টাকাও বেশি দেবো গ্যাসও পাবো না, এ কেমন বিচার!

‘সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। ধীরে ধীরে আসলেও পুরো আসতে আসতে দুপুর দেড়টা বাজে। ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খাইয়ে পরিবার সদস্যদের অফিসে-স্কুলে পাঠাতে পারি না। আবার রাত সাড়ে আটটার দিকে গ্যাস চলে যায়, সাড়ে দশটা এগারোটার দিকে আসে। আগুনে তাপ না থাকায় আধাঘন্টার ভাত হতে একঘন্টা লাগে। বাচ্চাদের জন্য পানি গরম করি ইলেক্ট্রিক কেটলিতে। এরমধ্যে দু মাস পর পর যদি গ্যাসের দাম বাড়ে কেমনটা লাগে! টাকাও বেশি দেবো আবার গ্যাসও নিয়মিত পাব না, এটা কেমন দেশ, এ কেমন বিচার?’

পূর্ব রাজাবারের দুই সন্তানের মা বুশরা বেগম এসব অভিজ্ঞতার কথা বলেন। তিনি সরকারের উদ্দেশে প্রশ্ন ছোঁড়েন, ‘কেন গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো, আমার ব্যবহারের পরিমাণ তো বাড়েনি? আমাদের কোনও প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কেউ নাই। তারা যা ইচ্ছা করছেন। অথচ আমার দুপুরের রান্না শেষ করতে করতে সাড়ে চারটা বাজে। দুপুরের খাবার খাই বিকেল বেলায়।’

বৃহস্পতিবার থেকে দ্বিতীয় ধাপে কার্যকর হচ্ছে গ্যাসের বাড়তি দাম । বাড়তি দাম কার্যকর হয়ে যাওয়ার কারণ জানেন না বেশিরভাগ রাজধানীবাসী। অথচ দ্বিতীয় দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর নির্দেশ কার্যকর হওয়ায় দুই চুলার গ্যাসের দাম পড়বে ৯৫০ টাকা আর এক চুলার গ্যাসের দাম ৯০০ টাকা। যদিও উভয় চুলার গ্যাসের দামের ব্যবধান মাত্র ৫০ টাকা এবং প্রায় এক হাজার টাকা দিয়েও গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত হবে কিনা সেসব নিয়েই সাধারণ মানুষের শঙ্কা। আর দাম বাড়ার কারণে এ মাস থেকেই বাড়ি ভাড়া বেড়েছে নিম্ন আয়ের জনগণের।

একই বিষয়ে জানতে কথা হয় রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বরের বাসিন্দা ইফফাত আরার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শীতের সময় সাধারণত গ্যাসের সমস্যা বেশি হয়। কিন্তু এবার শীত গ্রীষ্মের পার্থক্য পেলাম না। এরই মধ্যে গ্যাসের দাম দুই দফায় বাড়লো। আমাদের আয়তো বাড়েনি, এ কথা কাকে বলবো? গ্যাস, পানি হ্যানো ত্যানো বিল দিতে দিতেই হাতে কিছু থাকে না। বাসায় গত ১৫ দিন ধরে পানি নেই।’ তিনি আক্ষেপ নিয়ে আরও বলেন, ‘আমাদের বলে দেওয়া হলো এক চুলা নয়শ’ দুই চুলা সাড়ে নয়শ’। কিন্তু, কিসের ভিত্তিতে সেটি কি আমাকে জানানো হবে না? প্রথম রোজার দিন ইফতারির সময় গ্যাস পেলাম না বলে কেবল চিড়া দই দিয়ে ইফতার করতে হয়েছে। এরপরও কেউ কোনও প্রতিবাদ করলো না।’

মিরপুরের মোল্লাপাড়ায় থাকেন গার্মেন্টস শ্রমিক রেশমা বানু। গত মাসে তাদের বাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্যাসের দাম বাড়ানো, হাইকোর্টে নিষেধাজ্ঞা থাকা বা এখন কী হলো যে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হলো এসবের কিছুই তার জানা নেই। বাড়িঅলা গতমাসেই তাকে বলেছে গ্যাসের দাম বাড়ায় তিনশ টাকা বেশি দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে সকালে একবেলা একটু রান্নার সুযোগ পাই। গত দুই মাস ধরে তাও পারি না। সকালে গ্যাস থাকে না। ভোররাতে উঠে দুইঘন্টা ধরে এক তরকারি আর ভাত রান্না করতে পারি। এরইমধ্যে গ্যাস চলে যায়।’

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ভোক্তা পর্যায়ে দুই দফায় গ্যাসের দাম বাড়িয়েছিল। দুই ধাপে তারা আট খাতে গড়ে ২২.০৭ শতাংশ দাম বাড়িয়েছিল। প্রথম দফার দাম কার্যকর হলেও আদালতের রায়ে আটকে যায় দ্বিতীয় দফার দাম। শেষ পর্যন্ত চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ উঠিয়ে দিলে এর সুযোগ নিয়ে ১ জুন থেকে দ্বিতীয় দফায় আবারও গ্যাসের দাম বাড়ায় বিইআরসি।-বাংলা ট্রিবিউন