দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী : অর্থমন্ত্রী

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বর্তমানে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী। ২০২০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ২৬ হাজার মেগাওয়াট। আগে আমরা ঠিক করেছিলাম ২০২৪ সালে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবো। কিন্তু এখন ২০২০ সালেই ২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে যাচ্ছে। এসময় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতের মোট ২২ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখেন তিনি—যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৪ হাজার ৪২ কোটি টাকা বেশি।

গত অর্থবছরে এই খাতের বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটের এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২২ হাজার ৮২০ কোটি টাকা।

আজ জাতীয় সংসদে বিদ্যুৎখাতে এই বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী। সরকারের ৯ বছরের চেষ্টায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ২৭টি থেকে ১১৮টি উন্নীত করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা তিন গুণ বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩৫৩ মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে ১০ হাজার ৯৫৮ মেগাওয়াট।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ২৬ হাজার মেগাওয়াট। আগে আমরা ঠিক করেছিলাম ২০২৪ সালে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবো। কিন্তু এখন ২০২০ সালেই ২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে যাচ্ছে।গত ৯ বছরে ২ হাজার ৬২২ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন এবং এক লাখ ৭৪ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সিস্টেম লস ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ১১ শতাংশে নেমে এসেছে।

ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হবে। উৎপাদন ক্ষমতা যথাক্রমে ২০৩১ সালে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২৯৪১ সালে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হবে। উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে বর্তমানে ১৫ হাজার ২০৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৫৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া ৪ হাজার ৪৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। ভবিষ্যতে আরও ২২ হাজার ৫২ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ২০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা আছে সরকারের।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে তিনি বলেন, রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট, মাতারবাড়িতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট, পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ করছে। এছাড়া মহেশখালীতে ১০ হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ব্যক্তি মালিকানাধীন খাত দেশি ও বিদেশি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে বনায়নসহ ঠাণ্ডা পানির সরবরাহ ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণীয় বর্জ্য নিঃসরণ ও নিয়ন্ত্রণে সর্বাধুনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়ে তিনি বলেন, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রথম পর্যায়ের কাজ চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ শেষ হবে।

উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতায় বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভেড়ামারা-বহরমপুর লাইন এবং উপকেন্দ্রের ক্ষমতা বাড়ানোর হচ্ছে। ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে ত্রিদেশীয় সমঝোতা চুক্তি সই চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এছাড়া নেপাল, মিয়ানমার ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে আলোচনা চলছে।