টাকা নিয়ে ব্যাংক থেকে বের হলেই ডিবি পরিচয়ে তুলে নিতেন মাইক্রোবাসে

সাধারণ গ্রাহকের ছদ্মবেশে ব্যাংকের ভেতরে অবস্থান করতো কয়েকজন। ভেতরে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনকারীদের তথ্য জেনে কৌশলে তাদের অনুসরণ করা হতো। এরপর বাইরে অপেক্ষমানদের টার্গেট করা ব্যক্তির তথ্য সরবরাহ করা হতো।

ব্যাংক থেকে বের হওয়া মাত্র গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে ভুয়া পোশাকধারীরা টার্গেট করা ব্যক্তিকে তুলে নিতেন মাইক্রোবাসে। এরপর টার্গেট করা ব্যক্তির সঙ্গে থাকা টাকাসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করে সুবিধাজনক স্থানে তাকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যেতেন ভুয়া ডিবি পরিচয়ের ডাকাত দল।

সোমবার (১ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। এ সময় ডিবি পুলিশের নতুন পোশাক পরিধান করে উপস্থিত হন গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তারা।

সংবাদ সম্মেলনে হারুন অর রশীদ বলেন, সম্প্রতি ব্যাংকে যারা বড় বড় লেনদেন করছেন, তাদের টার্গেট করে ডিবি পরিচয়ে অপহরণ করে নগদ টাকা লুণ্ঠন করছে ভুয়া ডিবি পরিচয়ের ডাকাত দল।

সুনির্দিষ্ট এমন অভিযোগের ভিত্তিতে রোববার (৩১ জুলাই) রাজধানীর মতিঝিল ১১/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড এলাকায় আসল ডিবির নতুন পোশাক পরে অভিযান চালিয়ে ভুয়া ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি কাজে জড়িত দলের ছয়জনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিম।

গ্রেফতাররা হলেন- ফরিদ উদ্দিন (৫০), মো. পারভেজ (৩৫), সাইফুল ই নাদিম (৩০), শফিকুল ইসলাম ওরফে বাবুল (৫০), মো. জসিম (৩৪) ও মো. নাছির (৩৮)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ডিবি পুলিশ লেখা তিনটি জ্যাকেট, একটি হাতকড়া, একটি লাঠি (স্টেইনলেস স্টিলের), দুটি হোলস্টার, তিনটি খেলনা পিস্তল, একটি ওয়াকিটকি (খেলনা), ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বিভিন্ন নামের অ্যাকাউন্টের পাঁচটি চেক বই, একটি নোয়াহ্ মাইক্রোবাস, ও একটি ‘পুলিশ’ লেখা স্টিকার জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে হারুন অর রশীদ জানান, গ্রেফতাররা সাধারণ গ্রাহকের ছদ্মবেশে ব্যাংকে প্রবেশ করে টাকা লেনদেনকারীদের কৌশলে অনুসরণ করতো। অধিক টাকা লেনদেনকারী ও সহজ সরল গ্রাহকদের টার্গেট করে তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য বাইরে অপেক্ষমান ডাকাত দলের সদস্যদের নিকট মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হতো।

‘এরপর টার্গেট করা ব্যক্তি ব্যাংক থেকে বের হওয়া পর্যন্ত তাকে অনুসরণ করতো দলের সদস্যরা। এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তি বাইরে আসামাত্র ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মাইক্রোবাসে তুলে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে যেতো তারা।’

‘ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তিকে গাড়িতে উঠিয়ে ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তার সঙ্গে থাকা টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী লুণ্ঠন করে নিতো চক্রটি। এরপর রাস্তায় সুবিধাজনক স্থানে গাড়ি থেকে তাকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যেতো তারা। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় একটি মামলা হয়েছে।’