তফসিল প্রত্যাহারের দাবিতে বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ

বিএনপি ও সমমনা ৩৬ দলের ৫ম দফা অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও গণপরিবহন শুন্য রংপুর অঞ্চলের সড়ক মহাসড়ক ও এবং আন্ত: জেলা ও উপজেলা সড়কগুলো। তবে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায় নি। স্বাভাবিক আছে ট্রেন চলাচল। এদিকে তফশিলকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল করেছে আওয়ামীলীগ । আর প্রত্যাহার চেয়ে বিক্ষোভ করেছে বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন। মিছিল থেকে বাসদের জেলা সমন্বয়ককে আটক করা হলেও পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর)বিকেলে নগরীর সিটি বাজারের সামন থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিন করে ইসলামী আন্দোলনের রংপুর জেলা ও মহানগর নেতাকর্মীরা।এসময় তারা দফা এক দাবি এক শেখ হাসিনার পদত্যাগ; ভোট চোর, ভোট চোর, শেখ হাসিনা ভোট চোর; অবৈধ তফসিল মানি না বলে শ্লোগান দেয়। পরে সিটি ভবনের সামনে সমাবেশ থেকে দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেন নেতারা।

এদিকে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক শহিদুল ইসলাম মিজুর নেতৃত্বে বেলা ৩ টায় বিক্ষোভ করে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা। এসময় তারা তফশিল প্রত্যাহার এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
অন্যদিকে একই দাবিতে দুপুরে নগরীর বদরগঞ্জ সড়কে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে মহানগর জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীরা। তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণা দেন।
এদিকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের মিছিল থেকে বাসদের জেলা সমন্বয়ক আব্দুল কুদ্দুসকে আটক করলেও পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

আনন্দ মিছিল:দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষনা জরায় রংপুর মহানগরীতে আনন্দ মিছিল করেছে মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানা আওয়ামীলীগ। বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর শাপলা চত্তর থেকে মিছিলি শুরু হয়ে গ্র্ন্ডা হোটেল মোড়, জীবনবীমা মোড়, প্রেসক্লাব, জাহাজ কোম্পানি মোড়, পায়রা চত্তর, সুপার মাকেট মোড় হয়ে টাউন হল মাঠে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নেতৃবৃন্দ। এসময় তারা বলেন, ধারাবাহিকতা রক্ষায় দেশের মানুষ ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে। এ পর্যন্ত মাঠে থাকবে নেতাকমীরা।

এর আগে বুধবার(১৫ নভেম্বর)সন্ধায় তফসিল ঘোষণার সাথে সাথেই রংপুর মহানগরীতে মিছিল বের করে জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

নগরীর বেতপট্টি থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে সুপারমার্কেট সিটি কর্পোরেশনের সামন, টাউন হল, পায়রা চত্বর জাহাজ কোম্পানি মোর প্রেসক্লাব হয়ে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। এতে নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক এমপি হোসনে আরা লুতফা ডালিয়াসহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। আওয়ামী লীগ ছাড়াও এতে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ মহিলালীগ সহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শত শত নেতাকর্মী অংশ নেন।এ সময় তারা তফসিল কে স্বাগত জানান এবং নৌকা নৌকা বলে স্লোগান দেন।

গণপরিবহন শূণ্য সড়ক-মহাসড়ক: রংপুর মহানগরীর কামারপাড়া ঢাকা কোচ স্ট্যান্ড, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ বিভাগের বাস টার্মিনালগুলোতে থেকে কোন বাস ছেড়ে যায় নি। অবরোধের আওতামূক্ত থাকা পরিবহন ছাড়া কোন পন্য পরিবহনও চলাচল করছে না বিভাগের সড়ক মহাসড়কগুলোতে।শুধু দুরপাল্লাই নয়, জেলা ও আন্ত: জেলা বাস মিনিবাসও চলছে না।

এতে দূর্ভোগে পড়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। মোটর মালিক সমিতি নির্দেশনা দিলেও নাশকতার আশংকা ছাড়াও যাত্রী না থাকায় এসব পরিবহন বন্ধ আছে বলে জানিয়েছেন চালক শ্রমিকরা। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় লেগুনা অটো এবং সিএনজির ওপর ভর করে অফিসসহ জরুরী কাজ সারছেন সাধারণ মানুষ। তবে ট্রেন যোগাযোগ স্বাভাবিক আছে। রংপুর রেলওয়ে স্টেশন সূত্র জানিয়েছে, সকাল থেকেই নির্ধারিত সিডিউলে ট্রেন চলাচল করেছে। এদিকে র‌্যাব-১৩ এসকর্ট দিয়ে সিলেট থেকে আসা ১০ টি তেলের লড়ি রংপুরে পৌছে দিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন অধিনায়ক কমান্ডার আরাফাত রহমান।

রংপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ডিএসবি ও মিডিয়া) ইফতে খায়ের আলম জানান, পুরো জেলার রাস্তাঘাট এবং গুরুত্বপুর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। যেখানেই নাশকতা তৈরির চেস্টা করা হবে, সেখানেই শক্তভাবে তা মোকাবেলা করা হবে।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন জানিয়েছেন, পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে মাঠে কাজ করছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে নি। কেউ অরাজকতা এবং গণপরিবহন যাত্রায় বাঁধা দিতে চাইলে তা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা হবে।

মেট্রোপলিটন পুলিশ ও রেঞ্জ পূলিশ সূত্র জানিয়েছে মহানগর এলাকা ছাড়াও রেঞ্জের আট জেলার সড়ক, মহাসড়কে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থানে সবেরর্চ্চে সতর্কতা পাহারা বসিয়েছে আইনশৃঙখলা বাহিনী।বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। কেউ কোন অঘটন ঘটাতে চাইলে তা মোকাবেলা করবে পুলিশ।এছাড়াও কোন গণপরিবহন রাস্তায় নামতে চাইলে তা স্কট করে পৌছানোর জন্যও পুলিশ তৈরি রয়েছে।