চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা, অবশেষে প্রতারকচক্র গ্রেফতার

পিরোজপুরে চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অভিনব কায়দায় প্রতারণা, অবশেষে প্রতারক চক্রের ২ সদস্য গ্রেফতার।

জানাযায়, মাহাবুব হাওলাদার নামের এক প্রতারক পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়ার মোঃ মানিক মিয়ার ছেলে সিয়াম মিয়া ও একই থানার আব্দুর রব হাওলাদারের ছেলে ইব্রাহীম হাওলাদারকে কারারক্ষী পদে চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

বিশ্বস্তসুত্রে জানাযায়, প্রতারক মাহাবুব হাওলাদার সিয়াম ও তার বন্ধু ইব্রাহিমকে জেল কারারক্ষী পদে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে টাকা দাবি করেন এবং সে মোতাবেক কিছু টাকা গ্রহণ করেন। প্রতারক মাহাবুব হাওলাদার মোঃ সিয়াম মিয়া ও তার বন্ধু মোঃ ইব্রাহীম দের সাথে ১০,০০,০০০ (দশ লক্ষ) টাকা চুক্তিতে কারারক্ষী সিপাহী পদে চাকুরী দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর, সিয়াম মিয়ার পিতা মোঃ মানিক মিয়া তার ছেলের ভবিষ্যতের দিকে তাকাইয়া বিভিন্ন আত্নীয় স্বজনের নিকট হইতে টাকা ধার এবং গাছপালা বিক্রয় করে টাকা সংগ্রহ করেন। গত ১২ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখ সকাল অনুমান ১০.০০ ঘটিকার সময় মোঃ নজরুল ইসলাম এর দোকানে প্রতারক মাহাবুব হাওলাদার আসলে মোঃ নজরুল ইসলাম সরল মনে ২,৫০,০০০ (দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা দিলে প্রতারক মাহাবুব নিজ হাতে তা গ্রহণ করেন। অবশিষ্ট ৭,৫০,০০০ (সাত লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা মোঃ নজরুল ইসলাম এর ছেলে চাকুরীতে যোগদান করার পর নেবেন বলে জানান। গত ০১ জানুয়ারী ২০২২ তারিখ বেলা অনুমান ১১.৩০ ঘটিকার সময় প্রতারক মাহাবুব হাওলাদার জনৈক মোঃ ইব্রাহীম হাওলাদার এর বাড়ীতে যান এবং নগদ ৫,০০০ (পাঁচ হাজার) টাকাসহ ইসলামী ব্যাংক ভান্ডারিয়া শাখার ইব্রাহীম হাওলাদার এর মাতা মিনারা বেগম এর সঞ্চয়ী হিসাব নং- ০৯৬৩৮০১ থেকে ৪,০০,০০০ (চার লক্ষ) টাকা এবং ৩,০০,০০০ (তিন লক্ষ) টাকাসহ সর্ব মোট ৭,০০,০০০ (সাত লক্ষ) টাকার ০২ টি (দুই) চেক প্রতারক মাহাবুব গ্রহণ করেন।

প্রতারক মাহাবুব ভু্ক্তভুগী পরিবারকে আশ্বাস দেয়, আগামী ০২(দুই) মাসের মধ্যে আপনাদের ছেলেরা চাকুরীতে যোগদান করবে। যদি চাকুরী দিতে ব্যর্থ হই তবে উভয় পক্ষকে সকল টাকা ও চেক ফেরত দিব। প্রতারক মাহাবুব ধার্য তারিখের মধ্যে চাকুরী না দিয়া তাহাদের সাথে বিশাস ভঙ্গের মাধ্যমে প্রতারণা করে সকল টাকা আত্নসাৎ করেন। ভুক্তভোগীরা টাকা ও চেক ফেরত চাইলে প্রতারক মাহাবুব দিতে অস্বীকার করেন।

উল্লেখিত বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে মীমাংসা না হওয়ায় মোঃ নজরুল ইসলাম মানিক মিয়া ভান্ডারিয়া থানায় নিজের স্বাক্ষরিত ০১ (এক) টি এজাহার দায়ের করলে ভান্ডারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ উল্লেখিত বিষয়ে ভান্ডারিয়া থানার মামলা নং- ২৩, তারিখ- ২৫ জুলাই ২০২২ খ্রিঃ, ধারা-৪০৬/৪২০ পেনাল কোড রুজু করেন এবং মামলাটির তদন্ত ভার এসআই (নিঃ) মোঃ আশিকুল ইসলাম এর উপর অর্পণ করেন। তদন্তকারী কর্মকতা এসআই (নিঃ) মোঃ আশিকুল ইসলাম তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ও বিশ্বস্থ সোর্স নিয়োগ করে প্রতারক মাহাবুব হাওলাদারকে খুলনা সদর, সোনাডাঙ্গা, লবনচড়া ও হরিণটানা থানা এলাকায় একটানা তিন দিন অভিযান পরিচালনা করে ইংরেজী ২৭ জুলাই ২০২২ তারিখ রাত ০০.৩০ ঘটিকার সময় হরিণটানা থানাধীন বনলতা আবাসিক এলাকার ডাঃ মিজানুর রহমান এর বাসা হতে আত্নগোপনে থাকা প্রতারক মাহাবুবকে গ্রেফতার করেন।

প্রতারক মাহবুবকে মামলার ঘটনা সংক্রান্তে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি প্রতারক চক্রের সদস্য আরিফুল ও মনির এর নাম-ঠিকানা প্রকাশ করেন। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ পরস্পর যোগসাজসে ঢাকা, খুলনা, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহরে অবস্থান করে নিরীহ ও সহজ সরল লোকদেরকে কারারক্ষী পদে চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল।

প্রতারক মাহবুব এর তথ্যের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে নিয়ে ডিএমপির পল্টন, খিলগাঁও, উওরা পশ্চিম, মীরপুর, শাহআলী থানা এলাকায় একটানা আরো ০২ দিন অভিযান পরিচালনা করে ইংরেজী ২৯ জুলাই ২০২২ ইং তারিখ সকাল ১০.৩০ ঘটিকার সময় উওরা পশ্চিম থানাধীন উওরা রাজউক কমার্শিয়াল মার্কেটের সামনে হতে প্রতারক চক্রের আরেক সদস্য মনির হোসেন (৩৫), পিতা- মৃতঃ আবু তাহের মৃধা, গ্রাম- গাজী মাহামুদ, থানা ও জেলা-বরগুনাকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাকে জিজসাবাদে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়।

ইতিপূর্বে চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারক মাহবুব ১৭ জনের সাথে প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত ব্যাংক চেক ও চুক্তিনামা উদ্ধার করা হয়েছে।