দুদক হটলাইনে কড়া নেড়েছে লাখের বেশি অভিযোগ

দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য জানাতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ১০৬ হটলাইনে এ পর্যন্ত এক লাখের বেশি ফোন কল এসেছে। এর মধ্য থেকে প্রায় ৩০০ অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর অনুসন্ধানযোগ্য অভিযোগগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত ২৭ জুলাই দুদকের এই হটলাইন চালু হয়। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ১০ কর্মদিবসে হটলাইনে ফোন কলের সংখ্যা ১ লাখ ১২ হাজারে পৌঁছায়। দুদক সূত্র জানিয়েছে, যেকোনো নম্বর থেকে এই হটলাইনে বিনা মূল্যে সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কল করা যায়। একাধিক ব্যক্তি একই সঙ্গে অভিযোগ জানাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হয়। অভিযোগকারী চাইলে তাঁর বক্তব্য রেকর্ড করা হয়।

প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজারের মতো ফোন এসেছে এই হটলাইনে। তবে সংস্থাটির তথ্যমতে, হটলাইনে ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিযোগ জানাতে কল বেশি এসেছে। এর মধ্যে দুদকের আওতাবহির্ভূত অভিযোগের সংখ্যাই বেশি। এসব ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর বক্তব্য শুনে তাঁকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। ক্ষেত্রবিশেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ওই প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির অভিযোগটি জানিয়ে দেয় দুদক।

দুদক কর্তৃপক্ষ মনে করছে, হটলাইনের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে তাদের প্রত্যক্ষ সংযোগ স্থাপিত হবে। দ্রুত দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে। দুর্নীতির ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে অথবা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে—এমন অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক প্রতিকার বা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। দুর্নীতির ঘটনা ঘটার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি এবং কমিশনের প্রতি জন–আস্থা সৃষ্টি হবে।

একে জনগণের সঙ্গে দুদকের সেতুবন্ধ হিসেবে মনে করছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমাজে যে দুর্নীতি চলছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। দুদকের আওতাবহির্ভূত কল এলেও আমরা অভিযোগকারীকে সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দিয়ে থাকি। এতে করে ওই সব প্রতিষ্ঠানকেও সতর্ক করে দেওয়া যায়।’

দুদকের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হটলাইনে তথ্য পেলেই সেটিকে অভিযোগ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। অভিযোগের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলেই অনুসন্ধান চালাবে না দুদক। অভিযোগ কেন্দ্র থেকে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর সেগুলো দুদকের সেলে পাঠানো হয়। সেখানে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, অভিযোগটি অনুসন্ধানযোগ্য কি না। কোনো অভিযোগ অনুসন্ধানযোগ্য হলে ১৫ দিনের মধ্যে অভিযান শুরু করা হয়। তাৎক্ষণিক কোনো দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে সে ব্যাপারে সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালানো হয়। এ জন্য একজন পরিচালকের নেতৃত্বে দুদকের পৃথক তিনটি দল সর্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। এসব দলের সঙ্গে সহায়ক হিসেবে পুলিশ সদস্যরা যুক্ত থাকেন।

দুদক জানিয়েছে, ভূমি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ, কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা), পল্লী বিদ্যুৎ, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, মাদকদ্রব্য, নারী নির্যাতন, পাসপোর্ট অফিস, রেলওয়ে, ঘুষ লেনদেন, মোবাইল ফোনে অতিরিক্ত টাকা কেটে নেওয়া, হাসপাতালে চিকিৎসকদের অবহেলা ও অনুপস্থিতি, নির্বাচন কমিশন, শিক্ষা ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগগুলো তালিকাভুক্ত করা হয়।