ঠাকুরগাঁওয়ে শহীদদের স্মরণে জমি বিক্রির টাকায় তালগাছ রোপণ করেন বৃদ্ধ খোরশেদ

মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে ও অগাধ ভালোবাসায় বয়সের কাছে হার না মেনে ৮০ পেরুলেও ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলটি নিয়ে প্রতিদিনি ছুটে চলেন দূর দুরান্তের রোগীদের কাছে, বীরদর্পে বিলিয়ে চলেছেন গ্রাম্য চিকিৎসকের সেবা।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি রয়েছে খোরশেদ আলীর অগাধ শ্রদ্ধা। তাই মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের স্মরণে তার নিজ ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন এলাকার সড়ক গুলিতে রোপণ করেছেন প্রায় ৫২ হাজার তালগাছের চারা। তার ইচ্ছা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত যেন ১ লাখ তালগাছ লাগিয়ে যেতে পারেন। বয়স যে আসলে একটি সংখ্যা মাত্র তা প্রমান করে দিয়েছেন ঠাকুরগাঁও জেলার বৃদ্ধ খোরশেদ আলী।

সরজমিনে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের দুই ধারে লাগানো গাছের পরিচর্যা করছেন তিনি। এভাবে গত এক যুগে ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন সড়কে অসংখ্য তাল গাছ গুলো লাগিয়েছেন তিনি। এই কাজ করতে গিয়ে নিজের কৃষি জমি পর্যন্ত বিক্রি করতে হলেও থেমে যাননি খোরশেদ আলী। তালের আঁটি কেনা, চারা কেনা, চারা রোপন ও চারার পরিচর্যার মত কাজ তিনি করে চলেছেন জমি বিক্রির ব্যক্তিগত টাকায়।

খোরশেদ আলীর সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের পাহাড়ভাঙ্গা এলাকায় তার বাড়ি। স্ত্রী আর ৭ ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে তার সংসার। আয়ের উৎস বলতে কেবল নিজের অল্প কিছু কৃষি জমি আর পল্লী চিকিৎসা দিয়ে যতটুকু অর্থ উপার্জিত হয় সেটুকুই। এ দিয়েই চলে তার সুখের সংসার।

বৃদ্ধ বয়সে মহৎ এ উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে খোরশেদ আলী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে যাদের আত্মত্যাগের জন্য আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি সেই সব বীর শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় আমি এই উদ্যোগ নিয়েছি। একই সঙ্গে মানুষ যাতে বজ্রপাত থেকে রক্ষা পায় তাই সড়কের দুই ধার দিয়ে এ পর্যন্ত ৫২ হাজার তালগাছের চারা রোপণ করেছি। তবে ইচ্ছে ১ লাখ গাছ রোপণ করার। প্রতিদিন মোটরসাইকেলে করে বিভিন্ন সড়কে গিয়ে ১০০টি করে গাছের পরিচর্যা করি। তবে গাছগুলো কিছু দুষ্টু প্রকৃতির লোক উপড়ে ফেলছে। তাই গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারি সহায়তা কামনা করেন এ বৃক্ষপ্রেমী।

স্থানীয় বাসিন্দা আফতাব জানান, তাল গাছ পাগল ডাক্তার দীর্ঘদিন ধরে অনেক গাছ লাগিয়েছেন মানুষের উপকার করার জন্য। তিনি এই গাছগুলো লাগিয়েছেন নিজ খরচে। অনেক সময় তিনি লোক নিয়ে এই চারাগুলো রোপন করেন। তিনি সাধারণত রাতের বেলায় চারা রোপন করেন। কারণ দিনে চারা রোপন করলে কেউ চারাগুলো নিয়ে নিতে পারে বা এই আঁটি খেয়ে ফেলতে পারে, তাই তিনি রাতের বেলায় এই চারা রোপন করেন। সাধারণত রাত বারোটা থেকে তিনটার মধ্যে এই চারা রোপন করেন তিনি।

ঐ একেই গ্রামের আরেক বাসিন্দা ও খোরশেদ আলীর প্রতিবেশি আনোয়ার হোসেন জানান, তাল গাছ রোপণ করা নিয়ে তার পরিবারের মধ্যে অনেক সময় ঝগড়া হয়েছে। তিনি নিজ উদ্যোগে জমি বিক্রয় করেও তালের চারা রোপন করেছেন। এই মহৎ কাজ তিনি করে যাচ্ছেন আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের উপকারের জন্য। এসব তাল গাছের যতেœ সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি আরো উৎসাহ পাবেন। খোরশেদ আলী নিজ উদ্যোগে তালগাছের বীজ রোপন করে এক অনন্য দৃষ্টান্তস্থাপন করেছেন বলে জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক। প্রকৃতির সৌন্দর্য, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তাল গাছের ভূমিকা অনেক। ইউপি কার্যালয় থেকে তাল গাছ রক্ষণাবেক্ষন বিষয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান খোরশেদ আলীর তাল গাছ রোপনকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, খোরশেদ আলীর তাল গাছ লাগানো সামাজিক ভালো কাজের একটি চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমাদের ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন খোরশেদ আলীর তাল গাছ লাগানো কে উৎসাহিত করতে সহযোগীতা করবে।