জ্বালানি তেলের দামের প্রভাব পড়বে বিদ্যুতে

আট মাসের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি বেড়েছে ৩১ ডলার, যা গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বর্তমানে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৮০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। এর প্রভাবে লোকসান গুণতে শুরু করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। ইতোমধ্যে সংস্থাটি বিকল্প ভাবতে শুরু করেছে।

তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, জ্বালানি তেলের দাম না বাড়িয়ে বিপিসির উচিত তাদের লভ্যাংশ থেকে ভর্তুকি দেওয়া। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালে প্রভাব পড়বে বিদ্যুতের মূল্যের ওপর।

বিপিসি সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ৪৯ ডলার।

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তা বেড়ে হয়ে যায় ৬১ ডলার। চার মাস পর জুনের মাঝামাঝি আরো বেড়ে ৭১ ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়।

সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি হয় ৭৫ ডলার। এরপর ধীরে ধীরে বেড়ে এখন ৮০ ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ বছরে মাত্র ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করে। বাকি চাহিদা মেটাতে পরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়।

অপরিশোধিত তেলের দামের ওপর ভিত্তি করেই সব ধরনের জ্বালানির দাম নির্ধারিত হয়। তাই অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিশোধিত তেলের দামও আনুপাতিক হারে বাড়ছে। এখন বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকায় তেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালাতে হচ্ছে।

ফলে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি পেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বাড়বে। সুতরাং এর প্রভাবে বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম।

এরইমধ্যে আর্ন্তজাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের ওপর। লোকসান গুনতে শুরু করেছে বিপিসি। সংস্থাটির গত ১১ অক্টোবরের হিসাবে দেখা যায়, প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রিতে ১৩ টাকা ৬০ পয়সার মতো লোকসান হচ্ছে। ফার্নেস অয়েল বিক্রিতে লোকসান যাচ্ছে ৮ টাকা ৫০ পয়সার মতো।

বিপিসি হিসাব অনুযায়ী, দৈনিক গড়ে ১২ হাজার ৮০০ টন ডিজেল বিক্রি করে তেল বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলো। একইসঙ্গে দুই হাজার টন ফার্নেস অয়েল বিক্রি হয়। অর্থাৎ প্রতিদিন ডিজেল বিক্রিতেই ১৯ কোটি ৯ লাখ টাকা এবং ফার্নেস অয়েল বিক্রিতে ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। মাসে প্রায় ৬০০ কোটি আর মূল্যবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে বছরে ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো লোকসান হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জ্বালানি বিভাগ বলছে, তারা এখনো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তেলের দাম যদি আবারো কমতে শুরু করে তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আর বাড়তে থাকলে বিকল্প চিন্তা করা হবে। সেক্ষেত্রে সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে জ্বালানি তেল বিক্রি করতে হবে, নয়তো মূল্যবৃদ্ধির কোনো বিকল্প থাকবে না।