দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন রংপুরের ছয় আসনে আ.লীগের প্রার্থী হতে চান ৩৬ জন

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর জেলার ছয়টি আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চান ৩৬ জন প্রার্থী। এই তালিকায় এমপি, মন্ত্রী, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, আইনজীবী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয়, জেলা ও মহানগরের নেতারা রয়েছেন।

লালদিঘীর বধূ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রার্থী হিসেবে রংপুর-৬ আসনে দেখতে চান পীরগঞ্জবাসী। এই আসনে তার পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক একেএম ছায়াদত হোসেন বকুলসহ দলীয় নেতাকর্মীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। দলটির স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষজন চাইছেন, পীরগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই প্রার্থী হোক।

এদিকে রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (১৮ নভেম্বর) থেকে গতকাল মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) পর্যন্ত চার দিনে রংপুরের ছয় আসনে ৩৬ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

এর মধ্যে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া ও আংশিক সিটি কর্পোরেশন) আসনে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, গঙ্গাচড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন, গঙ্গাচড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবলু, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য কামাল মোহাম্মদ নাসের রুবেল।

আওয়ামী লীগের গঙ্গাচড়া উপজেলার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাইয়েদুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী, আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবিউল ইসলাম রেজভী, যুক্তরাজ্যের লাইম হাউস আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ইউনিভার্সিটি ওয়েস্ট অফ ইংল্যান্ড শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মঞ্জুম আলী, গঙ্গাচড়া উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক সিএম সাদিক। বর্তমানে এই আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত মহাসচিব ও সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা।

রংপুর-২ (বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল কালাম আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ সরকার বিটু, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সুমনা আকতার লিলি, তারাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান লিটন, কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাফিউর রহমান রাফি।

রংপুর-৩ (সদর ও সিটি কর্পোরেশন) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নাছিমা জামান ববি, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আতাউর জামান বাবু, রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম রব্বানী বিপ্লব, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য নবীউল্লাহ পান্না ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক রোজী রহমান। এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এরশাদপুত্র রাহগির আলমাহি সাদ।

রংপুর-৪ (কাউনিয়া ও পীরগাছা) আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মাজেদ আলী বাবুল, কাউনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়া, বিশিষ্ট আইনজীবী রফিক হাসনাইন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনোয়ারুল ইসলাম মাসুদ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন।

রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান এবার নির্বাচন করবেন না বলে আগাম জানিয়েছেন। তার ছেলে মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেক রহমান এই আসনে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ইতোমধ্যে তিনি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকার এবং জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোতাহার হোসেন মন্ডল মওলা।

রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনটি জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন। কারণ এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এবারও মনোনয়ন দৌড়ে তার নাম অনেকটাই চূড়ান্ত হয়েছে। যদিও এই আসন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শাহাদত হোসেন বকুল। এছাড়া মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও শিল্পপতি সিরাজুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মন্ডল।

এদিকে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর রংপুরে আগের সেই জৌলুস নেই দলটির। সাংগঠনিকভাবেও অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে এরশাদহীন জাতীয় পার্টি। ভোটের রাজনীতিতে জোট-মহাজোটের সমীকরণে দিন দিন সংকীর্ণ হয়ে আসা জাতীয় পার্টির এখন আগের মতো জনপ্রিয়তা নেই। এ কারণে জেলার ছয়টি আসনের চারটি এখন সরকারি দলের দখলে। এবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগত সমঝোতা না হলে জাতীয় পার্টি ছয়টি আসনেই তাদের নিজ প্রার্থী দিবেন বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর, বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ৬-১৫ ডিসেম্বর এবং ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।