ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বের ‘শর্ট লিস্ট প্রস্তুত’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বের শর্ট লিস্ট প্রস্তুত। বুধবার ছাত্রসংগঠনটির নতুন কমিটি ঘোষণা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

এদিন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব পদপ্রত্যাশীদের ডেকেছেন। তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে সেদিনই কমিটি দেবেন বা কমিটি ঘোষণার দিকনির্দেশনা দেবেন তিনি।

গত ১১ মে ছাত্রলীগের ২৯ জাতীয় সম্মেলন হয়। এরপর ৫৪ দিন অতিবাহিত হলেও হয়নি কমিটি। সাংগঠনিক ইতিহাসে ২৯তম এই জাতীয় সম্মেলনের পরই কমিটি গঠনে বিলম্বের নজির স্থাপন হয়েছে। এতে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম থেমে না থাকলেও বেশ ছন্দপতন হয়েছে। মধুর ক্যান্টিন আর পার্টি অফিস থেকে আড্ডা ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন দরবারে। নেতৃত্বে আসছে শিথিলতা।

এরপরও কমিটি গঠনে ছাড় দিতে নারাজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা। তার ইচ্ছা- আওয়ামী পরিবার থেকে নেতা বানাবেন। এ বিষয়টি একাধিবার প্রকাশ্যে বলেও দিয়েছেন তিনি। সে অনুযায়ী বার বার গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে পদপ্রত্যাশীদের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন।

সম্প্রতি জানা গেছে, সব খোঁজ-খবর নেয়া শেষ। কমিটিও প্রায় চূড়ান্ত। সভাপতি-সম্পাদক হিসেবে মনোনয়নের জন্য ৭/৮ জনের একটি শর্ট লিস্টও হয়েছে। এরমধ্যে থেকে সভাপতি-সম্পাদক মনোনয়ন দেয়া হবে। সে অনুযায়ী তালিকায় চট্টগ্রাম ও রংপুরে বিভাগের একাধিক ছাত্রনেতার নাম ওঠে এসেছে।

বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক পদপ্রার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে প্রায় তিনশ’ ছাত্রনেতার উদ্দেশে কমিটি গঠন, সংগঠন পরিচালনা ও আগামী নির্বাচন নিয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন তিনি।

ওই বৈঠকেই কমিটি গঠন হতে পারে, বা পরদিন ঘোষণা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে শেখ হাসিনার বাইরে কারো কাছে এর বেশি তথ্য নেই, বা থাকলেও শেয়ার করতে চাইছেন না নেতারা।

২৯তম জাতীয় সম্মেলনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরিফুর রহমান লিমন জানান, ‘৪ জুলাই সন্ধ্যা ৬টায় ছাত্রলীগের শেষ আশ্রয়স্থল বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের সঙ্গে গণভবনে সরাসরি কথা বলবেন, যা একজন ছাত্রলীগ কর্মীর কাছে পরম পাওয়া। কমিটি কেমন হবে, কারা আসবে, এবং আমাদের করণীয় কী হবে- এসব বিষয়ে নেত্রীই পরামর্শ দেবেন। এই সংগঠনে তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’

বুধবারের বৈঠকে কমিটি গঠন হবে কিনা বা হলেও কারা আসতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘(বুধবার) সভাপতি-সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের ডেকেছেন আমাদের সাংগঠনিক নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে কী হবে, কমিটি হবে কিনা- এসব কিছুই আমরা জানি না। তবে উনি (শেখ হাসিনা) আমাদের যেভাবে পরামর্শ দেবেন আমরা সেভাবেই কাজ করব।’

প্রসঙ্গত, গত ১১ মে ছাত্রলীগের ২৯ জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী ও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এদিন তিনি ছাত্রলীগের কমিটি সমঝোতার মাধ্যমে দেয়ার কথা বলেন। একই সঙ্গে নেতাদের বয়সসীমা ২৮ বছর নির্ধারণ করে দেন।

এরপর যথারীতি দ্বিতীয় দিনের কাউন্সিল অধিবেশন হয়। সেদিন ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন না করেই সমাপ্তি ঘোষণা করেন সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব কম সময়ের মধ্যে নতুন কমিটি উপহার দেব।’

ওই সময় জানানো হয়েছে, ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ প্রার্থীদের তালিকা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে জমা দিয়েছেন। তিনি পরবর্তীতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিলে কমিটি করা হবে।

পরে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে পদপ্রত্যাশীদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক মনোনয়নের জন্য ৭/৮ জনের একটি তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। এরমধ্যে পারিবারিক পরিচয়, সাংগঠনিক প্রজ্ঞা, মেধা ও যোগ্যতা এবং গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।