ছেলের জীবন বাঁচাতে দুবাইয়ে গিয়ে কিডনি দিলেন মা

এক অক্ষরের একটি শব্দ ‘মা’। অথচ এই শব্দের ব্যাপ্তি যে কতটা বিশাল তা একমাত্র সন্তানই জানে। সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য একজন ‘মা’ যে তার নিজের জীবন উৎসর্গ করতে পারেন তা আবারও প্রমাণ করলেন সালেহা বেগম (৪৪)।

নিজের জীবনের বিনিময়ে একমাত্র সন্তানের জীবন বাঁচিয়েছেন এমন অনেক মা আজও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এমনই দৃষ্টান্ত গড়েছেন মৌলভীবাজারের বড়লেখার ওই মা।

ছেলের জীবন বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, নাড়িছেঁড়া ধনকে বাঁচাতে বাংলাদেশ থেকে তিনি ছুটে গিয়েছেন সংযুক্ত আরব-আমিরাতে। সন্তানকে বাঁচাতে ছুটে যাওয়া ওই মা সালেহা বেগম মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা পৌরসভার পাখিয়ালা গ্রামের প্রবাসী ফখর উদ্দিনের স্ত্রী।

বুধবার সন্ধ্যায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি হাসপাতালে মায়ের দেয়া কিডনি ছেলের শরীরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেছেন চিকিৎসকরা।

বর্তমানে মা ও ছেলে দুজনেই সুস্থ রয়েছেন বলে স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে।

স্বজন, প্রতিবেশী ও প্রবাসী সূত্র জানায়, বেলাল আহমদ (২৮) প্রায় ৬ বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি তার বাবার সঙ্গে থেকে একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। কিন্তু বেলাল দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। কিডনি ডায়ালাইসিস করেও তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। সম্প্রতি চিকিৎসকরা বেলালকে জানান তার দুটি কিডনিই একেবারে অকেজো হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় চিকিৎসকরা তাকে কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন।

এদিকে বেলালের দুটি কিডনি নষ্ট হওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন দেশে রেখে যাওয়া তার মা সালেহা বেগম। এই অবস্থায় নিজের জীবনের কথা চিন্তা না করে একটি কিডনি ছেলেকে দেয়ায় সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ছেলের কিডনির সঙ্গে মিলে যাওয়ায় সালেহা বেগম সংযুক্ত আরব-আমিরাতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
অবশেষে বুধবার আমিরাতে আবুধাবি শেখ খলিফা হাসপাতালের চিকিৎসকরা মায়ের দেয়া একটি কিডনি ছেলের শরীরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হন।

আমিরাত প্রবাসী বেলালের মামাতো ভাই মুহিবুর রহমান বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করে মোবাইল ফোনে জানান, বেলালের দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। পরে ফুফু (বেলালের মা) তাকে একটি কিডনি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বেলালকে কিডনি দিতে ফুফু কয়েক মাস আগে দেশ থেকে এখানে এসেছেন।

তিনি জানান, বুধবার সন্ধ্যায় আরব-আমিরাতের একটি হাসপাতালে অপারেশনের মাধ্যমে বেলালের শরীরে কিডনি সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। মা ও ছেলে দুইজনেই সুস্থ রয়েছেন।

মুহিবুর রহমান বলেন, নিজের কথা চিন্তা না করে একজন মা ছেলেকে বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি দিয়ে যে দৃষ্টান্ত গড়েছেন তা সত্যিই বিরল। আসলে সন্তানের জন্য সব মা-ই যে সব কিছু ত্যাগ করতে পারেন তিনি তা আবারও প্রমাণ করলেন।