুস আলী সরকারের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা হয়।

পরবর্তীতে এ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে অ্যাড. উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি নির্বাচিত হয়। এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর অনেক ভোট এবং সমর্থক রয়েছেন। এ আসনটি জাতীয় পার্টি ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল।