জ্বলছে রাখাইন, বাড়ছে লাশ

মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইনে গত এক সপ্তাহের সহিংসতায় অন্তত ৪০০ জন নিহত হয়েছে। গত কয়েক দশকের মধ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত এই অভিযান ভয়াবহ অাকার ধারণ করেছে। শুক্রবার নতুন এক পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

জাতিসংঘের সূত্রগুলো বলছে, মিয়ানমার থেকে সম্প্রতি প্রায় ৩৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। রাখাইনে পুলিশি তল্লাশি চৌকি ও সেনাবাহিনীর ঘাঁটিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সেখানে সেনাবাহিনী কঠোর অভিযান শুরু করেছে। এই অভিযান শুরুর পর থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের দিকে পালিয়ে আসছেন।

শুক্রবার জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা তাদের সর্বশেষ পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে বলেন, ‘৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৩৮ হাজার মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।’

মিয়ানমার সেনাবাহিনী বলছে, তারা চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ পরিচালনা করছে। একই সঙ্গে বেসামরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলবাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার এই অভিযানের লক্ষ্য হলো রোহিঙ্গাদেরকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া।

মিয়ানমারের রাখাইনে ১১ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস হলেও দীর্ঘদিন ধরে তারা সেখানে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। দেশটির নেত্রী অং সান সু চির নীরব ভূমিকার সমালোচনা করেছেন পশ্চিমারা সমালোচকরা। জাতিসংঘ বলছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনের চেষ্টা চালাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার মিয়ানমার সেনাবাহিনী বলছে, সংঘর্ষ এবং সেনাবাহিনীর কঠোর অভিযানের ফলে ৩৭০ রোহিঙ্গা বিদ্রোহী, নিরাপত্তাবাহিনীর ১৩ সদস্য, সরকারি দুই কর্মকর্তা ও ১৪ বেসামরিক নিহত হয়েছে।

রাখাইনের সাম্প্রতিক এই সহিংসতা ২০১২ সালের একই ধরনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে ছাড়িয়ে গেছে। ওই সময় রাখাইনের রাজধানী সিতোয় সহিংসতায় প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা নিহত আরো এক লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা গৃহহীন হয়ে পড়ে।

গত শুক্রবার পুলিশি চৌকিতে হামলার পর থেকে রাখাইনে সরকারি বাহিনী ব্যাপক অভিযান শুরু করে। সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানে বিচারবহির্ভূত বেসামরিক হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। রাখাইনে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রবেশে কড়াকড়ি রয়েছে, ফলে সেখানে কি ঘটছে তার পরিষ্কার কোনো চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না।

মানবিক সহায়তা কর্মীরা রাখাইনের রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, বুলেট ও আগুনের ভয়াবহ ক্ষত তুলে ধরছেন। রোহিঙ্গারা বলছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে নারী ও তরুণীরা গণধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। তাদের হাজার হাজার বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে।

সূত্র : রয়টার্স।