ঘুমের জন্য হলেও মেসিকে বিশ্বকাপ জিততে হবে!

অনেকেরই অভিমত, সর্বকালের সেরা হতে হলে লিওনেল মেসিকে অন্তত একটা বিশ্বকাপ জিততে হবে। সর্বকালের সেরার প্রসঙ্গ বাদ দিন। এবার জানা গেল, ভালোমতো ঘুমাতে চাইলেও মেসিকে বিশ্বকাপ জিততে হবে! দূরের কেউ নন। নতুন এই থিওরিটা বিশ্ববাসীকে দিলেন মেসিরই স্বদেশি হুয়ান মার্টিন দেল পোত্রো।

মেসির মতো মহাতারকা হয়তো নন। তবে দেশ আর্জেন্টিনায় হুয়ান মার্টিন দেল পোত্রোও বড় তারকা। ২০১৬ সালে এই দেল পোত্রোর হাত ধরেই আর্জেন্টিনা ইতিহাসে প্রথম বারের মতো ঘরে তুলে ডেভিস কাপের শিরোপা। ২৯ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন এই টেনিস তারকা স্পষ্টই বললেন, শান্তিমতো ঘুমাতে চাইলে মেসিকে অবশ্যই বিশ্বকাপ জিততে হবে!

দেল পোত্রোর এই কথার অর্থ, মেসি এখন শান্তি মতো ঘুমাতে পারেন না। কেন? কারণটা বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্টই। ২০১৪ বিশ্বকাপের পর ২০১৫ ও ২০১৬ কোপা আমেরিকা। ফুটবলের টানা তিনটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে হেরেছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।

টানা তিনটি ফাইনালে হার স্বাভাবিকভাবেই আর্জেন্টাইনদের জন্য চরম হতাশার। তবে সবচেয়ে বেশি হতাশ বুঝি হয়েছিলেন মেসিই। বারবার তীরে এসে তরী ডোবায় তিনি এতোটাই মুষড়ে পড়েন যে, ২০১৬ সালে কোপা আমেরিকার শতবর্ষী আসরে হারের পর হতাশায় ভেঙে পড়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরই নিয়ে ফেলেন মেসি।

তবে দেশবাসীর অনুরোধে হুট করে নেওয়া সেই ‘অবসর’ থেকে মেসি আবার আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরে এসেছেন বটে। তবে এখনো রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। বিছানায় গেলেই মনের কোণের সেই হতাশা-কষ্ট চাঙ্গা হয়ে উঠে।

না, মেসি নিজের এই না ঘুমানোর কথা স্বদেশি দেল পোত্রোকে মুখ খুলে বলেননি। দেল পোত্রো নিজের অভিজ্ঞতার আয়নাতেই দেখতে পান মেসির নির্ঘুম রাত কাটানোর ছবি!

ডেভিস কাপের একটা শিরোপা জয়ের জন্য কতই না হাপিত্যেশ করতে হয়েছে আর্জেন্টাইনদের। বিশ্ব টেনিসের সবচেয়ে মর্যাদার এই দলগত টুনামেন্টে বেশ কয়েকবারই শিরোপার কাছাকাছি পৌঁছে যায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু প্রতিবারই শেষ পর্যন্ত পুরতে হয় স্বপ্নের ভঙ্গের বেদনায়। দেশের সবচেয়ে বড় টেনিস তারকা হিসেবে দেল পোত্রোকে কেন্দ্র করেই আর্জেন্টাইনদের স্বপ্নটা দানা বাঁধে বেশি। কিন্ত দেল পোত্রো কিছুতেই দেশবাসীর স্বপ্নটা পূরণ করতে পারছিলেন না।

অবশেষে ২০১৬ সালে অধরা সেই স্বপ্নকে ধরে ফেলে আর্জেন্টিনা। ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৩-২ ব্যবধানে হোরিয়ে প্রথম বারের মতো ডেভিস কাপের শিরোপা জেতে আর্জেন্টনা। যাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন দেল পোত্রো।

২০০৯ সালের ইউএস ওপেনজয়ী দেল পোত্রো নিজেই বলেছেন, ২০১৬ সালের ওই শিরোপা জয়ের আগে রাতে ভালোমতো ঘুমাতে পারতেন না। বিছানায় গেলেই শিরোপা জিততে না পারার হতাশ চেপে ধরত। রাত কাটাতে হতো বিছানায় এপাশ ওপাশ করে।

ডেভিস কাপের শিরোপা না জিতেই যদি তার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়, তাহলে টানা তিনটি ফাইনাল হারের পর মেসি আরামে ঘুমান কি করে। নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে দেল পোত্রোর তাই রায়, মেসিও রাতে শান্তিমতো ঘুমাতে পারেন না! সুখের ঘুম ঘুমাতে হলে মেসিকে ঝাটিয়ে বিদায় করতে হবে মনে স্থায়ী হয়ে যাওয়া হতাশা। জিততে হবে বিশ্বকাপ।

দেল পোত্রো আশাবাদী, ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের পরই মেসি শান্তিমতো ঘুমাতে পারবেন! কারণ, তার বিশ্বাস, রাশিয়ায় ঠিকই বিশ্বকাপ জিততে পারবেন মেসিরা। স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মার্কাকে দেওয়া সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে দেল পোত্রো স্পষ্টই বলেছেন, ‘অনেক দিন ধরেই মেসি বিশ্বের সেরা। কিন্তু আমি মনে করি, শান্তিমতো ঘুমানোর জন্য তাকে একটা বিশ্বকাপ জিততে হবে। ডেভিস কাপে আমার ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটেছে। ২০১৬ সালের আগে যে শিরোপাটা আমরা কখনোই জিততে পারিনি।’

রাশিয়াতেই মেসির বিশ্বকাপ জয়ের আজন্ম স্বপ্ন পূরণ হবে জানিয়ে বলেছেন, ‘মেসির যে ক্যারিয়ার, সেই হিসেবেও একটা বিশ্বকাপ জেতা দরকার। বিশ্বকাপশূন্যতাটা তার কারিয়ারের সঙ্গে ঠিক যায় না। আশা করি, এ বছর রাশিয়াতেই সে এটা জিততে পারবে। আমি জানি, বিশ্বকাপের জন্য সে কতটা সংগ্রাম করছে। একটা বিশ্বকাপ জেতাটা তার পাওনাও।’

মেসি পারবেন রাশিয়ায় বিশ্বকাপ জিতে নিজের বাকি জীবনের জন্য শান্তির ঘুমের ব্যবস্থা করতে?